নির্বাচনের সুস্পষ্ট টাইমলাইন না থাকায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে : জামায়াত

- আপডেট: ১২:৫৬:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / 15
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী -ছবি : সংগৃহীত
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন একেবারেই সঠিক ও সুষ্ঠু হবে এরকম পরিস্থিতি দেখার কোনো অবকাশ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের।
রোববার (১৮ মে) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপের শুরুতে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি বিভিন্ন স্থানে সংঘাত প্রসঙ্গে ডা. তাহের বলেন, নির্বাচনের সুস্পষ্ট টাইমলাইন না থাকায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। পাবনায় জামায়াতের নেতা কর্মীদের মারধর করা হয়েছে। এখনো নির্বাচন ঘোষণা করা হয়নি, তার আগেই জায়গা দখল এলাকা দখল চলছে। তাই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে সরকারের আরো কঠোর হওয়াসহ যা যা করা দরকার করা উচিত। সংস্কার শেষে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিতে হবে।
ডা. তাহের আরও বলেন, নির্বাচন কমিশনের কিছু ভূমিকা আরও প্রশ্নবিদ্ধ মনে হচ্ছে। সরকার যেন সেদিকে খেয়াল রাখে। নির্বাচনের আগেই লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ঠিক করতে হবে।
তিনি বলেন, বেশি সময় না নিয়ে সংস্কারের বিষয়ে একটা ঐকমত্যে পৌঁছানো উচিত।
সংস্কার বিষয়ে তৃতীয় বারের মতো ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে জামায়াত। ডা. তাহেরের নেতৃত্বে জামায়াত প্রতিনিধি দলে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বুলবুল প্রমুখ। বৈঠকের শুরুতে কমিশনের পক্ষ থেকে আলী রিয়াজ বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্য সদস্যরা উপস্থিত আছেন।
সংস্কার প্রশ্নে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে পাঁচটি সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন। এর অংশ হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল জামায়াতের সঙ্গে কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়। তবে ওই দিন সব সুপারিশ নিয়ে দলটির সঙ্গে আলোচনা শেষ হয়নি।
২৬ এপ্রিল মূলত সংবিধান সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলো নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা হয়েছিল। দলটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ করার প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হয়েছিল। তবে তারা সংসদের উচ্চ ও নিম্ন-উভয় কক্ষেই আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়। জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) গঠনের প্রস্তাবেও নীতিগতভাবে একমত হয়েছিল দলটি। এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এ প্রস্তাবের সঙ্গেও একমত জামায়াতে ইসলামী।
এর আগে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় বিএনপি সংস্কার প্রশ্নে দলীয় অবস্থান তুলে ধরেছিল। নির্বাচনপদ্ধতি, এনসিসি গঠন ও এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ কতবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন এই তিন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একসময়ের জোটসঙ্গী বিএনপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানে ভিন্নতা দেখা গেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য গত বছরের অক্টোবরে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, বিচার বিভাগ ও জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬টি সুপারিশ নিয়ে ঐকমত্য তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে ঐকমত্য কমিশন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে লিখিত মতামত নেওয়ার পর ২০ মার্চ থেকে দলগুলোর সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করছে।
সংস্কার প্রশ্নে ৩৯টি দলের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এ দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তাদের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করা হচ্ছে। বিএনপি, জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বেশির ভাগ দলের সঙ্গে প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সূত্র জানায়, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা শেষের দিকে। শিগগিরই দলগুলোর সঙ্গে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শুরু হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ‘জুলাই সনদ’ তৈরি করবে অন্তর্বর্তী সরকার।