ব্যস্ত কৃষক
করচার হাওরে ধান কাটার ধুম

- আপডেট: ০২:৩১:৩৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
- / 2
ছবি : সংগৃহীত
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাওর করচার হাওর। হাওরটি সুনামগঞ্জ সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত। করচার হাওরের যেদিকে চোখ যায় সেদিকে পাকা বোরো ধানের শীষ দোল খাচ্ছে।
হাওরের গভীর ও উঁচু অংশের ধান কাটছেন কৃষকরা। কাটা ধান ট্রলি, ঠেলাগাড়ি কিংবা মাথায় করে খলায় এনে রাখছেন। কেউ আবার হাওরেই খলা তৈরি করে সেখানেই ধানের মাড়াই করছে। পরে সেখানেই ত্রিপল বিছিয়ে ধান শুকানোর কাজও সেরে নিচ্ছেন। শুকনো ধান কেউ স্তূপ করে বস্তায় ভরছেন কেউ কেউ।
খলায় জায়গা না হওয়ায় আর দ্রুত শুকানোর জন্য অনেকেই ব্যস্ত সড়কেই ধান শুকাচ্ছেন। এসব কাজে পরিবারের স্কুল পড়ুয়া সদস্যরাও সহযোগিতা করছে।
এর পাশে কাটা ধানের খড় শুকানোর কাজও একই সাথে চালিয়ে যাচ্ছে। এই খড় বর্ষায় গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা হবে। তাদের চোখে মুখে এখন খুশির ঝিলিক।
কারণ বোরো মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার ভালো ফলন পেয়েছেন তারা। রাতে ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত হওয়ায় ভয় কাজ করলেও সকাল হলেই রৌদ্রময় আবহাওয়া স্বস্তি এনে দেয়।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর ২ লাখ ২৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার হেক্টরে স্থানীয় আদি জাত, ১ লাখ ৫৭ হাজার ২১০ হেক্টরে উফসী, ৬৫ হাজার ২০০ হেক্টরে হাইব্রিড ধান বাদ করেছেন। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টনের বেশি। যার বাজার মূল্য ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। হাওরে ৯৫৫টি কম্বাইন হার্ভেস্টর, ১১৬টি রিপার ও ১ লাখ ৯৩ হাজার ৩১০ জন শ্রমিক ধান কাটছেন।
করচার হাওরে আবাদ করেছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার কৃষক হাবিব মিয়া জানান, এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। একদিকে ধান কাটা হচ্ছে অন্যদিকে মাড়াই আর শুকানোর কাজও চলছে সমান তালে। কিছুদিনের মধ্যে সব ধান কাটা মাড়াই আর শুকানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে।
তিনি আরও জানান, করচার হাওরে ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমির মধ্যে এ বছর আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ২২০ হেক্টর। এর মধ্যে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ২ হাজার ৭০০ হেক্টর বাকি ১ হাজার ৫২০ হেক্টর সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায়। প্রতি কিয়ারে কোনো জমিতে ২০ মন আবার কোনো জমিতে ২৫ মন ধান উৎপাদন হয়েছে। এবার উৎপাদন খরচের দুইগুণ লাভ হবে বলে আশা এই কৃষকের।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এবার হাওরে ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে কৃষাণ-কৃষাণীরা তাদের সারা বছরের শক্তি-সাহস বোরো ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাওরের অর্ধেক ধান কাটা হয়ে গেছে।
সুনামগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা আজাদ জানিয়েছেন, ফসল ঘরে না তোলা পর্যন্ত আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক কৃষকদের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা করছেন।