০১:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫

জমে ওঠেনি বরিশালের কোরবানির পশুর হাট

ইউএনএ প্রতিনিধি, বরিশাল
  • আপডেট: ০৮:২৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • / 6

অধিকাংশ ক্রেতা শেষ মুহূর্তে পশু কেনেন জায়গা সংকট ও কম দামের আশায় -ছবি : ইউএনএ

ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলেও এখনো জমে ওঠেনি বরিশালের কোরবানির পশুর হাটগুলো। ঈদের মাত্র দুই দিন আগে পর্যন্তও ছিলো নগর ও গ্রামীণ হাটগুলোতে বেচাকেনার গতি খুবই ধীর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অধিকাংশ ক্রেতা শেষ মুহূর্তে পশু কেনেন জায়গা সংকট ও কম দামের আশায়। ফলে বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাটগুলো জমজমাট হওয়ার আশা করছেন বিক্রেতারা।

বরিশালের সবচেয়ে বড় চরমোনাই পশুর হাটে মঙ্গলবার থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে গরু ও ছাগলের উপস্থিতি থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিক্রেতাদের মতে, বরিশাল শহরসহ আশেপাশের এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঈদের এক বা দুই দিন আগে কোরবানির পশু কিনে থাকেন। অন্যদিকে শেষ সময়ে দাম কিছুটা কমে আসবে এই আশায় অপেক্ষা করছেন অনেক ক্রেতা।

চরমোনাই হাটে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা মোবারক হোসেন জানান, আমি ১৮টি গরু এনেছি। যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টার দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার পুরো দিনেও একটিও বিক্রি হয়নি। তবে তিনি আশা করছেন, শুক্রবারের মধ্যেই সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। চরমোনাই হাটের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো এর কম খাজনা, যেখানে দশ লাখ টাকার গরু কিনলেও খাজনা দিতে হয় মাত্র একশ টাকা আর ছাগলের ক্ষেত্রে খাজনা মাত্র পঞ্চাশ টাকা। এ কারণেই বরিশাল অঞ্চলের বহু ক্রেতা শেষ সময়ে চরমোনাই হাটেই ভিড় জমান।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩টি। তবে সম্ভাব্য কোরবানির সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার কম। এই হিসাবে কোরবানির পশুর প্রাপ্যতা থাকলেও উদ্বৃত্ত থেকে যেতে পারে প্রায় ৬০ হাজার পশু।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে বরিশালে কোরবানির পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার, যা ২০২১ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬১ হাজারে। ২০২২ সালে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে তা হয় প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজার। তবে ২০২৩ সালে আবার তা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৪৭-এ। চলতি বছর সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে আরও নিচে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর এবার অনেক বিত্তবান নেতার কোরবানিতে অনীহা দেখা দিতে পারে। ক্ষমতা হারানো ও পলাতক থাকার কারণে আগের মতো বড় গরু কেনার প্রবণতা এবার কম দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে বরিশাল অঞ্চলে এখনো বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বরিশালে বর্তমানে ২৬ লাখ ২০ হাজার গবাদিপশু, ২ লাখ ৮৬ হাজার মহিষ, ১১ লাখ ছাগল ও ৭৭ হাজার ভেড়া খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে পশুর ঘাটতির সম্ভাবনা না থাকলেও বাজারে পশুর দাম ও বেচাকেনা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এবার বরিশাল জেলায় প্রায় ৩০০ পশুর হাট বসেছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব হাটে বেচাকেনা চলবে। তবে বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার গো-খাদ্যের দাম, পরিবহন ব্যয় এবং শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির কারণে পশুর দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

