১১:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫

মেদবহুল শরীরের ওজন কমাতে খেতে পারেন কফি

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ০২:১০:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / 23

যারা দিনরাত বেহিসাবি চা-কফি খান তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে -ছবি : ফাইল ফটো

অনেকেই সারাদিন চাঙা থাকতে দিনের শুরু করতে চান এক মগ কফিতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের মাঝামাঝি যে কোনো সময় কফি পান করার জন্য আদর্শ। কফি যেমন ঝিমিয়ে পড়া মেজাজ চাঙ্গা করতে পারে তেমনই মেদবহুল শরীরের ওজন কমিয়ে চেহারায় একটা ছিমছাম ভাবও আনতে পারে কফি। এমনই বলছে বিজ্ঞান। বহু গবেষণাতেই দেখা গেছে, নিয়মিত কফি খেয়ে ওজন কমেছে। কিন্তু ব্যাপারটি কি সবার ক্ষেত্রেই সমান? ধরুন আপনার ওজন ৮০ কেজি। আপনি প্রতিদিন কফি খেতে শুরু করলেন। তা হলেই কি দিন ১৫ পরে আপনার ওজন নিদেন পক্ষে ৫ কেজি কমবে? কমবে কি না তার পুরোটাই নির্ভর করবে কিভাবে কফি খাওয়া হচ্ছে তার উপর।

গবেষণা বলছে, কম থেকে পরিমিত (৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত) ক্যাফেইন বেশির ভাগ ব্যক্তির দেহ কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এর চেয়ে বেশি ক্যাফেইন আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। তবে কারও কারও শরীরিক গঠন আবার এমন যে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি ক্যাফেইন গ্রহণের পরও তার তেমন অসুবিধা হয় না। এটা অনেকটা ব্যক্তির জিনের সঙ্গে হজমক্ষমতার বোঝপড়ার বিষয়।

যাদের দেহে একদমই ক্যাফেইন সহ্য হয় না বা যারা দিনরাত বেহিসাবি চা-কফি খান তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কফি কিভাবে খাবেন সে উত্তর জানতে হলে আগে জানতে হবে কফি কিভাবে ওজন কমাতে পারে।

১। মেটাবলিজম বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে কফি : শরীরের মেদ ঝরাতে হলে বিপাকের হার বেশি হওয়া জরুরি। কফি বিপাকের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো উদ্দীপক এ কাজে এতটাই সিদ্ধহস্ত যে, বাজারচলতি ওজন কমানোর ওষুধেও তা ব্যবহার করা হয়। ক্যাফিনে যেমন বিপাকের হার বাড়ে তেমনই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাবার থেকে শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

২। মেদ ভাঙতে সাহায্য করে : শরীরের ফ্যাট সেল জমা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে কফি। পাশাপাশি ফ্যাট টিস্যু থেকে ফ্যাটি অ্যাসিডও বের করে আনতে পারে কফিতে থাকা ক্যাফিন।

৩। খিদে কমায় : কফি খেলে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য খিদের বোধ চলে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া থেকে শরীরে মেদ জমার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।

অর্থাৎ কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু কফি খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করলে কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।

১। চিনি বিয়োগ, লেবু যোগ : ওজন ঝরানোর জন্য কফি খেলে সব সময়েই চিনি ছাড়া কালো কফি খান। দরকার হলে তাতে লেবুর রস যোগ করতে পারেন। তাতে বিপাকের হার আরও বাড়বে। মেদ ঝরবে দ্রুত।

২। কফিতে ডার্ক চকোলেট : বাজার চলতি যেকোনও ডার্ক চকোলেট নয় খাঁটি ডার্ক চকোলেট কফিতে মিশিয়ে খেলে কফির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের পরিমাণ বাড়ে। যা ওজন কমাতে সহায়ক।

৩। কখন খাবেন : শরীরচর্চার আগে কফি খেলে তা দ্রুত মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে। কিছু গবেষণা এমনও বলছে যে খাওয়ার আগে কফি খেলেও শরীরে ক্যালোরি কম যায়।

৪। অভ্যাসে প্রভাব নষ্ট : কফি খেয়ে মেদ ঝরানো কখনওই ওজন কমানোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তার কারণ কফি খাওয়ার অভ্যাস এক বার তৈরি হলে তা আর ওজন কমানোর কাজ আগের মতো করে না। কফির প্রভাব শরীর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তাই কফির অভ্যাস যদি তৈরি করতে না চান তবে দু’সপ্তাহ টানা কফি খাওয়ার পরে দু’সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। তারপরে আবার দু’সপ্তাহ কফি খান।

