১০:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

গুম বিষয়ক স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে: আইন উপদেষ্টা

ইউএনএ নিউজ
  • আপডেট: ০৫:৩০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
  • / 6

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধ বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

এই আইনের অধীনে গুম বিষয়ক একটি শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি। আজ সচিবালয়ে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের (ওয়ার্কিং গ্রুপ) সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

পরবর্তী সরকার আইনটি বাতিল করবে কি-না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যেই সরকারে আসুক, তারা সবাই গুমের শিকার। তারা সবাই এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন আর বিএনপি-জামায়াত তো সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার ছিলেন।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ বারবার বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, তাদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের একটা কমিটমেন্ট ছিল গুমের তদন্ত ও বিচার করা। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে, আমরা তাদের সঙ্গে আজ মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বসার পর তারা আমাদের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। তারা গুম কমিশনের, তদন্ত কমিশনের প্রশংসা করেছেন, আমরা আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছি, সেটার প্রশংসা করেছেন। তারা গুম বিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছেন।

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল। এই কমিশন শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও হয়েছে। কিন্তু অতটা সফল হয়নি।

তিনি বলেন, ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চারটি অংশ থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ট্রুথ সেকিং- আসলে কী হয়েছিল সেটা। সেটার কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কিছুদিন আগে যে রিপোর্টটা প্রকাশ করলো, সেটা এটার একটা পার্ট। আমাদের ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, সেটা ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।’ আসিফ নজরুল আরো বলেন, আমাদের মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী সাবেক গণভবনে যে জুলাই জাদুঘর করছেন, সেটাও ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।

তিনি বলেন, তারপর একটা পার্ট হচ্ছে মেমোরিয়ালাইজেশন, স্মৃতিটাকে ধরে রাখা। সেটা মি. ফারুকীর জাদুঘরের মাধ্যমে নিশ্চয়ই করা হবে। আর তৃতীয়টা হচ্ছে অ্যামনেস্টি, এটা একটু কঠিন। এটা হচ্ছে, যারা ছোট ছোট অপরাধে যুক্ত ছিলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, তাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যামনেস্টির স্কোপ আছে কি-না সেটা দেখা। সব দেশেই এটা করা হয়।

উপদেষ্টা আরো বলেন, চতুর্থ ধাপ হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশন। যারা চরম দোষী আছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে, আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ক্ষতিপূরণ শুধু টাকার অঙ্কে না। ধরেন হয়তো জুলাই অবস্থানে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা অনেক মিটিং করেছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় ধাপে চিন্তা আছে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রিজিওনাল কনফারেন্স করা। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদেরকে সেখানে আনা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার গ্রুপ ও ছাত্র সমাজ- সবার মতামত নিয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা করা হবে।

 

সুত্র: বাসস

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

গুম বিষয়ক স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে: আইন উপদেষ্টা

আপডেট: ০৫:৩০:৩৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ফাইল ছবি

আগামী এক মাসের মধ্যে গুম প্রতিরোধ বিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

এই আইনের অধীনে গুম বিষয়ক একটি শক্তিশালী স্থায়ী কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি। আজ সচিবালয়ে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত কার্যনির্বাহী দলের (ওয়ার্কিং গ্রুপ) সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।

পরবর্তী সরকার আইনটি বাতিল করবে কি-না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি বা যেই সরকারে আসুক, তারা সবাই গুমের শিকার। তারা সবাই এ বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন আর বিএনপি-জামায়াত তো সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার ছিলেন।

আইন উপদেষ্টা আরো বলেন, বিগত সরকারের আমলে জাতিসংঘের গুম সম্পর্কিত ওয়ার্কিং গ্রুপ বারবার বাংলাদেশে আসতে চেয়েছিল। কিন্তু বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপকে বাংলাদেশে আসতে দেয়নি, তাদের চিঠির উত্তর পর্যন্ত দেয়নি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সরকারের একটা কমিটমেন্ট ছিল গুমের তদন্ত ও বিচার করা। জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ বাংলাদেশে এসেছে, আমরা তাদের সঙ্গে আজ মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বসার পর তারা আমাদের কিছু কার্যক্রমের প্রশংসা করেছেন। তারা গুম কমিশনের, তদন্ত কমিশনের প্রশংসা করেছেন, আমরা আইন প্রণয়নের যে উদ্যোগ নিয়েছি, সেটার প্রশংসা করেছেন। তারা গুম বিষয়ক কমিশনের মেয়াদ বাড়ানোর কথা বলেছেন।

ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, এটা দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়েছিল এবং সারা পৃথিবীতে সাড়া ফেলেছিল। এই কমিশন শ্রীলঙ্কা ও নেপালেও হয়েছে। কিন্তু অতটা সফল হয়নি।

তিনি বলেন, ‘ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশন কমিশনের চারটি অংশ থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে ট্রুথ সেকিং- আসলে কী হয়েছিল সেটা। সেটার কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি কিছুদিন আগে যে রিপোর্টটা প্রকাশ করলো, সেটা এটার একটা পার্ট। আমাদের ট্রাইব্যুনালে যে বিচার হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে, সেটা ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।’ আসিফ নজরুল আরো বলেন, আমাদের মোস্তফা সারওয়ার ফারুকী সাবেক গণভবনে যে জুলাই জাদুঘর করছেন, সেটাও ট্রুথ সেকিংয়ের একটা পার্ট।

তিনি বলেন, তারপর একটা পার্ট হচ্ছে মেমোরিয়ালাইজেশন, স্মৃতিটাকে ধরে রাখা। সেটা মি. ফারুকীর জাদুঘরের মাধ্যমে নিশ্চয়ই করা হবে। আর তৃতীয়টা হচ্ছে অ্যামনেস্টি, এটা একটু কঠিন। এটা হচ্ছে, যারা ছোট ছোট অপরাধে যুক্ত ছিলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অপরাধে যুক্ত ছিলেন না, তাদের ক্ষেত্রে কোনো অ্যামনেস্টির স্কোপ আছে কি-না সেটা দেখা। সব দেশেই এটা করা হয়।

উপদেষ্টা আরো বলেন, চতুর্থ ধাপ হচ্ছে, রিকনসিলিয়েশন। যারা চরম দোষী আছে, তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে, আমাদের একটা জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলা। আরেকটি হচ্ছে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেওয়া। ক্ষতিপূরণ শুধু টাকার অঙ্কে না। ধরেন হয়তো জুলাই অবস্থানে যাদের অঙ্গহানি হয়েছে, তাদের চাকরির ব্যবস্থা করা।’

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলাম। সেখানে আমরা অনেক মিটিং করেছিলাম। আমাদের দ্বিতীয় ধাপে চিন্তা আছে, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে রিজিওনাল কনফারেন্স করা। শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকার যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তাদেরকে সেখানে আনা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটি, মানবাধিকার গ্রুপ ও ছাত্র সমাজ- সবার মতামত নিয়ে কী করা যায়, সেটা নিয়ে চিন্তা করা হবে।

 

সুত্র: বাসস

শেয়ার করুন