মোদী বড়জোর ২শ আসন পাবেঃ রাহুল ও মমতা
আব কি বার ৪শ পারঃ মোদীর হুংকার

- আপডেট: ১১:৩১:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪
- / 56
ছবি : সংগৃহীত
আব কি বার চারশ পার।এ হুংকার দিয়ে নরেন্দ্র মোদী ভারতের লোকসভা নির্বাচনে যে চমক সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন, তা বোধহয় আর হচ্ছেনা।
ভারতের উত্তর প্রদেশ ,মহারাষ্ট্র ও পশ্চিমবঙ্গ এই তিন রাজ্য হলো ভারতের ক্ষমতার সিঁড়ি।
অথচ এই তিন প্রদেশে মোদীর হিন্দুত্ববাদী জাগরন এবার আর সম্ভব হচ্ছে বলে মনে হয়না৷ সুতরাং চারশ পার হবার সম্ভবনা দিন দিন ফিঁকে হয়ে আসছে।
গত ১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে
পাকিস্তানে সার্জিকেল স্টাইক ও রাম
মন্দির নির্মান নিয়ে যে হিন্দুত্ববাদী জাগরন উস্কে দিয়ে মোদী ক্ষমতায় এসেছিলেন এবার তেমন জুতসই কোন এজেন্ডা বিরোধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়া করাতে পারছেন না।
এমনকি ২০ কোটি মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা অশোভন বক্তব্য বিবৃতি দিয়ে এ সম্প্রদায়ের ভোট পাওয়া বিজেপি তথা এনডিএ জোটের কপালে জুটবে বলে মনে হয়না। আর হিন্দুত্ববাদী জাগরন এবার শুধু দক্ষিণ ভারতে নয়,উত্তর ভারতেও প্রভাব ফেলতে পারছে না।
তার উপর তারই অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন এবার নির্বাচনে যাচ্ছেন না।কারন তাকে যেথানে নমিনেশন সাবমিটের কথা বলা হয়েছিল, সেখানে হিন্দুত্ববাদী জাগরন ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে হতো। তিনি এসব করবেন না।তাই অর্থ নেই বলে নির্বাচন থেকে সরে গেলেন। বিজেপি হারালো একজন শক্ত প্রার্থী। নির্মলা সীতারমনের এই হিন্দুত্ববাদী জিকির থেকে সরে আসায় লাভ হলো কংগ্রেস তথা ইন্ডিয়া জোটের।
৫৪৩ আসনের ভারতীয় লোকসভার
চার দফা ৩৮০ আসনে ভোট গত মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।
ভোট ফেরত সমীক্ষায় যে জরিপ চলছে, তাতে নরেন্দ্র মোদীর আব কি বার চারশ পার দিল্লীকা লাড্ডু হয়ে যেতে পারে। প্রায় সব জরিপে কংগ্রেস জোট এগিয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গে মোদী চেয়েছেন ৪২ আসনের সবকটি পাবেন বলে তার দাবী ।মোদী যদি ৪২ টি পায়,তবে তৃনমুল কি আঙ্গুল চুষবে। যাক মোদীর পর পশ্চিমবঙ্গে অমিত শাহ এসে প্রথমে বললেন ৩৫ টি,পরে বললেন ২৫/৩০ টি।
কর্নাটকের রাজধানী বেঙ্গালুরুর একটি নামকরা জরিপ সংস্থা প্রাইম
