০৫:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

খোসপাঁচড়া হলে করণীয়

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ০২:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
  • / 3

৯০ শতাংশই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত- প্রতীকী ছবি

স্ক্যাবিস। প্রচলিত বাংলায় একে বলা হয় খুজলি বা খোসপাঁচড়া। স্ক্যাবিস একধরনের সংক্রামক রোগ। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নয় বরং এটি সংক্রমিত হয় সারকপটিস স্ক্যারিবাই নামক একধরনের মাইটের মাধ্যমে। এটি ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে।

প্রচণ্ড গরমে নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১১০০ থেকে ১২০০ রোগী সেবা নিতে আসছেন। এসব রোগীর মধ্যে ৯০ শতাংশই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এ রোগের হার অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ও মুখে স্ক্যাবিস হতে দেখা যায়। বড়দের হাত, কনুই, বগল, স্তন, পশ্চাৎদ্দেশ, লজ্জাস্থান ও আঙুলের ফাঁকে এটি বেশি হয়। তবে শরীরের যেকোনো স্থানেই স্ক্যাবিস হতে পারে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইশরাত ভুইয়া বলেন, স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকায়। আঙুলের ফাঁকে, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ, হাতের তালু, কবজি, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। পরে আরও বাড়তে থাকে। চুলকানি বেশি হয় রাতেই। ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়। খোসপাঁচড়া সাধারণত বেশি হয় গরমকালে।

খোসপাঁচড়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। পরিবারের একজনের হলে অন্য সদস্যদের মধ্যেও ছড়াতে পারে। তাই রোগীসহ পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড় পরিবারের অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পর কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ভালো করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে বা আয়রন করে নিতে হবে।

নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্ক্যাবিস সেরে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক মলম ব্যবহার করতে হবে। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা যাবে। দ্বিতীয় দফায়ও এই রোগ হতে পারে। সাধারণত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা চিকিৎসা না নিলে বা সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুদের যেহেতু বেশি হয় তাই বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। গরমকালে শিশুদের কুসুম গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

ভ্যাপসা গরমে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই এ নিয়ে সচেতন হতে হবে।

এ রোগ হলে যেসব নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি : 

* অন্যের ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে, চিরুনি, ব্রাশ, রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
* পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের তোয়ালে, জামাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশ আলাদা রাখুন।
* দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস ভালোভাবে পরিষ্কার করে কড়া রোদে শুকাবেন।
* আক্রান্ত ত্বকে সাবান বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করবেন না। এতে চুলকানি বাড়বে।
* চিকিৎসকের পরামর্শমতো ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।
* নিজে নিজে কোনো ওষুধ সেবন বা লোশন ব্যবহার করবেন না।
* আক্রান্ত ব্যক্তির সাহচর্যে এসেছেন এমন সবাই একই সময়ে একসঙ্গে চিকিৎসা নিন।
* কিছুদিন পরপর সম্ভব হলে বিছানার তোষক-গদি কড়া রোদে দিন।
* আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

খোসপাঁচড়া হলে করণীয়

আপডেট: ০২:৩৮:৪০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫

৯০ শতাংশই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত- প্রতীকী ছবি

স্ক্যাবিস। প্রচলিত বাংলায় একে বলা হয় খুজলি বা খোসপাঁচড়া। স্ক্যাবিস একধরনের সংক্রামক রোগ। ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস নয় বরং এটি সংক্রমিত হয় সারকপটিস স্ক্যারিবাই নামক একধরনের মাইটের মাধ্যমে। এটি ত্বকের মধ্যে বাসা বাঁধে এবং ডিম পাড়ে।

প্রচণ্ড গরমে নানা ধরনের চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন ১১০০ থেকে ১২০০ রোগী সেবা নিতে আসছেন। এসব রোগীর মধ্যে ৯০ শতাংশই স্ক্যাবিস বা খোসপাঁচড়ায় আক্রান্ত। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এ রোগের হার অনেক বেশি দেখা যাচ্ছে।

শিশুদের ক্ষেত্রে মাথা ও মুখে স্ক্যাবিস হতে দেখা যায়। বড়দের হাত, কনুই, বগল, স্তন, পশ্চাৎদ্দেশ, লজ্জাস্থান ও আঙুলের ফাঁকে এটি বেশি হয়। তবে শরীরের যেকোনো স্থানেই স্ক্যাবিস হতে পারে।

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইশরাত ভুইয়া বলেন, স্ক্যাবিস হলে সারা শরীর চুলকায়। আঙুলের ফাঁকে, নিতম্ব, যৌনাঙ্গ, হাতের তালু, কবজি, বগল, নাভি ও কনুইয়ে চুলকানি শুরু হয়। পরে আরও বাড়তে থাকে। চুলকানি বেশি হয় রাতেই। ত্বকে ছোট ছোট ফুসকুড়ি ওঠে, যা খুব চুলকায় এবং তা থেকে পানির মতো তরল পদার্থ বের হয়। খোসপাঁচড়া সাধারণত বেশি হয় গরমকালে।

খোসপাঁচড়া অত্যন্ত ছোঁয়াচে একটি রোগ। পরিবারের একজনের হলে অন্য সদস্যদের মধ্যেও ছড়াতে পারে। তাই রোগীসহ পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে। আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়, গামছা, তোয়ালে, বিছানার চাদর, বালিশ ব্যবহার করলে একজন থেকে আরেকজনে এ রোগ ছড়াতে পারে। তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর ব্যবহৃত কাপড়চোপড় পরিবারের অন্যদের ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার পর কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ভালো করে ধুয়ে কড়া রোদে শুকাতে হবে বা আয়রন করে নিতে হবে।

নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিলে দুই সপ্তাহের মধ্যেই স্ক্যাবিস সেরে যায়। চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক মলম ব্যবহার করতে হবে। চুলকানির জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন সেবন করা যাবে। দ্বিতীয় দফায়ও এই রোগ হতে পারে। সাধারণত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা চিকিৎসা না নিলে বা সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে দ্বিতীয়বার আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে।

শিশুদের যেহেতু বেশি হয় তাই বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে। গরমকালে শিশুদের কুসুম গরম পানি দিয়ে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। থাকতে হবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। প্রচুর পানি ও তরল খাবার খাওয়াতে হবে।

ভ্যাপসা গরমে তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিদিনই হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তাই এ নিয়ে সচেতন হতে হবে।

এ রোগ হলে যেসব নিয়মকানুন মেনে চলা জরুরি : 

* অন্যের ব্যবহৃত জামাকাপড়, তোয়ালে, চিরুনি, ব্রাশ, রুমাল ইত্যাদি ব্যবহার করবেন না।
* পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের তোয়ালে, জামাকাপড়, বিছানার চাদর, বালিশ আলাদা রাখুন।
* দৈনন্দিন ব্যবহার্য জিনিস ভালোভাবে পরিষ্কার করে কড়া রোদে শুকাবেন।
* আক্রান্ত ত্বকে সাবান বা জীবাণুনাশক ব্যবহার করবেন না। এতে চুলকানি বাড়বে।
* চিকিৎসকের পরামর্শমতো ক্রিম বা লোশন ব্যবহার করুন।
* নিজে নিজে কোনো ওষুধ সেবন বা লোশন ব্যবহার করবেন না।
* আক্রান্ত ব্যক্তির সাহচর্যে এসেছেন এমন সবাই একই সময়ে একসঙ্গে চিকিৎসা নিন।
* কিছুদিন পরপর সম্ভব হলে বিছানার তোষক-গদি কড়া রোদে দিন।
* আক্রান্ত স্থানে ঘা হয়ে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করুন।

শেয়ার করুন