রাজনীতির মাঠে নেই আ.লীগ : নতুন পরিস্থিতি তৈরি

- আপডেট: ১২:৫৪:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / 18
ফাইল ফটো
দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একটি ভোট ব্যাংক রয়েছে। এখন আগামী নির্বাচনে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে এই ভোটাররা কী করবেন, ভোটকেন্দ্রে যাবেন কি না-সে বিষয়টিও আলোচনায় আসছে। তবে এই নির্বাচনে কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের দলগতভাবে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। নিবন্ধন বাতিল করে আইনগতভাবে সেই সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
যদিও ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে নেই। কারণ এখন সক্রিয় সব দলই তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সরকার বা প্রশাসনের অভিযান আরও বেড়েছে।
ফলে প্রকাশ্যে দলটির পক্ষে কর্মকাণ্ড চালানো বেশ কঠিন। এছাড়া শেখ হাসিনাসহ দলটির নেতাদের বড় অংশ দেশ ছেড়ে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন।
সারাদেশে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী পালিয়ে আছেন এবং অনেকে গ্রেফতার হয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড চালানোর ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার বা প্রশাসনের বাধা, গ্রেফতার অভিযান ও বিচারের মুখোমুখি হওয়ার বিষয়তো রয়েছেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিপর্যস্ত দলটির পতনের পর নয় মাসেও তারা সেভাবে বিতর্কিত নয় এ রকম কোনো নেতাকে দিয়ে দেশের ভেতরে বিকল্প নেতৃত্ব দাঁড় করাতে পারেনি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, কার্যত নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ আগামী নির্বাচন থেকে বাদ পড়েছে। এখন সহসাই রাজনীতিতে ফেরাটা বেশ কঠিন।
মহিউদ্দিন আহমদ বলছেন, সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও জেলে যাওয়া বা হয়রানির যে সব ঘটনা ঘটছে এ ক্ষেত্রে বিএনপির ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের ভেতরে আলোচনা রয়েছে।
সে কারণে আওয়ামী লীগের ভোট বিএনপিকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো দলের পক্ষে যায় কি না এটি বিএনপির জন্য চিন্তার বিষয় হতে পারে। আবার বিএনপির বাক্সেই ওই ভোট যায় কি না জামায়াত ও এনসিপির এই বিপরীত চিন্তা রয়েছে বলে আহমদ মনে করেন।
এছাড়া এই দলগুলো আওয়ামী লীগের ভোট নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করবে তাদের দিক থেকেই এমন ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে বলে বিশ্লেষকেরা বলছেন।
তবে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি ওই ভোটারদের দিকেও নজর রাখছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার আন্দোলনে বিএনপি অংশ নেয়নি তবে এ নিয়ে সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটিকে সমর্থন করেছে তারা।
নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় আওয়ামী লীগ যেহেতু নির্বাচন করতে পারবে না সে প্রেক্ষাপটে বিএনপির রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী একজন কমলো। সেটিই বিএনপির জন্য লাভের বিষয় বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ায় এনসিপি, এবং জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন ও হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামপন্থীদের লাভের অঙ্ক ভারী হয়েছে।
কারণ এসব দল ও সংগঠন গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার শাসনের পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করে আসছিল। এখন তাদের আন্দোলনের মুখে দাবি পূরণ হলো।
এছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব দলের প্রভাব নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে নানা আলোচনা ছিল।
এখন আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ হওয়ায় অন্তর্বর্তী সরকার ও পরিস্থিতির ওপর এনসিপি এবং জামায়াতসহ ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের প্রভাবের বিষয়টা আবার সামনে এসেছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।
তবে এসব দল ও সংগঠনের লাভের খতিয়ানেও তারতম্য আছে বলে বিশ্লেষকদের অনেকে মনে করেন। তাদের মতে, এই আন্দোলন শুরু করেছিল এনসিপি। কিন্তু জামায়াতসহ ইসলামপন্থীদের হাতে এর নিয়ন্ত্রণ চলে গিয়েছিল।
এর প্রমাণ হিসেবে শাহবাগের অবস্থান কর্মসূচিতে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে বাধা দেওয়া এবং যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার হওয়া জামায়াতের নেতা গোলাম আজম ও মতিউর রহমান নিজামীর নামে স্লোগান দেওয়ার ঘটনাগুলোও উল্লেখ করেন বিশ্লেষকেরা।
ওই ঘটনাগুলো এনসিপিকে বিতর্কের মুখে ফেলেছে। যদিও দলটি বিবৃতি দিয়ে এর দায় অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, যারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দায় তাদের।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ লাভ-ক্ষতির হিসাবকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলছেন, সরকারও এখানে বড় অংশীজন।
এর কারণ ব্যাখ্যায় আহমদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যেখানে কিছুদিন আগে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমন এলাকায় পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যে আন্দোলনকারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। সরকারের প্রশ্রয় সেখানে স্পষ্ট হয়েছে।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ থাকতে পারে। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তা করা হলো বা ঘটনাপ্রবাহ যা দৃশ্যমান হয়েছে সেটি সরকারের অবস্থানের বিষয়টি প্রমাণ করে বলে উল্লেখ করেন আহমদ।
তবে সরকারের একজন উপদেষ্টা এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন। তিনি বিবিসির সঙ্গে আলাপে দাবি করেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই রাজনীতিতে নানা সমীকরণ বা মেরুকরণের কথা শোনা যাচ্ছিল। এনসিপি, জামায়াত এবং ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনগুলোরই নানামুখী তৎপরতা বেশি দেখা গেছে। এখন রাজনীতিতে এবং ভোটের মাঠেও আওয়ামী লীগের কোনো সুযোগ না থাকায় সক্রিয় দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে।
এসব দলের পক্ষ থেকে কখনো বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড়াতে আলাদা নির্বাচনি জোট করার চেষ্টা আলোচনায় আসছে। আবার এনসিপিসহ এসব দল বিএনপির সঙ্গেই নির্বাচনে আসন সমঝোতার প্রশ্নে আলোচনা চালাচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। তবে রাজনীতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে- এই প্রশ্নের জবাব দৃশ্যমান হতে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, নির্বাচন লক্ষ্য করে এখন দলগুলোর তৎপরতা বেড়েছে। তবে কে কার সঙ্গে ঐক্য বা জোট করবে তা এখনই বলা মুশকিল।
বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর বক্তব্যও একইরকম। তারা বলছে, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করা হলে সে পর্যায়ে দলগুলোর অবস্থান দৃশ্যমান হবে।
তবে অন্তর্বর্তী সরকার এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন করার কথা বলে আসছে।
কিন্তু সেই সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়া হবে কি না-এ প্রশ্নে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের মধ্যে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে কথা বললে তারা সংস্কার ও নিয়ে অনিশ্চয়তার কথাও বলছেন।
* বিবিসি বাংলা