গমের ব্লাস্ট রোগ ও তার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা

- আপডেট: ০১:১২:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
- / 29
ফাইল ছবি
গমের ব্লাস্ট একটি ক্ষতিকর ছত্রাকজনিত রোগ। ছত্রাকটির বৈজ্ঞানিক নাম ম্যাগনাপোরথি অরাইজি (পাইরিকুলারিয়া অরাইজি) প্যাথোটাইপ ট্রিটিকাম। গমের শীষ বের হওয়া থেকে ফুল ফোটার সময়ে উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকলে এ রোগের আক্রমণ ঘটে। রোগটি ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে দেখা যায় এবং পরবর্তী সময়ে ব্রাজিলসহ দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা ইত্যাদি দেশে এর বিস্তার হয়। বাংলাদেশে প্রথম ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, বরিশাল ও ভোলা জেলায় আনুমানিক ১৫০০০ হেক্টর জমিতে এ রোগের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয় যা মোট গম আবাদী জমির প্রায় ৩%। আক্রান্ত গম ক্ষেতের ফলন শতকরা ২৫-৩০ ভাগ হ্রাস পায়। ক্ষেত্র বিশেষে এ রোগের কারণে ক্ষেতের সম্পূর্ণ ফসল বিনষ্ট হতে পারে।
গমের ব্লাস্ট রোগ চেনার উপায়
. শীষ বের হওয়ার পর গম ক্ষেতের কোন এক স্থানে শীষ সাদা হয়ে যায় এবং অনুকূল আবহাওয়ায় তা অতি দ্রুত সারা ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।
. প্রধানত গমের শীষে ছত্রাকের আক্রমণ হয়। শীষের আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ পড়ে এবং আক্রান্ত স্থানের উপরের অংশ সাদা হয়ে যায়। তবে শীষের গোড়ায় আক্রমণ হলে পুরো শীষ শুকিয়ে সাদা হয়ে যায়।
. আক্রান্ত শীষের দানা অপুস্ট হয় ও কুচকিয়ে যায় এবং দানা ধুসর বর্ণের হয়ে যায়।
. পাতায়ও এ রোগের আক্রমণ হতে পারে এবং এক্ষেত্রে পাতায় চোখের ন্যয় ধুসর বর্ণের ছোট ছোট দাগ পড়ে।
রোগের বিস্তার যেভাবে ঘটে
. আক্রান্ত বীজের মাধ্যমে গমের ব্লাস্ট রোগ ছড়ায়।
. বৃষ্টির কারণে গমের শীষ ১২-২৪ ঘণ্টা ভেজা ও তাপমাত্রা ১৮০ সে. অথবা এর অধিক হলে এ রোগের সংক্রমণ হয় এবং রোগের জীবাণু দ্রুত বাতাসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
. ব্লাস্ট রোগের জীবাণু কিছু কিছু ঘাস জাতীয় পোষক আগাছার (যেমন- চাপড়া, শ্যামা, আংগুলি ঘাস) মধ্যে বাস করতে পারে; তবে সেখানে রোগের লক্ষণ সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না।
গমের ব্লাস্ট রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়
. ব্লাস্ট মুক্ত গম ক্ষেত থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
. অপেক্ষাকৃত কম সংবেদনশীল জাত ব্যবহার করতে হবে।
. উপযুক্ত সময়ে (অগ্রহায়ণের ০১ হতে ১৫ তারিখ) বীজ বপন করতে হবে যাতে শীষ বের হওয়ার সময়ে বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা পরিহার করা যায়।
. বপনের পূর্বে প্রতি কেজি বীজের সাথে ৩ গ্রাম হারে প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউপি অথবা ৩ মিলি হারে ভিটাফ্লো ২০০ এফএফ ছত্রাকনাশক মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে। বীজ শোধন করলে গমের অন্যান্য বীজবাহিত রোগও দমন হবে এবং ফলন বৃদ্ধি পাবে।
. গমের ক্ষেত ও আইল আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
. প্রতিরোধক ব্যবস্থা হিসেবে শীষ বের হওয়ার সময় একবার এবং ১২-১৫ দিন পর আর একবার নিম্নের উল্লিখিত ছত্রাকনাশক দ্বারা প্রতিষেধক ব্যবস্থা হিসেবে স্প্রে করতে হবে।
. প্রতি শতাংশ জমিতে ৬ (ছয়) গ্রাম নাটিভো ৭৫ ডব্লিউ জি অথবা নভিটা ৭৫ ডব্লিউ জি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৫ শতাংশ জমিতে ভালভাবে স্প্রে করতে হবে। স্প্রে করলে গমের পাতা ঝলসানো রোগ, বীজের কালো দাগ রোগ এবং মরিচা রোগ ইত্যাদি দমন হবে।
বি.দ্র. ছত্রাকনাশক ব্যবহারের সময় হাতে গ্লোবস এবং মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে যাতে রাসায়নিক দ্রব্যাদি শরীরের সংস্পর্শে না আসে এবং শ্বাস-প্রশাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে।
তথ্য সূত্র: ফোল্ডার, গম গবেষণা কেন্দ্র, নশিপুর, দিনাজপুর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট