১১:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৪ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ছোট বাজেট পেশ

ইউএনএ প্রতিবেদক
  • আপডেট: ০৫:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
  • / 3

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-ছবি- সংগৃহীত

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যা আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

সোমবার বিকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার আগের বছরের তুলনায় ছোট বা কম আকারের বাজেট উপস্থাপন হলো এবার।

এর আগে কখনোই আগের অর্থ বছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট পেশ হয়নি দেশের ইতিহাসে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটের বড় একটা অংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট জিডিপির ৯ শতাংশ।

অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, রাজস্ব আয়ের চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে। আর অন্যান্য উৎস থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ৩.৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে মেটানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও হবে এ বাজেটের অন্যতম উদ্দেশ্য।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণসহ মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, করজাল সম্প্রসারণ, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবায় যথাসম্ভব একই হারে ভ্যাট নির্ধারণের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে উল্লেখ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট :

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেট থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ছোট বাজেট পেশ

আপডেট: ০৫:০৭:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫

২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ-ছবি- সংগৃহীত

২০২৫-২৬ অর্থ বছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের বাজেট প্রস্তাব করেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। যা আগের বছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।

সোমবার বিকালে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে এ বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার আগের বছরের তুলনায় ছোট বা কম আকারের বাজেট উপস্থাপন হলো এবার।

এর আগে কখনোই আগের অর্থ বছরের তুলনায় কম আকারের বাজেট পেশ হয়নি দেশের ইতিহাসে।

এদিকে প্রস্তাবিত বাজেটের বড় একটা অংশ আসবে রাজস্ব আয় থেকে। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। যা দেশের মোট জিডিপির ৯ শতাংশ।

অর্থ উপদেষ্টা তার বাজেট বক্তৃতায় জানান, রাজস্ব আয়ের চার লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে। আর অন্যান্য উৎস থেকে আসবে ৬৫ হাজার কোটি টাকা।

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা জিডিপি’র ৩.৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস হতে এবং ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে মেটানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, রাজস্ব আয় ও সরকারি ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে একটা যৌক্তিক ও বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট প্রণয়নও হবে এ বাজেটের অন্যতম উদ্দেশ্য।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কর অব্যাহতি যৌক্তিকীকরণসহ মধ্যমেয়াদে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করতে জনবল বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া, কর অব্যাহতি সুবিধা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা, করজাল সম্প্রসারণ, বিভিন্ন পণ্য ও পরিষেবায় যথাসম্ভব একই হারে ভ্যাট নির্ধারণের বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।

২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট ৫ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ৯ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে ৪ লাখ ৯৯ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

নতুন অর্থবছরের জন্য মোট ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা, যা জিডিপির ১২ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ২০১৫ সালের পর এখন পর্যন্ত কোনো বেতন কাঠামো প্রণীত না হওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধার পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।

আগামী অর্থবছরে সামগ্রিক বাজেট ঘাটতি ও ঋণ সহনীয় পর্যায়ে থাকবে উল্লেখ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা ধরার কথা জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা। যা জিডিপির ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির মধ্যে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এবং এক লাখ এক হাজার কোটি টাকা বৈদেশিক উৎস থেকে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সুদ পরিশোধ বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ২২ হাজার কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট :

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেটে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা মূল বাজেট থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকা হ্রাস করে ৫ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সরকারি ব্যয় ৫৩ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৭ লাখ ৪৪ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪৯ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছিল ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি প্রস্তাব করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

শেয়ার করুন