৫। স্থূল ব্যক্তির শরীরে প্রভাব কম : গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা খুব বেশি মোটা নন কফি খেয়ে তাদের ওজন ঝরেছে দ্রুত। তুলনায় যাদের অতিরিক্ত স্থূলত্বের সমস্যা রয়েছে তাদের উপর কফির প্রভাব কিছুটা কম। প্রথম ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ দ্রুত ওজন ঝরেছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ।

৬। ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে যায় রক্তেই : কফি খেলে ফ্যাট টিস্যু থেকে যে ফ্যাটি অ্যাসিড নির্গত হয়, তা রক্তে থেকে যায়। কফি খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা করলে তবেই ওই ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব এড়ানো সম্ভব।

অতিরিক্ত চা-কফি পান অনেক সময় আসক্তিতে পরিণত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত, অতিরিক্ত ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে অনেকটা কোকেন বা অ্যাম্ফিটামিন ড্রাগের মতো কাজ করে। যদিও মানসিক ও শারীরিক অবস্থাভেদে এই আসক্তি একেকজনের একেক রকম। ক্যাফেইনের আসক্তি মাদকের মতো তীব্র বা জীবননাশী নয় তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইনে আসক্ত মানুষ উদ্ভট কাণ্ড ঘটাতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে খানিকটা ওজন ঝরানোর জন্য কফিকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কারণ ওজন কমানোর জন্য কিছুটা প্রণোদনা দরকার। চেষ্টার ফল চোখে না দেখলে এগিয়ে যাওয়া মুশকিল হয় অনেকের কাছেই। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু কফির উপর ভরসা করা ঠিক নয়। তার সঙ্গে জীবনযাপনের ধরনেও স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা জরুরি।

কম বা সহনীয় মাত্রার ক্যাফেইন মূলত দেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো। তাই আমাদের প্রিয় চা-কফির ক্যাফেইন থেকে উপকারিতা পেতে চাইলে অবশ্যই শারীরিক অবস্থা, ঘুমের সময় বুঝে খেতে হবে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

মেদবহুল শরীরের ওজন কমাতে খেতে পারেন কফি

আপডেট: ০২:১০:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

যারা দিনরাত বেহিসাবি চা-কফি খান তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে -ছবি : ফাইল ফটো

অনেকেই সারাদিন চাঙা থাকতে দিনের শুরু করতে চান এক মগ কফিতে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, দিনের মাঝামাঝি যে কোনো সময় কফি পান করার জন্য আদর্শ। কফি যেমন ঝিমিয়ে পড়া মেজাজ চাঙ্গা করতে পারে তেমনই মেদবহুল শরীরের ওজন কমিয়ে চেহারায় একটা ছিমছাম ভাবও আনতে পারে কফি। এমনই বলছে বিজ্ঞান। বহু গবেষণাতেই দেখা গেছে, নিয়মিত কফি খেয়ে ওজন কমেছে। কিন্তু ব্যাপারটি কি সবার ক্ষেত্রেই সমান? ধরুন আপনার ওজন ৮০ কেজি। আপনি প্রতিদিন কফি খেতে শুরু করলেন। তা হলেই কি দিন ১৫ পরে আপনার ওজন নিদেন পক্ষে ৫ কেজি কমবে? কমবে কি না তার পুরোটাই নির্ভর করবে কিভাবে কফি খাওয়া হচ্ছে তার উপর।

গবেষণা বলছে, কম থেকে পরিমিত (৪০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত) ক্যাফেইন বেশির ভাগ ব্যক্তির দেহ কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। এর চেয়ে বেশি ক্যাফেইন আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। তবে কারও কারও শরীরিক গঠন আবার এমন যে নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে বেশি ক্যাফেইন গ্রহণের পরও তার তেমন অসুবিধা হয় না। এটা অনেকটা ব্যক্তির জিনের সঙ্গে হজমক্ষমতার বোঝপড়ার বিষয়।

যাদের দেহে একদমই ক্যাফেইন সহ্য হয় না বা যারা দিনরাত বেহিসাবি চা-কফি খান তাদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

কফি কিভাবে খাবেন সে উত্তর জানতে হলে আগে জানতে হবে কফি কিভাবে ওজন কমাতে পারে।

১। মেটাবলিজম বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে কফি : শরীরের মেদ ঝরাতে হলে বিপাকের হার বেশি হওয়া জরুরি। কফি বিপাকের হার বাড়িয়ে দিতে পারে। কফিতে থাকা ক্যাফিন এবং ক্লোরোজেনিক অ্যাসিডের মতো উদ্দীপক এ কাজে এতটাই সিদ্ধহস্ত যে, বাজারচলতি ওজন কমানোর ওষুধেও তা ব্যবহার করা হয়। ক্যাফিনে যেমন বিপাকের হার বাড়ে তেমনই ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড খাবার থেকে শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে দেয়।

