ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপার লড়াইয়ে ফাইনালে মুখোমুখি রেকর্ড ১৪ বারের চ্যাম্পিয়ন রিয়াল মাদ্রিদ ও একবারের চ্যাম্পিয়ন বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।          ছবি: সংগৃহীত 

ক্লাব ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগীতা উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে আজ (শনিবার) মুখোমুখি হচ্ছে জার্মান ক্লাব বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ও স্প্যানিশ সুপার জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ। বাংলাদেশ সময় আজ (শনিবার) রাত ১ টায় লন্ডনের ঐতিহাসিক ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে মাঠে নামবে এই দুই দল।

স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ রেকর্ড ১৪ বার ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতলেও বরুশিয়া ডর্টমুন্ড ২৭ বছর আগে মাত্র একবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

বুন্দেসলিগায় ৫ম স্থানে থেকে সুবিধা না করতে পারা ডর্টমুন্ড চ্যাম্পিয়ন্স লিগের এবারের আসরে এফ-গ্রুপ থেকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলতে পিএসভি কে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে আসে।পরে কোয়ার্টার ফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ও সেমিফাইনালে পিএসজি কে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় বরুশিয়া ডর্টমুন্ড।

অপরদিকে লা লিগার শিরোপা জয়ী স্প্যানিশ জায়ান্ট রিয়াল মাদ্রিদ এবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আসরে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলতে আরেক জার্মান ক্লাব লিপজিগ কে পরাজিত করে কোয়ার্টার ফাইনালে আসে। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ম্যানসিটি ও সেমিফাইনালে জার্মান জায়ান্ট বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে নেয় রিয়াল।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৯৮১ সালের পর থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে কখনো হারেনি রিয়াল মাদ্রিদ।অন্যদিকে ২০১৩ সালে সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে উঠা ডর্টমুন্ড এই ওয়েম্বলির মাঠে হেরেছিল আরেক জার্মান ক্লাব বায়ার্নের কাছে।

দুই দলের কাছেই এই ফাইনালে তৈরি হবে আবেগঘন কিছু মুহূর্ত। সদ্য অবসরের ঘোষনা দেয়া টনি ক্রুসের রিয়ালের হয়ে এটাই শেষ ম্যাচ।তাই সতীর্থরা শিরোপা উপহার দিয়ে বিদায়টা জানাতে চাই ক্রুসকে। আর এদিকে ডর্টমুন্ডে বেড়ে ওঠা ও ক্লাবের প্রতি আবেগঘন ভালবাসার কারনে মার্কো রেউস কখনো অন্য ক্লাবে যাননি।ক্লাব পর্যায়ে প্রায় সব শিরোপা জিতলেও  চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা তার জন্য অধরায় রয়ে গেল।বয়সের কারনে ক্লাবে কতদিন খেলে যাবে সেটাও রয়েছে প্রশ্ন।তাই সতীর্থরা চাইবে ডর্টমুন্ডের এই আইকনিক প্লেয়ারকে অধরা শিরোপা উপহার দিতে।

রিয়াল ও ডর্টমুন্ড এপর্যন্ত ১৪ বার একে অপরের মুখোমুখি হয় যেখানে রিয়ালের জয় ৬টি ও ডর্টমুন্ডের জয় ৩টি, আর বাকী ৫টি ম্যাচ ড্র হয়।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে দুদলের প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল। সেমিফাইনালের সেই ম্যাচে বার্নাব্যুতে প্রথম লেগে ২-০তে জয় পেয়েছিল রিয়াল। ফিরতি লেগে ড্র করে আসরে জার্মান ক্লাবটিকে বিদায় করে স্প্যানিশ দলটি।

২০০২-০৩ মৌসুমে গ্রুপপর্বে মুখোমুখি হয়েছিল তারা, মাদ্রিদে স্বাগতিকদের কাছে ২-১এ হার এবং ডর্টমুন্ডে ১-১ গোলে শেষ হয়েছিল লড়াই। ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল রিয়াল। সেবার চ্যাম্পিয়নও হয়েছিল রিয়াল।

২০১২-১৩ মৌসুমে গ্রুপপর্বের পর সেমিফাইনালেও দেখা হয়েছিল রিয়াল-বরুশিয়ার। গ্রুপপর্বে জার্মানিতে স্বাগতিকদের কাছে ২-১এ হার ও স্পেনে ২-২ গোলে ড্র করার পর আবার সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় দুদল। এবার অবশ্য ঘরের মাঠে ২-০ তে রিয়াল জিতলেও ডর্টমুন্ডে গিয়ে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত হয়। ২০১৩-১৪ মৌসুমের কোয়ার্টার ফাইনালে আগের মৌসুমে হারের শোধ নেয় রিয়াল।

২০১৬-১৭ মৌসুমে দুদল ২-২ গোলে ড্র করেছিল এবং ২০১৭-১৮ মৌসুমে লস ব্লাঙ্কোসদের ব্যাক-টু-ব্যাক জয়, ডর্টমুন্ডে ৩-১ এবং বার্নাব্যুতে ৩-২ গোলে জিতেছিল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো-লুকা মদ্রিচদের দল।

রিয়ালের কোচ মাস্টার মাইন্ড আনচেলওির রয়েছে দুর্দান্ত ট্যাকটিকস ও শেষ দিকে ম্যাচ বের করে আনার সুদক্ষ কৌশল।কেননা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে কোচ হিসেবে ১১৪ ম্যাচ জিতে শীর্ষে রয়েছে এই মাস্টার মাইন্ড। অন্যদিকে কোচ হিসেবে ডর্টমুন্ডের এডিন টেরজিচের এটাই প্রথম ফাইনাল।যে ডর্টমুন্ডকে ফাইনালিস্ট হিসেবে কেউ বিবেচনা করেনি। কোচের দক্ষ কৌশল আর খেলোয়াড়দের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ডর্টমুন্ডকে ফাইনালে এনেছে।

গুরুত্বপূর্ণ এই ফাইনালকে সামনে রেখে মিডফিল্ডার চুযামিনিকে পাচ্ছেনা রিয়াল।অবশ্য চুয়ামেনির ইনজুরি আগেই ধরা পড়েছিল।এছাড়াও কর্তোয়ার পরিবর্তে দলে সুযোগ পেয়ে এবারের মৌসুমে দুর্দান্ত সব সেভ করা গোলকিপার লুনিন ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হওয়ায় থাকছেনা ফাইনালে। তার পরিবর্তে রিয়ালের গোলবার সামলাবে কর্তোয়া। অপরদিকে ডর্টমুন্ডে তেমন বড় কোন ইনজুরি নেই।

ইতিহাস,পরিসংখ্যান ও ফেবারিটের তকমা রিয়ালের পক্ষে থাকলেও ডর্টমুন্ডের দৃঢ় আত্মবিশ্বাস চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে জমজমাট ম্যাচের অপেক্ষায় থাকবে ফুটবলপ্রেমীরা।