মার্কেট রিসার্চ এ জরিপ করে বলেছে মোদীর বিজেপি পশ্চিম বঙ্গে বড়জোর ৯/১০ টি, কংগ্রেস জোট ২ টি আসন পাবে।তাহলে তৃনমুল গতবার ২২ টি আসন পেয়েছিল, এবার কি ৩০ টি আসন পাবে? গুজরাটে মোদীর দল গতবার ২৬ টির মধ্যে ২৬ টি পেয়েছিল, এবার নাকি কমপক্ষে ২ টি আসন হারাবে।
উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশেও বিজেবির
একচটিয়া রাজত্ব নাকি এবার থাকবে না। উত্তর প্রদেশ ৮০,মধ্যপ্রদেশ ৪৮ ও পশ্চিমবঙ্গ ৪২ টি মিলিয়ে মোট ১৭০ টি আসন। সেখানে বিজেপি একাই পেয়েছিল ৯৩ টি আসন। আর
তার জোটের সঙ্গীরাও বেশ কিছু আসন পেয়েছিল।যার ফলে মোদী একাই পেয়েছিল ৫৪৩ আসনের মধ্যে
৩০৩ টি আসন।
গত ২০১৯ সনে লোকসভায় মোদীর বিশাল বিজয়ের নেপথ্যে হিন্দুত্ববাদী জাগরন তাকে অনেকটা একনায়কত্বে পরিনত করেছিল। ভাবটা ২০২৪ সনে ও তার জিগির কাজে আসবে। ভারতের মেইন ট্রীম গণমাধ্যম গুলো মোদীর পক্ষে জোয়ারের জয়গান করলেও মাঠ কিন্তু তেমন নয়।
বিভিন্ন জরিপ,সোস্যাল এক্টিভিট, ওটিপি ও স্থানীয় গণমাধ্যম তাদের জরিপে ভিন্ন কথা বলছে। বিশেষ করে গুজরাটের ধ্রুব রাঠি ইউটিউব চ্যানেল বিশেষ আলোচনায় এসেছে।তাছাড়া বেঙ্গালুরুর প্রাইম মার্কেট রিসার্চ যে জরিপ রিপোর্ট পেশ করেছে,তাদের মোদীর ৪শ আসন পাওয়া তো দুরের কথা।বড়জোর ২৫০/২৬০ টি আসন পেতে পারে।তার মানে ম্যাজিক ফিগার ২৭৩ টি আসন এককভাবে কেউ পাচ্ছে না। কোয়ালিশন সরকার করতে হবে দুজোটেরই।
গত ১৯ শে এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে
লোকসভা নির্বাচন।শেষ হবে ১ লা জুন। সাত দফায় নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষনা হবে ৪ জুন। এদিকে
পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা হত ১৩ মে বলেছেন বিজেপি ১৯৪/২০০ সিট পাবে।ইন্ডিয়াজোট পাবে ৩২৪ টি আসন। কথার মারপ্যাচে এনডিএ জোট বা ইন্ডিয়াজোট কেউ কাকে ছেড়ে কথা বলছেন না। এরই মধ্যে নরেন্দ্র মোদী বলছেন কংগ্রেস জোট বড়জোর ৫০ অাসন পাবে।রাহুল গান্ধী এরই উত্তরে বলেছেন মোদী এবার ক্ষমতায় বসছে না। সিট পাবে বড়জোর ২০০ আসন। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী কেজরি লাল বলেছেন, দিল্লীর ৭ আসনের সব কটি পাবে তার জোট।অর্থাৎ বিজেপি জোট একটিও আসন পাবেনা।
লড়াই যে জমজমাট হয়ে গেছে, তা দুজোটের কথাতেই স্পষ্ট। এবার গত নির্বাচনে
কোন প্রদেশে মোদী কত আসন আর ক্যগ্রেস কত আসন পেয়েছিল তার হিসেবে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।
গত ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে
উত্তর প্রদেশে মোদীর বিজেপি পেয়েছিল ৬২ টি, কংগ্রেস ১,অন্যান্যরা পেয়েছিল ১৭ টি আসন।
