০১:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

আন্তর্জাতিক চাপ তোয়াক্কা না করেই পারমাণবিক কর্মসূচির পথে ইরান

ইউএনএ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৭:৩৭:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫
  • / 1

প্রতিকী ছবি 

ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের অভ্যন্তরীণ ও সার্বভৌম বিষয়। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছে তেহরান।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং অর্থবহ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইরানের ‘রেড লাইন’, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের মূল নীতিগুলোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগোব। এসব নীতির প্রতি সম্মান না দেখানো হলে কোনো চুক্তি হবে না।

ওমানের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র তিন দফা পরোক্ষ আলোচনা করেছে। তেহরান স্পষ্ট করেছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি সার্বভৌম অধিকার, যেখানে কোনো আপসের সুযোগ নেই।

ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তখত-রাভানচিও দেশটির দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি মজলিসের সামনে বলেন, শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব, এই তিনটি বিষয় আলোচনার বাইরে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলছে, ইরানকে অবিলম্বে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, নতুবা তারা যে কোনো সময় পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটন শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অধিকার ইরানকে দিতে প্রস্তুত বলে আভাস মিলেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট আয়োজিত এক সম্মেলনে বলেন, যে কোনো উপায়ে হোক, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সব পথ বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ইসরায়েল নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে।

ওমানের মাধ্যমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় আংশিক অগ্রগতি হলেও নেতানিয়াহু তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি লিবিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যদি ইরান লিবিয়ার মতো সমস্ত পারমাণবিক ও রাসায়নিক কর্মসূচি বাতিল না করে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি সোমবার (২৮ এপ্রিল) জানান, ইরান তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও সার্বভৌম সিদ্ধান্তের ওপর বাইরের চাপ বরদাশত করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে এর জবাব হবে অত্যন্ত কঠোর।

আরাকি আরও বলেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর ইসরায়েলের অস্বাভাবিক প্রভাব খুবই দৃষ্টিকটু এবং তা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য শুভ লক্ষণ নয়।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল একদিকে যেমন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সামরিক হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কূটনৈতিক সমাধানের পথেই থাকতে চায় বলে জানিয়েছে।

 

সূত্র : ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও প্রেস টিভি

শেয়ার করুন
ট্যাগ :

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

আন্তর্জাতিক চাপ তোয়াক্কা না করেই পারমাণবিক কর্মসূচির পথে ইরান

আপডেট: ০৭:৩৭:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

প্রতিকী ছবি 

ওয়াশিংটনের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনায় ইরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অধিকার তাদের অভ্যন্তরীণ ও সার্বভৌম বিষয়। একইসঙ্গে, যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রত্যাহারের দাবিও তুলেছে তেহরান।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) এক সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাঘাই বলেন, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ এবং অর্থবহ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ইরানের ‘রেড লাইন’, যা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের মূল নীতিগুলোর প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগোব। এসব নীতির প্রতি সম্মান না দেখানো হলে কোনো চুক্তি হবে না।

ওমানের মধ্যস্থতায় সম্প্রতি ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র তিন দফা পরোক্ষ আলোচনা করেছে। তেহরান স্পষ্ট করেছে, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ একটি সার্বভৌম অধিকার, যেখানে কোনো আপসের সুযোগ নেই।

ইরানের রাজনৈতিক বিষয়ক উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তখত-রাভানচিও দেশটির দৃঢ় অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি মজলিসের সামনে বলেন, শূন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ, ইরানের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা এবং আঞ্চলিক প্রভাব, এই তিনটি বিষয় আলোচনার বাইরে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল তীব্র আপত্তি জানিয়ে বলছে, ইরানকে অবিলম্বে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে, নতুবা তারা যে কোনো সময় পারমাণবিক বোমা তৈরির দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে নমনীয় অবস্থান নিয়েছে। ওয়াশিংটন শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পারমাণবিক কর্মসূচি পরিচালনার অধিকার ইরানকে দিতে প্রস্তুত বলে আভাস মিলেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি জিউইশ নিউজ সিন্ডিকেট আয়োজিত এক সম্মেলনে বলেন, যে কোনো উপায়ে হোক, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের সব পথ বন্ধ করতে হবে। ট্রাম্পের সঙ্গে সাম্প্রতিক আলাপের প্রসঙ্গ টেনে তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে, কিন্তু জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে ইসরায়েল নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেবে।

ওমানের মাধ্যমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় আংশিক অগ্রগতি হলেও নেতানিয়াহু তা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি লিবিয়ার উদাহরণ টেনে বলেন, ‘যদি ইরান লিবিয়ার মতো সমস্ত পারমাণবিক ও রাসায়নিক কর্মসূচি বাতিল না করে, তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকি সোমবার (২৮ এপ্রিল) জানান, ইরান তাদের অভ্যন্তরীণ নীতি ও সার্বভৌম সিদ্ধান্তের ওপর বাইরের চাপ বরদাশত করবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো আগ্রাসন হলে এর জবাব হবে অত্যন্ত কঠোর।

আরাকি আরও বলেন, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ওপর ইসরায়েলের অস্বাভাবিক প্রভাব খুবই দৃষ্টিকটু এবং তা কূটনৈতিক প্রচেষ্টার জন্য শুভ লক্ষণ নয়।

উল্লেখ্য, ইসরায়েল একদিকে যেমন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিতে সামরিক হামলার ইঙ্গিত দিয়েছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কূটনৈতিক সমাধানের পথেই থাকতে চায় বলে জানিয়েছে।

 

সূত্র : ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স ও প্রেস টিভি

শেয়ার করুন