জমে ওঠেনি বরিশালের কোরবানির পশুর হাট

আপডেট: ০৮:২৫:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

অধিকাংশ ক্রেতা শেষ মুহূর্তে পশু কেনেন জায়গা সংকট ও কম দামের আশায় -ছবি : ইউএনএ

ঈদুল আজহা ঘনিয়ে এলেও এখনো জমে ওঠেনি বরিশালের কোরবানির পশুর হাটগুলো। ঈদের মাত্র দুই দিন আগে পর্যন্তও ছিলো নগর ও গ্রামীণ হাটগুলোতে বেচাকেনার গতি খুবই ধীর। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অধিকাংশ ক্রেতা শেষ মুহূর্তে পশু কেনেন জায়গা সংকট ও কম দামের আশায়। ফলে বৃহস্পতি ও শুক্রবার হাটগুলো জমজমাট হওয়ার আশা করছেন বিক্রেতারা।

বরিশালের সবচেয়ে বড় চরমোনাই পশুর হাটে মঙ্গলবার থেকে বেচাকেনা শুরু হয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে গরু ও ছাগলের উপস্থিতি থাকলেও ক্রেতা সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিক্রেতাদের মতে, বরিশাল শহরসহ আশেপাশের এলাকার অধিকাংশ মানুষ ঈদের এক বা দুই দিন আগে কোরবানির পশু কিনে থাকেন। অন্যদিকে শেষ সময়ে দাম কিছুটা কমে আসবে এই আশায় অপেক্ষা করছেন অনেক ক্রেতা।

চরমোনাই হাটে কুষ্টিয়া থেকে গরু নিয়ে আসা বিক্রেতা মোবারক হোসেন জানান, আমি ১৮টি গরু এনেছি। যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টার দাম সাড়ে তিন লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে। কিন্তু মঙ্গলবার পুরো দিনেও একটিও বিক্রি হয়নি। তবে তিনি আশা করছেন, শুক্রবারের মধ্যেই সব গরু বিক্রি হয়ে যাবে। চরমোনাই হাটের জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হলো এর কম খাজনা, যেখানে দশ লাখ টাকার গরু কিনলেও খাজনা দিতে হয় মাত্র একশ টাকা আর ছাগলের ক্ষেত্রে খাজনা মাত্র পঞ্চাশ টাকা। এ কারণেই বরিশাল অঞ্চলের বহু ক্রেতা শেষ সময়ে চরমোনাই হাটেই ভিড় জমান।

এদিকে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বরিশাল বিভাগে এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩টি। তবে সম্ভাব্য কোরবানির সংখ্যা মাত্র ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৫২২টি যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৫ হাজার কম। এই হিসাবে কোরবানির পশুর প্রাপ্যতা থাকলেও উদ্বৃত্ত থেকে যেতে পারে প্রায় ৬০ হাজার পশু।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে বরিশালে কোরবানির পশুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯৫ হাজার, যা ২০২১ সালে হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ৬১ হাজারে। ২০২২ সালে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়ে তা হয় প্রায় ৪ লাখ ৯৯ হাজার। তবে ২০২৩ সালে আবার তা কমে দাঁড়ায় ৪ লাখ ২৪৭-এ। চলতি বছর সেই সংখ্যাও ছাড়িয়ে আরও নিচে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের পতনের পর এবার অনেক বিত্তবান নেতার কোরবানিতে অনীহা দেখা দিতে পারে। ক্ষমতা হারানো ও পলাতক থাকার কারণে আগের মতো বড় গরু কেনার প্রবণতা এবার কম দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক ব্যবসায়ী। এদিকে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে বরিশাল অঞ্চলে এখনো বিপুল সংখ্যক গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বরিশালে বর্তমানে ২৬ লাখ ২০ হাজার গবাদিপশু, ২ লাখ ৮৬ হাজার মহিষ, ১১ লাখ ছাগল ও ৭৭ হাজার ভেড়া খামার ও গৃহস্থ পর্যায়ে রয়েছে। ফলে পশুর ঘাটতির সম্ভাবনা না থাকলেও বাজারে পশুর দাম ও বেচাকেনা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এবার বরিশাল জেলায় প্রায় ৩০০ পশুর হাট বসেছে। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এসব হাটে বেচাকেনা চলবে। তবে বাজার পর্যবেক্ষকদের মতে, এবার গো-খাদ্যের দাম, পরিবহন ব্যয় এবং শ্রমিক মজুরি বৃদ্ধির কারণে পশুর দাম কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

শেয়ার করুন