০৪:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র্র রায়

সেলিমুজ্জামান
  • আপডেট: ১০:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪
  • / 55

বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ছবি : সংগৃহীত 

মারকিউরাস নাইট্রাইট এর আবিষ্কারক জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপতাক্ষ নদের তীরে রাডুলী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। যিনি পিসি রায় নামেই সর্বাধিক পরিচিত। তিনি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, দার্শনিক ও কবি।

পিসি রায় বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কিউরাস নাইট্রাইট’র আবিস্কারক। জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মীও ছিলেন এ বিজ্ঞানী। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী জমিদার হরিশচন্দ্র রায় ও ভুবনমোহিনী দেবীর তৃতীয় পুত্র।

১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন পি সি রায়। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন । সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৪ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তাঁর উদ্যোগে নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা হয়। পরে ১৯০১ সালে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। তাঁর ওই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ০৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন তিনি। বর্তমান প্রচলিত সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিতার নামে আর কে বি কে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী খুলনা টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠা করেন। বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজ। দেশে শিক্ষা বিস্তারে আজ বিশাল ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরও নিজের পিছনে পাঁচসিকি খরচ করতে রাজি নন, অথচ সারাজীবন ধরে যা রোজগার করেছেন তার সব খরচ করেছেন দেশবাসীর পিছনে। মাসিক আয় থেকে নিজের জন্য মাত্র ৪০ টাকা রেখে দান করে দিতেন সব। তিনি তার সকালের নাস্তার জন্য বরাদ্দ রাখতেন ১ পয়সা। ১ পয়সার বেশি নাস্তা হলে “তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন”। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাই দান করেছিলেন ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী।

সেলিমুজ্জামান
সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি)
জামিলা খাতুন লালবাগ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা
E-mail: selimuzzaman393@gmail.com

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার প্রফুল্ল চন্দ্র্র রায়

আপডেট: ১০:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ অগাস্ট ২০২৪

বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। ছবি : সংগৃহীত 

মারকিউরাস নাইট্রাইট এর আবিষ্কারক জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপতাক্ষ নদের তীরে রাডুলী গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন। যিনি পিসি রায় নামেই সর্বাধিক পরিচিত। তিনি ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন প্রখ্যাত বাঙালি রসায়নবিদ, বিজ্ঞানশিক্ষক, দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তা, দার্শনিক ও কবি।

পিসি রায় বেঙ্গল কেমিক্যালের প্রতিষ্ঠাতা এবং মার্কিউরাস নাইট্রাইট’র আবিস্কারক। জগদীশ চন্দ্র বসুর সহকর্মীও ছিলেন এ বিজ্ঞানী। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলী জমিদার হরিশচন্দ্র রায় ও ভুবনমোহিনী দেবীর তৃতীয় পুত্র।

১৮৭৮ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন পি সি রায়। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রতিষ্ঠিত মেট্রোপলিটন কলেজে (বর্তমান বিদ্যাসাগর কলেজ)। ১৮৮১ সালে সেখান থেকে এফএ পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগে পাশ করে প্রেসিডেন্সি কলেজে বিএ ক্লাসে ভর্তি হন । সেখান থেকে গিলক্রিস্ট বৃত্তি নিয়ে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যান। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বিএসসি পাশ করেন।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে ১৮৮৮ সালে প্রফুল্ল চন্দ্র রায় স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে প্রেসিডেন্সি কলেজে প্রায় ২৪ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অধ্যাপনাকালে তাঁর প্রিয় বিষয় রসায়ন নিয়ে নিত্য নতুন অনেক গবেষণাও চালিয়ে যান। তাঁর উদ্যোগে নিজস্ব গবেষণাগার থেকেই বেঙ্গল কেমিক্যাল কারখানা হয়। পরে ১৯০১ সালে তা কলকাতার মানিকতলায় ৪৫ একর জমিতে স্থানান্তরিত হয়। তখন এর নতুন নাম রাখা হয় বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস লিমিটেড। ১৮৯৫ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন। তাঁর ওই আবিষ্কার বিশ্বব্যাপী আলোড়ন তোলে। এটি তাঁর অন্যতম প্রধান আবিষ্কার। সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং ০৫টি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন তিনি। বর্তমান প্রচলিত সমবায়ের পুরোধা স্যার পিসি রায় ১৯০৯ সালে নিজ জন্মভূমিতে একটি কো-অপারেটিভ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি পিতার নামে আর কে বি কে হরিশ্চন্দ্র স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। এই জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী খুলনা টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠা করেন। বাগেরহাটে ১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন পি সি রায় কলেজ। দেশে শিক্ষা বিস্তারে আজ বিশাল ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

জমিদার পরিবারে জন্মগ্রহণ করার পরও নিজের পিছনে পাঁচসিকি খরচ করতে রাজি নন, অথচ সারাজীবন ধরে যা রোজগার করেছেন তার সব খরচ করেছেন দেশবাসীর পিছনে। মাসিক আয় থেকে নিজের জন্য মাত্র ৪০ টাকা রেখে দান করে দিতেন সব। তিনি তার সকালের নাস্তার জন্য বরাদ্দ রাখতেন ১ পয়সা। ১ পয়সার বেশি নাস্তা হলে “তেলেবেগুনে জ্বলে উঠতেন”। ১৯২৬ থেকে ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত এই দশ বছরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একাই দান করেছিলেন ১ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।

১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধি প্রদান করেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন ৮৩ বছর বয়সে ভারতের কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন এই বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী।

সেলিমুজ্জামান
সহকারি শিক্ষক (ইংরেজি)
জামিলা খাতুন লালবাগ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকা
E-mail: selimuzzaman393@gmail.com

শেয়ার করুন