গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশায় হতাশা মিশে গেছে : আনু মুহাম্মদ

- আপডেট: ০২:২৭:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 2
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত নাগরিক সংহতি সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ -ফাইল ফটো
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল সেখানে জনগণ একটি নতুন রাজনৈতিক কাঠামোর স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সরকারের ভূমিকা নির্লিপ্ত, কোথাও তাদের অস্তিত্ব আছে বলে মনে হয় না। বরং গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশায় হতাশা মিশে গেছে।
বরং হামলা-নির্যাতনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে। নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
শনিবার (৩১ মে) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে অনুষ্ঠিত এক নাগরিক সংহতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত এটিএম আজহারুল ইসলামকে খালাস এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোটের মিছিলে ছাত্র শিবিরের হামলার প্রতিবাদে এই নাগরিক সংহতি সমাবেশ করেছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। এতে বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
সমাবেশ থেকে জামায়াত ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন ছাত্র শিবিরের রাজনীতির প্রতি নিন্দা জানানো হয়।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, আজ আমরা আশাহত হয়ে দাঁড়িয়েছি। যে শিক্ষার্থীরা গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য লড়ছে, যে নারীরা অধিকারের জন্য লড়াই করছে তাদের ওপরই হামলা হচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা বললে ইসলামবিরোধী অপপ্রচারের ট্যাগ লাগিয়ে তাদের দমন করা হচ্ছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারী, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, শিক্ষকসহ যেকোনো স্তরের মানুষ যখন নিজেদের অধিকার আদায়ে কথা বলেন, তখনই তাদের ওপর হামলা হয়। আর যারা হামলা করে তারা রক্ষা পায়। কারণ সরকারের ভেতরেই তাদের মদদদাতা রয়েছে।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে এবং এর প্রতিবাদ জানালে কিছু ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিকমী শিক্ষার্থীদের উপরে হামলা চালাচ্ছে। নারীদের টার্গেট করে তারা হামলা করছে। যখন যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে কথা হয় সেটাকে ইসলামবিরোধী কথা বলে অপপ্রচার চালায়। ধর্মকে ব্যবহার করে তারা রাজনীতিতে ফায়দা নিতে চায়।
অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তার মধ্যে নতুন ফ্যাসিবাদের আগমনধ্বনি শোনা যাচ্ছে। পুরো সমাজের মধ্যে আবার একটা নতুন ফ্যাসিবাদী শক্তির নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। যে ব্যক্তি ইতিহাসের বিবেচনায় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, তাকে নির্দোষ ঘোষণার মাধ্যমে ইতিহাসকেই বিকৃত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ’একাত্তরের শহীদ, নির্যাতিত নারী ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করা হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের বর্তমান তরুণ কর্মীদের অনেকেই ৭১ সালে জন্মায়নি। তারা যুদ্ধাপরাধ করেনি ঠিকই কিন্তু তারা যদি সেই রাজনীতি ধারণ করে তবে সেই অপরাধের দায় থেকেও তারা মুক্ত থাকতে পারে না।
যুদ্ধাপরাধের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলে প্রচার করা হচ্ছে এটা ভয়ংকর মিথ্যাচার। ১৯৭১ সালে শহীদ হওয়া মানুষের অধিকাংশই ছিলেন ধার্মিক মুসলমান। সুতরাং তাদের হত্যাকারীদের বিচারকে ইসলামবিরোধী বলা মানে ইসলামেরই অবমাননা করা।
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক জাবির আহমেদ জুবেল, ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হারুন উর রশীদ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মানজুর আল মতিনসহ অন্যান্যরা।