কালোজিরার উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ

- আপডেট: ১২:২০:৪৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
- / 16
কালোজিরা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে -ছবি: সংগৃহীত
কালোজিরা নিয়ে কিছু বিভিন্ন পুষ্টিবিদরা অনেক উপকারিতা ও পুষ্টিগুণের কথা বলেছেন। তেমনি ধর্মীয় দিক থেকে অর্থাৎ ইসলামে একে মৃত্যু ব্যতীত সকল রোগের ঔষধ বলা হয়েছে।
কালোজিরা খেলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করে, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে, ত্বকের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি পায় এবং আর্থ্রাইটিস ও পেশীর ব্যথা কমায়। কালোজিরা কৃমি দূর করতে, পেটে ব্যথাসহ নানা রোগ ও গ্যাস দূর করতেও সাহায্য করে। তাই এই নিয়মিত ও যথাযথ ব্যবহার দৈনন্দিন জীবনে বাড়তি শক্তি প্রদান করে।
কালোজিরা খেলে পেটফাঁপা, ফুসকুড়ি, অ্যালার্জি, এজমা, একজিমা, হাঁপানি বা শ্বাসকষ্ট, ডাইরিয়া, আমাশয়, আলসার, জন্ডিসসহ নানা রোগের বিশেষ ওষুধ হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও অতিরিক্ত মেদ সমস্যা, স্ট্রোক, স্থুলতা, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, স্থুলতা নিরাময় করতে অনেক ভালো কাজ করে। গায়ের ব্যথা দূর করতে ও ক্যান্সার প্রতিরোধেও কালোজিরার বেশ সুনাম রয়েছে। কালোজিরার তেল খেলে হাইপারটেনশন, নিম্ন রক্তচাপ বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমে যায়।
কালোজিরা আকারে ছোট হলেও স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব অনেক বেশি। জয়েন্টের ব্যথা উপশম, উন্নত হজম থেকে শুরু করে উন্নত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পর্যন্ত বিভিন্ন উপকারিতা পাওয়া যায় কালোজিরা খেলে। এটি আপনাকে সুস্থ রাখতে নানাভাবে কাজ করে। প্রতিদিনের খাবারে কালোজিরা যোগ করলে পাবেন বেশ কিছু উপকার।
খালি পেটে প্রতিদিন এক চিমটি পরিমাণ কালোজিরা এক গ্লাস পানির সাথে সকালবেলা খাওয়া উচিত। গরম ভাতের সাথে কালোজিরার ভর্তা ও রং চার সাথে শুকনো কালোজিরা মিশিয়ে দিনে ২ বার খেলে ভালো উপকার পাবেন। ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
এই কালোজিরা পুরুষ-নারী উভয়ের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন যৌন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আপনারা যারা প্রতিদিন কালোজিরা খেয়ে থাকেন, তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে খাওয়া উচিত। মাত্রাতিরিক্ত বা পরিমাণের বেশি খেলে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এবং নানা ধরনের সমস্যা দেখা যায়।
কালোজিরা খাওয়ার পরিমাণ শরীরের হজমশক্তির উপর নির্ভর করে থাকে। যদি হজমশক্তি বেশি থাকে, তবে দুই চামচ খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু হজমশক্তি কম থাকলে দৈনিক এক চামচের বেশি কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না। যদি কেউ প্রথম প্রথম খাওয়া শুরু করে তাহলে কম করে খাওয়াই ভালো। ফলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যাবে।
হজমশক্তি ও কোলেস্টেরল বাড়াতে সকাল বেলা খালি পেটে এক কাপ দুধের সাথে এক চা চামচ কালোজিরার তেল মিশিয়ে প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার খাওয়া উচিত। এছাড়া, এক চামচ কালোজিরা তেলের সাথে এক চা চামচ খাঁটি মধুর সাথে মিশিয়ে দিনে প্রায় ১ থেকে ৩ বার খেতে পারলে ভালো হয়। ঠিক এভাবে নিয়ম করে খেতে থাকলে এক-দুই সপ্তাহের মধ্যেই গ্যাসের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কিন্তু যদি আপনার ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকে তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে খেতে হবে। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো সম্পর্কে :
১. জয়েন্টের ব্যথা এবং প্রদাহ কমায় : কালোজিরার প্রদাহ কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। যারা দীর্ঘস্থায়ী জয়েন্টের ব্যথা বা আর্থ্রাইটিসে ভুগছেন তাদের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর। যদি আপনার প্রচুর প্রদাহ হয়, তাহলে প্রতিদিন কালোজিরা খাওয়া শুরু করুন। কালোজিরায় থাকা প্রদাহ-বিরোধী যৌগগুলো জয়েন্টের ফোলাভাব এবং অস্বস্তি কমাতে সাহায্য করে, যা ধীরে ধীরে ব্যথানাশক বা প্রদাহ-বিরোধী ওষুধের ওপর নির্ভরতা কমায়।
২. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে : কালোজিরা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কাজ করে। এতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এটি শরীরকে সাধারণ সংক্রমণ এবং দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কালোজিরা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
৩. অন্ত্রের জন্য সহায়ক : অন্ত্রের স্বাস্থ্যকে সামগ্রিক সুস্থতার ভিত্তি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। কালোজিরা এক্ষেত্রেও সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এটি হজম নিয়ন্ত্রণ করতে, ফোলাভাব কমাতে এবং অন্ত্রের মাইক্রোবায়োমকে সুষম করতে সাহায্য করে। এর প্রদাহ-বিরোধী প্রকৃতি পরিপাকতন্ত্রকে শান্ত করতে সাহায্য করে, যা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (IBS) এ আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
৪. ত্বকের জন্য ভালো : কালোজিরা একজিমা এবং সোরিয়াসিসের মতো ত্বকের সমস্যার জন্য উপশম করতে পারে। যেহেতু এই সমস্যাগুলো প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই খাদ্যতালিকায় কালোজিরা নিয়মিত যোগ করলে প্রদাহ কমবে। এবং ধীরে ধীরে ত্বকের উন্নতি করবে।