০১:০৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

গাজায় দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ১০:১৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 3

ফাইল ফটো

প্রায় দুই মাস সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পর খুব সীমিত পরিসরে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে সেখানে তৈরি হতে পারে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি।

১১ সপ্তাহ পর গাজা উপত্যকায় আটকে থাকা মানুষের জন্য সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে সীমা অতিক্রম না করা গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েল সরকারের কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট ইন দ্য টেরিটরিজ বলেছে, গাজার ইসরায়েল এবং মিসর সীমান্ত দিয়ে গত ২০ থেকে ২১ মে সময়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে ১৯৮টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ময়দা, শিশুদের খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী এবং ওষুধ।

সমালোচকরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় এই সহায়তা নিতান্তই নগণ্য। গাজা উপত্যকায় এই মুহূর্তে মোট ২০ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধ বিরতির সময়ে সাহায়তা সামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করতো।

তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সর্বশেষ প্রবেশ করা ট্রাকগুলো আটকে ছিল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জার্মান দপ্তরের প্রধান মার্টিন ফ্রিক বলেন, মানবিক সহায়তার প্রথম চালান সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ছোট্ট আশার আলো তবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’

গত ২ মার্চ থেকে জারি রাখা এই ব্লকেডের বিষয়ে ইসরায়েল বলছে, জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা সরবারাহ করা সহায়তা সামগ্রী লুট করে নিচ্ছিল। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তারা সীমিত মাত্রায় সরবারাহ পৌঁছাতে দিচ্ছে।

এদিকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করেত যাওয়া ট্রাকগুলোর নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বোমা, ভাঙা রাস্তা এবং লুট হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদেরকে। তাছাড়া জ্বালানির ঘাটতি থাকার কারণে লোকজন ময়দা নিতে পারছে না কিংবা হিমাগারগুলো চালু রাখা যাচ্ছে না।

সীমান্তের পেছনে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাফার জোন। কয়েক সপ্তাহে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা মিসর, ইসরায়েল এবং জর্ডান সীমান্তে এক লাখ ১৬ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে। এদিকে ইউএনআরডাব্লিউএ বলছে, খাদ্য সামগ্রী বোঝাই তিন হাজার ট্রাক যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

তবে বিতরণ পয়েন্টে কার্যক্রম অনেক ধীর। বর্তমানে খোলা থাকা একমাত্র বর্ডার ক্রসিং কেরেম শালোমে খাদ্য সামগ্রীর ট্রাক বদল করতে হয়। এরপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অনুমতির আগ পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতে হয়। তাদের এই যাত্রা আবার যেকোনো সময় থামিয়ে দেওয়া হতে পারে। তার মানে হলো, খাদ্য সামগ্রী নিয়ে অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হওয়া।

দ্য ইউনাইটেড নেশনস রেলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (ইউএনআরডাব্লিউএ) গাজায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গাজায় অবস্থিত জরুরি শিবিরগুলোর দায়িত্বে রয়েছে সংস্থাটি। তাছাড়া তাদের তিন হাজার ট্রাক সহায়তা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ময়দা ক্রয় এবং পরিবহণের আয়োজন করে। সেইসাথে ২৫টি বেকারি পরিচালনা করে সংস্থাটি। জ্বালানির অভাবে বেকারিগুলো মার্চ মাসের শেষে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এরপর ২২ মে থেকে কিছু বেকারি আবার চালু করা হয়েছে।

এদিকে ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষ ধরনের খাবার, টিকা, সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট সরবরাহের কাজ করে থাকে।

এই সংস্থাগুলো মিসর, জর্ডান, আমিরাত এবং তুরস্কের রেডক্রিসন্টের সহায়তা পেয়ে থাকে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি, ইসলামিক রিলিফসহ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে এসেছে সহায়তায়।

সহায়তায় কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এ সকল সহায়তা সামগ্রী যাচাই-বাছাই করে থাকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ফলে গাজায় প্রবেশে সময়ের প্রয়োজন হয়।

ইসরায়েল সরকার বলছে, গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে মার্কিন সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস কোম্পানির সহায়তায় একটি সিকিউরিটি হাব গড়ে তোলা হবে। যদিও এমন পরিকল্পনার সমালোচনা করছে জাতিসংঘ। তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

গাজায় দুর্ভিক্ষের শঙ্কা

আপডেট: ১০:১৬:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

ফাইল ফটো

প্রায় দুই মাস সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পর খুব সীমিত পরিসরে গাজায় মানবিক সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে সেখানে তৈরি হতে পারে দুর্ভিক্ষের পরিস্থিতি।

১১ সপ্তাহ পর গাজা উপত্যকায় আটকে থাকা মানুষের জন্য সহায়তা নিয়ে ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমর্থন ধরে রাখতে সীমা অতিক্রম না করা গুরুত্বপূর্ণ।

