০৪:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫

নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে : কবি ফরহাদ মজহার

মো. হারুন অর রশিদ, পঞ্চগড়
  • আপডেট: ১১:৩১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
  • / 3

শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চেতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খায় রাষ্ট্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার – ছবি: ইউএনএ

কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয়, স্বাধীনতার ঘোষণাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা। অতএব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণায় অবশ্যই বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল এবং নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা থাকতে হবে।

তাই ৭২ এর সংবিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র হতে হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করার জন্য। আর সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা মানেই হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিস্ট শক্তি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে পঞ্চগড়ের নাট্যসংগঠন ভূমিজের আয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চেতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খায় রাষ্ট্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন ।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে মোটেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা পুনর্বহাল বা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা। অতএব ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতিবাদী শক্তি এবং হিন্দুত্ববাদী দিল্লির ইসলাম নির্মূল রাজনীতির ধারক ও বাহকদের প্রপাগান্ডায় ভুলবেন না।

ফরহাদ মজহার বলেন, গত পাঁচ আগস্টে সেই সংগ্রামেই আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্পটুকু জয়ী হয়েছি পূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি। কারণ এই বিজয়টাতেই ঢুকিয়ে ফেলেছি আবার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। আমরা যে সরকার গঠন করলাম তা ওই পূরোনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। সেই আওয়ামীলীগের ভূতের নাম হচ্ছে সংবিধান। ৭২’র সংবিধান ।

এ সময় তিনি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ছাত্ররা যখন জুলাই ঘোষণা দিতে চেয়েছিল সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেননি ড. ইউনুস। এটা তিনি ঠিক করেননি। ফরহাদ মজহার অনুরোধ করে বলেন, দেরি হবার আগে যে ঘোষণা দেবার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে। কারণ পাঁচ আগস্ট গণসার্বভৌমত্ব কায়েম হয়েছে। গণসার্বভৌমত্বের নীতির অধীনে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে।

নতুন গঠনতন্ত্রে জনগণের পক্ষে তিনটা নীতি থাকবে। যে নীতিগুলোলে লংঘন করা যাবে না। যখনই এই নীতিগুলো হবে তখন রাষ্ট্র আর ফ্যাসিস্ট হতে পারবেনা।

নীতিগুলো হচ্ছে :
১. রাষ্ট্র এমন কোন আইন প্রণয়ন করতে পারবেনা যাতে ব্যক্তির অধিকার ব্যক্তির মর্যাাদা ক্ষুন্ন করা যায়।
২. রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না যার দ্বারা প্রাণ প্রকৃতি এবং পরিবেশ ধ্বংশ হয়।
৩. রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি প্রণয়ন করবেনা যাতে জীবন এবং জীবিকা ধ্বংস হয়ে যায়।

তরুণদের উদ্দেশ্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আপনারা মব থেকে বেরিয়ে আসুন। ট্যাগিং দেওয়া থেকে বেরিযে আসুন । ট্যাগিং বাদ দিয়ে সুস্থ আলোচনা করুন।

ইসকন নেতা চিন্ময় দাস বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের কথা বলার অধিকার আছে। আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি চাই তরুণরাও সনাতনীদের অধিকার রক্ষায় তাদের পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের পর জেলার তরুণ, নাট্য অভিনেতা সহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

এ সময় ভূমিজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি, পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আদম সুফি।

তার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার দেলওয়ার হোসেন। পরে ফরহাদ মজহারের সম্মানে গান পরিবেশন করা হয়।

 

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে : কবি ফরহাদ মজহার

আপডেট: ১১:৩১:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চেতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খায় রাষ্ট্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার – ছবি: ইউএনএ

কবি, চিন্তাবিদ ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেছেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিজয়, স্বাধীনতার ঘোষণাকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা। অতএব জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণায় অবশ্যই বাহাত্তর সালের সংবিধান বাতিল এবং নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়নের প্রক্রিয়া ও পদক্ষেপ গ্রহণের ঘোষণা থাকতে হবে।

তাই ৭২ এর সংবিধান অবশ্যই বাতিল করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করতে হবে। নতুন গঠনতন্ত্র হতে হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করার জন্য। আর সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার কায়েম করা মানেই হচ্ছে ফ্যাসিবাদ ফ্যাসিস্ট শক্তি, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম।

গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) রাতে পঞ্চগড় সরকারি অডিটোরিয়ামে পঞ্চগড়ের নাট্যসংগঠন ভূমিজের আয়োজনে শিক্ষা ও সংস্কৃতিক চেতনায় নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্খায় রাষ্ট্র সমাজের ভূমিকা শীর্ষক একক বক্তৃতা অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক হিসেবে এসব কথা বলেন ।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে মোটেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধিতা নয়। বরং তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল মানে ১০ এপ্রিলের স্বাধীনতার ঘোষণা পুনর্বহাল বা পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা। অতএব ফ্যাসিস্ট বাঙালি জাতিবাদী শক্তি এবং হিন্দুত্ববাদী দিল্লির ইসলাম নির্মূল রাজনীতির ধারক ও বাহকদের প্রপাগান্ডায় ভুলবেন না।

ফরহাদ মজহার বলেন, গত পাঁচ আগস্টে সেই সংগ্রামেই আমরা জয়ী হলাম। তবে অল্পটুকু জয়ী হয়েছি পূর্ণ বিজয় এখনো আসেনি। কারণ এই বিজয়টাতেই ঢুকিয়ে ফেলেছি আবার ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। আমরা যে সরকার গঠন করলাম তা ওই পূরোনো ফ্যাসিস্ট সংবিধানের অধীনে। ফলে আওয়ামী লীগ কিন্তু ক্ষমতায়। সেই আওয়ামীলীগের ভূতের নাম হচ্ছে সংবিধান। ৭২’র সংবিধান ।

এ সময় তিনি ড. ইউনুসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ছাত্ররা যখন জুলাই ঘোষণা দিতে চেয়েছিল সেই নতুন ঘোষণা দিতে দেননি ড. ইউনুস। এটা তিনি ঠিক করেননি। ফরহাদ মজহার অনুরোধ করে বলেন, দেরি হবার আগে যে ঘোষণা দেবার প্রতিশ্রুতি আমাদের দিয়েছেন সেই প্রতিশ্রুতি আমাদের দিতে হবে। কারণ পাঁচ আগস্ট গণসার্বভৌমত্ব কায়েম হয়েছে। গণসার্বভৌমত্বের নীতির অধীনে নতুন গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হবে।

নতুন গঠনতন্ত্রে জনগণের পক্ষে তিনটা নীতি থাকবে। যে নীতিগুলোলে লংঘন করা যাবে না। যখনই এই নীতিগুলো হবে তখন রাষ্ট্র আর ফ্যাসিস্ট হতে পারবেনা।

নীতিগুলো হচ্ছে :
১. রাষ্ট্র এমন কোন আইন প্রণয়ন করতে পারবেনা যাতে ব্যক্তির অধিকার ব্যক্তির মর্যাাদা ক্ষুন্ন করা যায়।
২. রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি প্রণয়ন করতে পারবে না যার দ্বারা প্রাণ প্রকৃতি এবং পরিবেশ ধ্বংশ হয়।
৩. রাষ্ট্র এমন কোন আইন বা নীতি প্রণয়ন করবেনা যাতে জীবন এবং জীবিকা ধ্বংস হয়ে যায়।

তরুণদের উদ্দেশ্যে ফরহাদ মজহার বলেন, আপনারা মব থেকে বেরিয়ে আসুন। ট্যাগিং দেওয়া থেকে বেরিযে আসুন । ট্যাগিং বাদ দিয়ে সুস্থ আলোচনা করুন।

ইসকন নেতা চিন্ময় দাস বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের কথা বলার অধিকার আছে। আমি আমার শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে তাদের পাশে থাকতে চাই। আমি চাই তরুণরাও সনাতনীদের অধিকার রক্ষায় তাদের পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে ফরহাদ মজহারের বক্তব্যের পর জেলার তরুণ, নাট্য অভিনেতা সহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষের বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।

এ সময় ভূমিজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক সরকার হায়দারের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন লেখক ও গবেষক মাহবুব সিদ্দিকি, পঞ্চগড় আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. আদম সুফি।

তার লেখা কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিকার দেলওয়ার হোসেন। পরে ফরহাদ মজহারের সম্মানে গান পরিবেশন করা হয়।

 

শেয়ার করুন