মহারাষ্ট্রে ৪৮ মধ্যে বিজেপি ২৩,কগ্রেস ১,অন্যান্যরা পেয়েছিল ২৪ টি আসন।পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে মমতার তৃনমুল ২২,
বিজেপি ১৮ ও কংগ্রেস ২টি।
বিহারে ৪০ টি আসনের মধ্যে বিজেপি ১৭,কংগ্রেস ১ ও অন্যান্যরা
২২ টি। তামিলনাড়ুতে বিজেপি কোন আসন পায়নি। কংগ্রেস ৮টি, অন্যন্যরা পেয়েছিল ৩০ টি। মধ্যপ্রদেশে ২৯ টি আসনের মধ্যে ২৮ টি বিজেপি ও ১ টি কংগ্রেস। কর্নাটকে ২৯ আসনে বিজেপি ২৮ ও
কংগ্রেস ১ টি। গুজরাট মোদীর হোম ল্যান্ড। সেখানের ২৬ আসনের সবকটি বিজেপির ঝুলিতে।কোন দলই এখানে সামান্য প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারনি।রাজস্থানে ২৫ টি ২৪ টি বিজেপি, অন্যান্যরা ১ টি। উরিষ্যায় ২১ টি আসনের ৮টি বিজেপি, কংগ্রেস ১ ও অন্যান্যরা ১২ টি জিতেছিল।
কেরালায় ২০টি আসনের ১৫ টি কংগ্রেস ও ৫ টি অন্যান্যরা পেলেও বিজেপির আসন ছিল শুন্য। তেলেঙ্গানার ১৭ আসনের ৪ টি বিজেপি, ৩ টি কংগ্রেস ও অন্যান্যরা
জিতেছিল ১০ আসন।আসামের ১৪
আসনের ৯টি বিজেপি, ৩ টি কংগ্রেস ২ টি অন্যরা পেয়েছিল। ঝাড়খন্ডের
১৪ আসনে বিজেপি ১১,কংগ্রেস ১
অন্যরা ২ টিতে জিতেছিল। পাঞ্জাবের
১৩ আসনের মধ্যে বিজেপি ২,কংগ্রেস ৮, অন্যরা ৩ আসন পেয়েছিল। ছত্তিরগড়ের ১১ আসনের
মধ্যে বিজেপি ৯ ও কংগ্রেস ২টি।হারিয়ানার ১০ আসনের ১০ টিই বিজেপির দখলে,দিল্লীর ৭ আসনের
৭ টিই বিজেপির ছিল। হিমাচলে ৪ টি আসনের ২ টি পেয়েছিল বিজেপি।মনিপুরের ২ টি ১ টি বিজেপি, অন্যরা
১ টি। জম্মু কাশ্মিরের কোন প্রার্থী দেয়নি বিজেপি।
তবে উত্তরপ্রদেশ,মধ্যপ্রদেষ,পাঞ্জাব,
কেরালা,কর্নাটক,তামিলনাড়ু, পশ্চিম বঙ্গ, মহারাষ্ট্র সহ বিভিন্ন প্রদেশে যে
বিজেপি ২০১৯ এর জয়জয়কার এবার আর হচ্ছেনা এটা নিশ্চিত।
রাহুল গান্ধী ও মমতা যতই বলুক মোদী ২০০ আসনের বেশি পাবেনা,
তারপরও বেঙ্গালুরুর প্রাইম রিসার্চ এর জরিপ যা সারা ভারতে প্রায় সবাই বিশ্বাসযোগ্য মনে করে,তাদের জরিপে ২৫০ আসন বিজেপি পাবে বলে যে ধারনা দেয়া হয়েছে, তা ফেলনা নয়। এমন পরিস্থিতিতে চার দফা ভোটের শেষে দু’পক্ষই দাবী করছে,তারা যাচ্ছে ক্ষমতায়। ভারতের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন জরিপ,মিডিয়া রিপোর্ট ও ইউটিউবার
বিশ্লেষণ করলে এটাই মনে হয় বিজেপির এনডিএ জোট বা বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের এককভাবে ক্ষমতায় যাবার পথ নেই।
কোয়ালিশন করে ক্ষমতায় যেতে হবে। এখন দেখার পালা কে যাবে ক্ষমতায়। সেজন্য অপেক্ষা করতে হবে ৪ জুন পর্যন্ত।