ইসরায়েল সরকারের কো-অর্ডিনেটর অব গভর্নমেন্ট ইন দ্য টেরিটরিজ বলেছে, গাজার ইসরায়েল এবং মিসর সীমান্ত দিয়ে গত ২০ থেকে ২১ মে সময়ে মানবিক সহায়তা নিয়ে ১৯৮টি ট্রাক প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে ময়দা, শিশুদের খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী এবং ওষুধ।

সমালোচকরা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় এই সহায়তা নিতান্তই নগণ্য। গাজা উপত্যকায় এই মুহূর্তে মোট ২০ লাখ মানুষ বসবাস করছেন। চলতি বছরের শুরুতে যুদ্ধ বিরতির সময়ে সাহায়তা সামগ্রী নিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ ট্রাক প্রবেশ করতো।

তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সর্বশেষ প্রবেশ করা ট্রাকগুলো আটকে ছিল। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির জার্মান দপ্তরের প্রধান মার্টিন ফ্রিক বলেন, মানবিক সহায়তার প্রথম চালান সরবরাহ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি ছোট্ট আশার আলো তবে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।’

গত ২ মার্চ থেকে জারি রাখা এই ব্লকেডের বিষয়ে ইসরায়েল বলছে, জঙ্গি গোষ্ঠী হামাসের সদস্যরা সরবারাহ করা সহায়তা সামগ্রী লুট করে নিচ্ছিল। কেবল আন্তর্জাতিক চাপের কারণে তারা সীমিত মাত্রায় সরবারাহ পৌঁছাতে দিচ্ছে।

এদিকে ত্রাণসামগ্রী নিয়ে প্রবেশ করেত যাওয়া ট্রাকগুলোর নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বোমা, ভাঙা রাস্তা এবং লুট হয়ে যাওয়ার মতো বিভিন্ন ধরনের জটিলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদেরকে। তাছাড়া জ্বালানির ঘাটতি থাকার কারণে লোকজন ময়দা নিতে পারছে না কিংবা হিমাগারগুলো চালু রাখা যাচ্ছে না।

সীমান্তের পেছনে তৈরি করা হয়েছে বিশাল বাফার জোন। কয়েক সপ্তাহে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা মিসর, ইসরায়েল এবং জর্ডান সীমান্তে এক লাখ ১৬ হাজার টন খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুত রেখেছে। এদিকে ইউএনআরডাব্লিউএ বলছে, খাদ্য সামগ্রী বোঝাই তিন হাজার ট্রাক যাত্রা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।

তবে বিতরণ পয়েন্টে কার্যক্রম অনেক ধীর। বর্তমানে খোলা থাকা একমাত্র বর্ডার ক্রসিং কেরেম শালোমে খাদ্য সামগ্রীর ট্রাক বদল করতে হয়। এরপর ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অনুমতির আগ পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতে হয়। তাদের এই যাত্রা আবার যেকোনো সময় থামিয়ে দেওয়া হতে পারে। তার মানে হলো, খাদ্য সামগ্রী নিয়ে অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হওয়া।

দ্য ইউনাইটেড নেশনস রেলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি ফর প্যালেস্টাইন রিফিউজি (ইউএনআরডাব্লিউএ) গাজায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। গাজায় অবস্থিত জরুরি শিবিরগুলোর দায়িত্বে রয়েছে সংস্থাটি। তাছাড়া তাদের তিন হাজার ট্রাক সহায়তা নিয়ে প্রস্তুত হয়ে আছে।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থা ময়দা ক্রয় এবং পরিবহণের আয়োজন করে। সেইসাথে ২৫টি বেকারি পরিচালনা করে সংস্থাটি। জ্বালানির অভাবে বেকারিগুলো মার্চ মাসের শেষে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এরপর ২২ মে থেকে কিছু বেকারি আবার চালু করা হয়েছে।

এদিকে ইউনিসেফ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশেষ ধরনের খাবার, টিকা, সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট সরবরাহের কাজ করে থাকে।

এই সংস্থাগুলো মিসর, জর্ডান, আমিরাত এবং তুরস্কের রেডক্রিসন্টের সহায়তা পেয়ে থাকে। সেইসাথে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি, ইসলামিক রিলিফসহ বেশ কিছু বেসরকারি সংস্থাও এগিয়ে এসেছে সহায়তায়।

সহায়তায় কাজ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও। তবে এ সকল সহায়তা সামগ্রী যাচাই-বাছাই করে থাকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ফলে গাজায় প্রবেশে সময়ের প্রয়োজন হয়।

ইসরায়েল সরকার বলছে, গাজায় সহায়তা পৌঁছাতে মার্কিন সিকিউরিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস কোম্পানির সহায়তায় একটি সিকিউরিটি হাব গড়ে তোলা হবে। যদিও এমন পরিকল্পনার সমালোচনা করছে জাতিসংঘ। তথ্যসূত্র : ডয়চে ভেলে

শেয়ার করুন