কাশ্মীর সীমান্তে পাকিস্তানের তীব্র গোলাবর্ষণ, ভারতীয় সেনা নিহত

- আপডেট: ১২:০৩:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
- / 1
ছবি : সংগৃহীত
ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ফের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। গতরাতে দুই পক্ষের মধ্যে ব্যাপক গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় এক ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
নিহত ওই ভারতীয় সেনার নাম দিনেশ কুমার। বুধবার রাত ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সীমান্ত সংঘাতে নিহত ভারতীয় নাগরিকদের সংখ্যা বেড়ে ১৩ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনই বেসামরিক নাগরিক।
এর আগে ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের ছোড়া গোলায় ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন।
বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের এলওসি সংলগ্ন সীমান্ত শহর পুঞ্চে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালালে শহরটিতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আচমকা গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দে শহরে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। হামলার পর অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন।
হামলায় আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। হামলায় আহতদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি ছিল। আহতদের দ্রুত পুঞ্চের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় চিকিৎসার জন্য। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৬ কোর বা হোয়াইট নাইট কোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক পোস্টে বলেছে, হোয়াইট নাইট কোরের জিওসি ও সব সদস্য ৫ ফিল্ড রেজিমেন্টের ল্যান্স নায়েক দিনেশ কুমারের চূড়ান্ত আত্মত্যাগকে সম্মান জানায়। তিনি ৭ মে পাকিস্তানের গোলাবর্ষণের সময় প্রাণ হারিয়েছেন। যারা পুঞ্চ সেক্টরে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্য করে চালানো হামলার শিকার হয়েছেন আমরা তাদের পাশে আছি।
এর আগে বুধবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ বলেছেন, পাকিস্তানে হামলা চালিয়ে ভারত ভুল করেছে। তাদের এর জবাব পেতেই হবে। পাক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত হয়তো ভেবেছিল পাকিস্তান পিছু হটবে। কিন্তু ভারত ভুলে গেছে যে এই জাতি এমন এক জাতি যারা নিজের দেশের জন্য লড়তে জানে।
উত্তর কাশ্মীরের বারামুল্লার উরি সেক্টর ও কুপওয়ারার তাংধার সেক্টরে পাকিস্তানের তীব্র গোলাবর্ষণে একাধিক গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নিক্ষেপ করা গোলা বারামুল্লা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার ভেতরে গিঙ্গাল গ্রাম পর্যন্ত আঘাত হানে। এতে অন্তত ১১ জন আহত হন। যাদের বেশির ভাগই সালামাবাদ এলাকার বাসিন্দা।
উরির এক বাসিন্দা বলেন, মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। আমরা বাংকারে ঢুকে পড়ি। এর কিছু সময় পর গোলাবর্ষণের তীব্রতা বেড়ে যায়। ২০২১ সালে যুদ্ধবিরতি নবায়নের পর এটাই সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি।
সরকারি সূত্র বলছে, সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা ভূগর্ভস্থ বাংকারে অবস্থান নিয়েছেন। সীমান্ত থেকে দূরবর্তী এলাকার আরও অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কামালকোট, সালামাবাদ, দাচনা ও গিঙ্গাল গ্রামে পাকিস্তানের গোলা আঘাত হানে। এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোলার আঘাতে অন্তত ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় হামলা চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন নিহত ও ৫৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এদিকে হামলার পর থেকে সীমান্তে পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাবর্ষণে ১৫ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ভারতের সেনাবাহিনী।
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানির পর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা চলছিল। এখন তা পাল্টাপাল্টি হামলায় রূপ নিয়েছে।