মাস্তুল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ
ঈদুল আজহায় ১৫ জেলায় ২৫ হাজার দুঃস্থদের কোরবানির মাংস বিতরণ

- আপডেট: ০৯:০০:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ জুন ২০২৫
- / 8
প্রতি বছর মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র পীড়িতদের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করে থাকে -ছবি : সংগৃহীত
মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশ বিদেশে দুঃস্থ মানুষের জন্য আলোর বর্তিকা। যেকোন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সেচ্ছাসেবী এই প্রতিষ্ঠানটি তাদের সাহয্যের হাত বাড়িয়ে দেন। আসন্ন ঈদুল আজহায় তার ব্যতিক্রম হয়নি। তারা দেশের ১৫ জেলার ২৫ হাজার দুঃস্থদের ভিতরে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেবার এক উদ্যোগ নিয়েছে। কেবল দেশের অভ্যন্তরই নয় তারা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজাতেও কোরবানির মাংস বিতরণ করবেন এমনটিই জানালেন ট্রাস্টি মেম্বার মওলানা নুরুল ইসলাম।
আসন্ন ঈদুল আজহায় ১৫ জেলার ২৫ হাজার নিম্নআয়ের পরিবারদের মাঝে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মাস্তুল ফাউন্ডেশন। রাজধানীসহ কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড়, কক্সবাজার, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, নেত্রকোনা, রংপুর, পাবনা, বগুড়া, ফুলগাজী, ফেনী, শেরপুর, দিনাজপুর মোট ১৫ জেলাতে তাদের আর্থিক অনুদানে কোরবানি হবে। সেই মাংসের সবই দুঃস্থদের ভিতরে বিতরণ করা হবে।
এছাড়া দেশের সীমানা পেরিয়ে তাদের কার্যক্রম চালানোর আভাস দিয়েছে সংগঠনটি। তারা ইসরায়িলি বর্বতার শিকার গাজাবাসীর জন্য কোরবানির ব্যবস্থা করেছে। বুভুক্ষ গাজাবাসীর মুখে হাসি ফোটাতেও অসহায়দের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে তারা এই উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতি বছর মাস্তুল ফাউন্ডেশন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সুবিধাবঞ্চিত ও দরিদ্র পীড়িতদের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করে থাকে।
এ বছর গাজায় চলমান মানবিক সংকট এবং সেখানকার মানুষের চরম দুর্দশা বিবেচনা করে, মাস্তুল ফাউন্ডেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোরবানির ফান্ডের একটি অংশ গাজাবাসীর জন্য উৎসর্গ করা হবে। ফিলিস্তিনি গাজা শরণার্থী ও গাজার ভিতরে দেইর আল বালাহ ক্যাম্প’, খান ইউনুস ক্যাম্পে অবস্থিত শরণার্থীদের এই সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি মেম্বার মাওলানা নুরুল ইসলাম বলেন, সত্যি এই কাজটি প্রশংসার যোগ্য। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মানুষের উদারতা ও সহমর্মিতাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। আল্লাহ আমাদের কাজের বরকত দিন।
তিনি বলেন, শুধু তাৎক্ষণিক সাহায্য নয় মাস্তুল ফাউন্ডেশন গাজার এতিম শিশুদের শিক্ষা, বিধবা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এ কাজে সহায়তার জন্য সংগঠনটি সমাজের বিত্তবানদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন।
সংগঠনটি মনে করে, তাদের এই মহতী উদ্যোগের সঙ্গে দেশে বিদেশের বিত্তবানেরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসবেন। তারা অসহায় মানুষের কল্যাণে নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করবেন। চলতি বছর থেকে মাস্তুল ফাউন্ডেশনে দানকারী সকল দাতারা কর রেয়াত পাবেন বলে সংগঠনটির পক্ষ হতে জানানো হয়েছে।
মাস্তুল ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধিত একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান। যা সমাজের সুবিধা বঞ্চিত মানুষ ও শিশুদের জন্য কাজ করে। ফাউন্ডেশনটির প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক, কাজী রিয়াজ রহমান। যিনি একজন ঢাবিয়ান। ছোটবেলা থেকেই যিনি অসহায় মানুষের জন্য কিছু করার স্বপ্ন দেখতেন। রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবরে পথশিশুদের পড়াশোনার মাধ্যমে সংগঠনটির মানবিক কার্যক্রম শুরু। এরপর ২০১২ সালে মাস্তুল ফাউন্ডেশন একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