২। মেদ ভাঙতে সাহায্য করে : শরীরের ফ্যাট সেল জমা চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে কফি। পাশাপাশি ফ্যাট টিস্যু থেকে ফ্যাটি অ্যাসিডও বের করে আনতে পারে কফিতে থাকা ক্যাফিন।

৩। খিদে কমায় : কফি খেলে বেশ কিছু ক্ষণের জন্য খিদের বোধ চলে যায়। ফলে অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়া থেকে শরীরে মেদ জমার সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।

অর্থাৎ কফি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কিন্তু কফি খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টা করলে কয়েকটি বিষয় জানা দরকার।

১। চিনি বিয়োগ, লেবু যোগ : ওজন ঝরানোর জন্য কফি খেলে সব সময়েই চিনি ছাড়া কালো কফি খান। দরকার হলে তাতে লেবুর রস যোগ করতে পারেন। তাতে বিপাকের হার আরও বাড়বে। মেদ ঝরবে দ্রুত।

২। কফিতে ডার্ক চকোলেট : বাজার চলতি যেকোনও ডার্ক চকোলেট নয় খাঁটি ডার্ক চকোলেট কফিতে মিশিয়ে খেলে কফির অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টসের পরিমাণ বাড়ে। যা ওজন কমাতে সহায়ক।

৩। কখন খাবেন : শরীরচর্চার আগে কফি খেলে তা দ্রুত মেদ ঝরাতে সাহায্য করবে। কিছু গবেষণা এমনও বলছে যে খাওয়ার আগে কফি খেলেও শরীরে ক্যালোরি কম যায়।

৪। অভ্যাসে প্রভাব নষ্ট : কফি খেয়ে মেদ ঝরানো কখনওই ওজন কমানোর দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়। তার কারণ কফি খাওয়ার অভ্যাস এক বার তৈরি হলে তা আর ওজন কমানোর কাজ আগের মতো করে না। কফির প্রভাব শরীর ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শুরু করে। তাই কফির অভ্যাস যদি তৈরি করতে না চান তবে দু’সপ্তাহ টানা কফি খাওয়ার পরে দু’সপ্তাহ কফি খাওয়া বন্ধ রাখুন। তারপরে আবার দু’সপ্তাহ কফি খান।

৫। স্থূল ব্যক্তির শরীরে প্রভাব কম : গবেষণায় দেখা গিয়েছে যারা খুব বেশি মোটা নন কফি খেয়ে তাদের ওজন ঝরেছে দ্রুত। তুলনায় যাদের অতিরিক্ত স্থূলত্বের সমস্যা রয়েছে তাদের উপর কফির প্রভাব কিছুটা কম। প্রথম ক্ষেত্রে ২৯ শতাংশ দ্রুত ওজন ঝরেছে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ।

৬। ফ্যাটি অ্যাসিড থেকে যায় রক্তেই : কফি খেলে ফ্যাট টিস্যু থেকে যে ফ্যাটি অ্যাসিড নির্গত হয়, তা রক্তে থেকে যায়। কফি খাওয়ার পাশাপাশি শরীরচর্চা করলে তবেই ওই ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রভাব এড়ানো সম্ভব।

অতিরিক্ত চা-কফি পান অনেক সময় আসক্তিতে পরিণত হয়। গবেষণায় প্রমাণিত, অতিরিক্ত ক্যাফেইন আমাদের মস্তিষ্কে অনেকটা কোকেন বা অ্যাম্ফিটামিন ড্রাগের মতো কাজ করে। যদিও মানসিক ও শারীরিক অবস্থাভেদে এই আসক্তি একেকজনের একেক রকম। ক্যাফেইনের আসক্তি মাদকের মতো তীব্র বা জীবননাশী নয় তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইনে আসক্ত মানুষ উদ্ভট কাণ্ড ঘটাতে পারেন।

প্রাথমিকভাবে খানিকটা ওজন ঝরানোর জন্য কফিকে কাজে লাগানো যেতেই পারে। কারণ ওজন কমানোর জন্য কিছুটা প্রণোদনা দরকার। চেষ্টার ফল চোখে না দেখলে এগিয়ে যাওয়া মুশকিল হয় অনেকের কাছেই। তবে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে শুধু কফির উপর ভরসা করা ঠিক নয়। তার সঙ্গে জীবনযাপনের ধরনেও স্বাস্থ্যকর পরিবর্তন আনা জরুরি।

কম বা সহনীয় মাত্রার ক্যাফেইন মূলত দেহের জন্য সবচেয়ে বেশি ভালো। তাই আমাদের প্রিয় চা-কফির ক্যাফেইন থেকে উপকারিতা পেতে চাইলে অবশ্যই শারীরিক অবস্থা, ঘুমের সময় বুঝে খেতে হবে।

শেয়ার করুন