জয়পুরহাটে বাঁশশিল্পীদের দুর্দিন

- আপডেট: ১২:৫৮:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
- / 1
গ্রামীণ শিল্প বাঁশের তৈরি সামগ্রী হারিয়ে ফেলেছে তার পুরনো গৌরব। জয়পুরহাটে মাহালী সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই পেশা এখন টিকে আছে শুধুই টিকে থাকার সংগ্রামে। ছবি : ইউএনএ
এক সময়ের ব্যস্ত গ্রামীণ শিল্প বাঁশের তৈরি সামগ্রী হারিয়ে ফেলেছে তার পুরনো গৌরব। জয়পুরহাটে মাহালী সম্প্রদায়ের শত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই পেশা এখন টিকে আছে শুধুই টিকে থাকার সংগ্রামে। ক্রমবর্ধমান ব্যয়, লাভের অভাব এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ঘাটতিতে অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা পরিবর্তন করছেন।
জয়পুরহাটের গ্রামীণ জনপদে এক সময় গৃহস্থালি কাজে বাঁশের তৈরি কুলা, চালুনি, চাঙারি, খইচালা, ঝুড়ি, খলই, গোমাই, ঝাঁটা এবং হাঁস-মুরগির খাঁচা ছিল অতি প্রয়োজনীয়। প্রতিটি বাড়িতে এসব সামগ্রীর ব্যবহার ছিল চোখে পড়ার মতো। সেই সময় মাহালী সম্প্রদায়ের শতাধিক পরিবার এই শিল্পে সম্পৃক্ত ছিল।
তবে সময়ের সঙ্গে পাল্টে গেছে জীবনযাত্রা ও চাহিদা। এখন বাঁশের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক এবং মেশিন-নির্ভর পণ্য। ফলে সংকুচিত হয়েছে বাঁশের সামগ্রির বাজার, কমেছে চাহিদা।
এর ওপর রয়েছে কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি। আগে যেখানে একটি বাঁশ ১২০ টাকায় পাওয়া যেত এখন তা কিনতে হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এদিকে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও বিক্রয়মূল্য বাড়েনি। ফলে প্রতিদিন খেটে তৈরি করা সামগ্রী বিক্রি করেও আয় হয় মাত্র দুই থেকে আড়াইশ টাকা। যা দিয়ে পরিবার চালানো কঠিন। তবুও কিছু পরিবার এখনও পূর্বপুরুষের এই পেশা ধরে রাখার চেষ্টা করছেন।
খঞ্জনপুর মাহালীপাড়ার কারিগর মোহন বাসকে বলেন, একটা বাঁশ আনতে একদিন লেগে যায়। তারপর সারাদিন খেটে তৈরি করি কুলা, চাঙারি। বিক্রি হয় মাত্র ৫০০ টাকায়। সংসার চালাতে কষ্ট হয়, তবুও বাপ-দাদার পেশা ছাড়তে পারছি না।
পঞ্চাশোর্ধ্ব কৃষ্ণ মুর্মু জানান, লাভ না থাকায় ছেলে-মেয়েরা আর এ কাজ করতে চায় না। আমরা তো অন্য কিছু শিখিনি। তাই বাধ্য হয়ে এটাই করে যাচ্ছি। কারিগর হাসদা বলেন, প্লাস্টিক পণ্যের কারণে আমাদের জিনিসের কদর নেই। এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে কোনোরকমে চলছি। ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে ঋণ পেলে হয়তো কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারতাম।
বাঁশের সামগ্রীর স্থানীয় ব্যবসায়ী এমদাদুল হক বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে এই ব্যবসা করছি। এখন আগের মতো বেচাকেনা হয় না। ধানের মৌসুমে কিছুটা বিক্রি হয়। বাকিটা সময় বসে থাকতে হয়।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জয়পুরহাটের উপ-ব্যবস্থাপক লিটন চন্দ্র ঘোষ বলেন, বাঁশের তৈরি সৌখিন সামগ্রীর এখনও বাজার আছে। বৈশাখি মেলায় এগুলোর ভালো চাহিদা ছিল। আমরা প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থাও রেখেছি। যারা আবেদন করবেন, তাদের সরকারিভাবে সব সুবিধা দেওয়া হবে।
প্রযুক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকা কঠিন হলেও জয়পুরহাটের মাহালী সম্প্রদায় এখনও বাঁশ শিল্পকে ধরে রাখার চেষ্টা করছে। তবে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কার্যকর পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।