০২:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

গোপালপুরে শতবর্ষী ভোরের কৃষি শ্রম বিক্রির হাট

রুবেল আহমেদ, গোপালপুর (টাঙ্গাইল)
  • আপডেট: ০৮:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
  • / 141

শতবর্ষ ধরে টাঙ্গাইলের গোপালপুর হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া বাজার ও ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা স্কুল মাঠ সংলগ্ন স্থানে বসে সবচেয়ে বড় শ্রম বিক্রির হাট – ছবি : ইউএনএ 

কবির ভাষায় সব সাধকের বড় সাধক, আমার দেশের চাষা। কিন্তু সেই চাষার সকল আশা ম্লান হয়ে যায় যখন তার উৎপাদিত ফসল সময়মতো ঘরে তুলে পারে না।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সময়মতো শ্রমিক না মিললে, নষ্ট হয় উৎপাদিত ফসল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবার রেকর্ড অনেক আগে থেকেই। পর্যাপ্ত কম্বাইন হারভেস্টার না থাকায় এখনো টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কৃষকদের নির্ভর করতে হয় মানুষের শ্রমের উপর। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট দেখা গেছে।

শ্রমিক সংকট সমাধানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকেই শুরু হয় শ্রম বিক্রির হাট। শতবর্ষ ধরে হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া বাজার ও ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা স্কুল মাঠ সংলগ্ন সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার বসে। এ ছাড়াও ঝাওয়াইল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এসে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়। গৃহস্থের প্রয়োজন অনুযায়ী এসব শ্রমিক ধান কাটার জন্য আশেপাশের গ্রামে নিয়ে যান। স্থানীয়রা তাদের কামলা বলে অবহিত করেন।

ভোর ৫টায় শুরু হয় এই শ্রম বাজার এবং শেষ হয় ৬টার মধ্যেই । একজন শ্রমিক ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন ৯০০-১১০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে।

স্থানীয়রা জানান, এসব কামলারা যমুনা নদীর চরাঞ্চল থেকে বেশি আসে। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা অঞ্চলের অনেক মানুষ আসেন শ্রম বিক্রির জন্য। এরা বিভিন্ন বাজার , স্কুলের বারান্দা ও খোলা মাঠে রাত কাটায়। সকাল ও দুপুরে গৃহস্থের বাড়িতে খায় । রাতে এদের জন্য খোলা বিশেষ হোটেল বা দলবদ্ধ হয়ে রান্না করে খায়।

উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রম বিক্রির জন্য আসা মুক্তার হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় কাজ কম থাকায় প্রতিবছর ধান কাটার মৌসুমে এখানে চলে আসি । এতে ভালো উপার্জন হয়। এ দিয়ে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারি।

কুমুল্লী গ্রামের কৃষক আরিফ মিয়া জানান, বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা নিলেও। সময়মতো ধান কাটার মেশিন পাওয়া যায় না । এছাড়া শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে নষ্ট কম হয় । তাই বেলুয়া বাজার থেকে কামলা নিয়ে কাজ করাই।

ঝাওয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শ্রমিকরা রাতে থাকার জন্য, বাজারের বিভিন্ন শেড ও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় অবস্থা নেন। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৪জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, পুরো উপজেলায় ৩০টি কম্বাইন হারভেষ্টার থাকলেও, সচল রয়েছে ২৬টি। এখানে শ্রমিক সংকট তেমন নেই। গোখাদ্যর খড় সংগ্রহের জন্য অনেক কৃষক কম্বাইন হারভেষ্টারের চাইতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

 

 

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

গোপালপুরে শতবর্ষী ভোরের কৃষি শ্রম বিক্রির হাট

আপডেট: ০৮:৪৮:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫

শতবর্ষ ধরে টাঙ্গাইলের গোপালপুর হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া বাজার ও ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা স্কুল মাঠ সংলগ্ন স্থানে বসে সবচেয়ে বড় শ্রম বিক্রির হাট – ছবি : ইউএনএ 

কবির ভাষায় সব সাধকের বড় সাধক, আমার দেশের চাষা। কিন্তু সেই চাষার সকল আশা ম্লান হয়ে যায় যখন তার উৎপাদিত ফসল সময়মতো ঘরে তুলে পারে না।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সময়মতো শ্রমিক না মিললে, নষ্ট হয় উৎপাদিত ফসল এবং ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষক। বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবার রেকর্ড অনেক আগে থেকেই। পর্যাপ্ত কম্বাইন হারভেস্টার না থাকায় এখনো টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার কৃষকদের নির্ভর করতে হয় মানুষের শ্রমের উপর। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ উপজেলায় বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে কিছুটা শ্রমিক সংকট দেখা গেছে।

শ্রমিক সংকট সমাধানে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ভোর থেকেই শুরু হয় শ্রম বিক্রির হাট। শতবর্ষ ধরে হেমনগর ইউনিয়নের বেলুয়া বাজার ও ঝাওয়াইল ইউনিয়নের কাহেতা স্কুল মাঠ সংলগ্ন সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার বসে। এ ছাড়াও ঝাওয়াইল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে এসে হাজার হাজার শ্রমিক জড়ো হয়। গৃহস্থের প্রয়োজন অনুযায়ী এসব শ্রমিক ধান কাটার জন্য আশেপাশের গ্রামে নিয়ে যান। স্থানীয়রা তাদের কামলা বলে অবহিত করেন।

ভোর ৫টায় শুরু হয় এই শ্রম বাজার এবং শেষ হয় ৬টার মধ্যেই । একজন শ্রমিক ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেন ৯০০-১১০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে।

স্থানীয়রা জানান, এসব কামলারা যমুনা নদীর চরাঞ্চল থেকে বেশি আসে। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা অঞ্চলের অনেক মানুষ আসেন শ্রম বিক্রির জন্য। এরা বিভিন্ন বাজার , স্কুলের বারান্দা ও খোলা মাঠে রাত কাটায়। সকাল ও দুপুরে গৃহস্থের বাড়িতে খায় । রাতে এদের জন্য খোলা বিশেষ হোটেল বা দলবদ্ধ হয়ে রান্না করে খায়।

উত্তরাঞ্চল থেকে শ্রম বিক্রির জন্য আসা মুক্তার হোসেন জানান, আমাদের এলাকায় কাজ কম থাকায় প্রতিবছর ধান কাটার মৌসুমে এখানে চলে আসি । এতে ভালো উপার্জন হয়। এ দিয়ে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারি।

কুমুল্লী গ্রামের কৃষক আরিফ মিয়া জানান, বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকা নিলেও। সময়মতো ধান কাটার মেশিন পাওয়া যায় না । এছাড়া শ্রমিক দিয়ে ধান কাটলে নষ্ট কম হয় । তাই বেলুয়া বাজার থেকে কামলা নিয়ে কাজ করাই।

ঝাওয়াইল ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান তালুকদার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শ্রমিকরা রাতে থাকার জন্য, বাজারের বিভিন্ন শেড ও ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দায় অবস্থা নেন। এদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৪জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগ করেছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, পুরো উপজেলায় ৩০টি কম্বাইন হারভেষ্টার থাকলেও, সচল রয়েছে ২৬টি। এখানে শ্রমিক সংকট তেমন নেই। গোখাদ্যর খড় সংগ্রহের জন্য অনেক কৃষক কম্বাইন হারভেষ্টারের চাইতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এ উপজেলায় চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।

 

 

শেয়ার করুন