পরবর্তীতে ২০১৯ সালে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাস্তুল ফাউন্ডেশন সারা বাংলাদেশে যাকাত ও সাদাকাহ (দানশীলতা) বিষয়ক কার্যক্রম শুরু করে। যদিও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমানের নিজস্ব একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু তার সব স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে এই ফাউন্ডেশনটির উন্নয়ন। যার মাধ্যমে তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কিছু করতে পারেন।
প্রতিষ্ঠানটি ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে ইসলামী শরা-শরিয়ত মতে পরিচালিত হয়। বিগত ২০১৫ সাল থেকে অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও দুঃস্থ মানুষদের মাঝে কোরবানির মাংস নিয়মিতভাবে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এ বছর ১৫টি জেলার ২৫ হাজার নিঃস্ব ও দুঃস্থ পরিবারদের কাছে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইসরাইলির হাতে ধ্বংসযজ্ঞ গাজাবাসীদের জন্য নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন। যার ভিতরে রয়েছে অসহায় গাজাবাসীদের ভিতরে কোরবানির মাংস বিলি বন্টন।
মাস্তুল পরিবার মনে করেন, অসহায় গাজীবাসীর জন্য বিশ্ব মানবতার কিছু করার রয়েছে। আর তা করার সময় এখনই। এ বছর উত্তর অঞ্চলের বন্যা কবলিত এলাকা, রংপুর, শেরপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম এবং দক্ষিণের ফেনী ও নোয়াখালী এলাকার মানুষের মাঝে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে ফাউন্ডেশেনটি।
কথা হয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক কাজী রিয়াজ রহমানের সঙ্গে। তিনি যেমনটি বলছিলেন, কোরবানি শুধু একটি ধর্মীয় ইবাদত নয়। এটি ত্যাগের মহিমা এবং সহমর্মিতার প্রতীক। বাংলাদেশের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে আমরা সব সময় ছিলাম এবং থাকব। তবে এই মুহূর্তে গাজার পরিস্থিতি আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। সেখানকার মানুষেরা চরম দুর্দশার মধ্যে জীবন কাটাচ্ছেন।
যাদের একটি বড় অংশ মুসলিম। আমরা বিশ্বাস করি, এই কোরবানির মাধ্যমে আমরা তাদের মুখে সামান্য হলেও হাসি ফোটাতে সক্ষম হবো। এই নিয়ত নিয়েই আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কার্যক্রম হাতে নিয়েছি।
ফাউন্ডেশনটি কেবলমাত্র কোরবানির মাংস বিতরণের ভিতরে তাদের কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ রাখেনি। তাদের রয়েছে আরো নানাবিধ সামাজিক উদ্যোগ। যার ভিতরে গণশিক্ষা কার্যক্রম, স্বাস্থ্য পরিসেবা, দারিদ্র্য বিমোচন, দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট, অনাথ বয়োবৃদ্ধদের জন্য আবাসন মানে অনাথ আশ্রম, নারীদের আর্থিকভাবে সফল করে তোলা প্রভৃতি।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই সংগঠনটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। তদের রয়েছে নিজস্ব স্কুল, মাদ্রাসা, এতিমখানা ও বৃদ্ধাশ্রম, যেখানে শতাধিক অনাথ/এতিম শিক্ষার্থী ও অসহায় বৃদ্ধ-বৃদ্ধা বসবাস করেন।
এছাড়াও যাকাত স্বাবলম্বী প্রজেক্টের মাধ্যমে ১ হাজারেও বেশি মানুষকে স্বাবলম্বী করেছে। মাস্তলের প্রধান কাজের মধ্যে রয়েছে দাফন-কাফন সেবা প্রজেক্ট। যার মাধ্যমে করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৩ হাজারের অধিক লাশ দাফন করা হয়েছে।
পাশাপাশি মাস্তুল মেহমানখানার মাধ্যমে প্রতিদিন শতাধিক অসহায় ও নিম্নআয়ের মানুষ একবেলা বিনামূল্যে খাবার গ্রহণ করে। রমজান ও ঈদে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোর এই উদ্যোগ মাস্তুল ফাউন্ডেশনের নিয়মিত সমাজসেবামূলক কার্যক্রমেরই একটি অংশ মাত্র।