প্রস্তাবিত বাজেটে দাম কমবে যেসব পণ্যে

- আপডেট: ০৩:২৯:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / 7
ফাইল ফটো
২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রস্তাব সোমবার (২ জুন) উপস্থাপন করা হবে। এদিন বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বেতার ও টেলিভিশনের মধ্যমে এই বাজেট ঘোষণা করবেন। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি ভোক্তার স্বার্থ রক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) বাড়ানো বা কমানোর প্রস্তাব আসতে পারে যার ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। আবার কিছু পণ্যের দাম কমে আসতে পারে।
প্রস্তাবিত বাজেটে এলএনজি আমদানিতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার হতে যাচ্ছে। বর্তমানে এলএনজি আমদানির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ অগ্রিম কর দিতে হয়। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রির সময় ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও ২ শতাংশ উৎসে কর দিতে হয়। এছাড়া বাইরেও এলএনজি মার্জিনের বিল পরিশোধের সময় গ্যাস বিতরণ সংস্থার কাছ থেকে ৫ শতাংশ উৎসে কর কাটা হয়।
জ্বালানি তেলেও শুল্ক কমছে : ক্রুড ফুয়েল অয়েল বা অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ওপর শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হতে পারে এবং অন্যান্য জ্বালানি আমদানিতে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ কমানো হতে পারে। এর ফলে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমতে পারে।
এছাড়া স্থানীয় শিল্প যেমন টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইট উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমানোর প্রস্তাব থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেট।
চামড়া শিল্পে শুল্ক ছাড় : আসছে ঈদুল আজহায় কোরবানি পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করণে বড় উপকরণ হচ্ছে বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ। এছাড়া সারা বছরই সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পে এমন উপকরণ সাশ্রয়ী মূল্যে রাখা জরুরি। সেই বিবেচনায় চামড়া শিল্পের জন্য কিছু রাসায়নিক উপাদানে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঋণপত্রে কমছে উৎসে কর : নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উৎসে কর রাজস্ব আদায়ে কিংবা পণ্যের দামের ক্ষেত্রে বড় কোনো প্রভাব রাখে না। তবুও এক শ্রেণির ব্যবসায়ী এই উৎসে করের অজুহাতে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে উৎসে কর বা সোর্স ট্যাক্স কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
আগামী বাজেটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে স্থানীয় ঋণপত্রের কমিশনের উৎসে কর কমিয়ে অর্ধেক করা হচ্ছে। বর্তমানে ১ শতাংশ উৎসে কর রয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে রয়েছে ধান, গম, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, মটরশুঁটি, ছোলা, মসুর ডাল, আদা, হলুদ, শুকনো মরিচ, ডাল, ভুট্টা, মোটা আটা, আটা, লবণ, চিনি, ভোজ্যতেল, কালো গোলমরিচ, দারুচিনি, বাদাম, লবঙ্গ, খেজুর, ক্যাসিয়া পাতা, কম্পিউটার ও কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ এবং সব ধরনের ফল। সেক্ষেত্রে এসব পণ্যের দাম কমতে পারে। যা সাধারণ মানুষের জন্য সুখবর বলা যায়।
শুল্ক কমছে চিনি আমদানিতে : চিনির বাজার দর সহনীয় ও স্থিতিশীল রাখতে বিভিন্ন সময়েই সরকার অপরিশোধিত ও পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান শুল্ক-কর কমানোর উদ্যোগ নেয়। এবারে প্রস্তাবিত বাজেটে চিনির বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক প্রতি টন ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৪ হাজার টাকা করার প্রস্তাব রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সয়াবিন ও কাগজ শিল্পের কাঁচামালে শুল্ক হ্রাস : দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠায় ও স্থানীয় শিল্প বিকাশে সহায়ক হিসেবে সয়াবিন মিল কিংবা কাগজশিল্পের আমদানিকৃত কাঁচামাল বা উপকরণের ওপর শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। পাশাপাশি থাকছে নিউট্রালাইজড সয়াবিন তেলের শুল্ক রেয়াতের প্রস্তাব। অন্যদিকে নির্মাণ শিল্পের উপকরণ স্থানীয় শিরিশ কাগজ শিল্পের প্রয়োজনীয় ফেনোলিক রেজিন ও স্যান্ডপেপার জাতীয় কাঁচামালের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব থাকছে বলে জানা গেছে।
কম দামে মিলবে সংবাদপত্রের নিউজপ্রিন্ট : সংবাদপত্রের শিল্পে ব্যবহৃত নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক কমানোর প্রস্তাব ছিল নোয়াবসহ সংশ্লিষ্ট সংগঠনের। সেই প্রস্তাবে সারা দিতে ও দেশীয় গণমাধ্যমকে আরও সহায়তা দিতে নিউজপ্রিন্ট আমদানির কাস্টমস শুল্ক ৫ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করার প্রস্তাব বিবেচনা থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
ভূমি নিবন্ধনে কর কমছে : এনবিআর সূত্রে জানা যায়, ভূমি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আসন্ন বাজেটে কিছুটা ছাড় দেওয়া হচ্ছে। কাঠার পরিবর্তে শতাংশে নিবন্ধন ফি ও কর নির্ধারণ করা হবে। ভূমি নিবন্ধনে অগ্রিম কর কিছুটা কমানো হতে পারে। এর ফলে ভূমি বা সম্পত্তি নিবন্ধনে কর কমবে না বলে মনে করেন কর্মকর্তারা। গত অর্থবছর ভূমি নিবন্ধন থেকে এনবিআর প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার কর পেয়েছে।
সাশ্রয়ে মূল্যে মিলবে ক্রিকেট ব্যাট : দেশের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। ক্রিকেট ব্যাট এখন দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। ব্যাট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানির চেষ্টা করছে। এছাড়া ব্যাট কম দামে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চায় সরকার। সে উদ্দেশ্যে ব্যাট তৈরি কাঠ আমদানির ওপর শুল্ক কমতে পারে। ব্যাট তৈরির কাঠ আমদানিতে মোট শুল্কহার রয়েছে ৩৭ শতাংশ। যা কমিয়ে আগামী বাজেটে ২৬ শতাংশ করা হতে পারে।
দেশি সফটওয়্যার উন্নয়নে বাড়তি সুবিধা : দেশের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্সাররা সফটওয়্যার তৈরি করতে বিদেশি অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকেন। পাশাপাশি দেশে উৎপাদিত সফটওয়্যার রপ্তানিও হয়। রপ্তানিকে আরও উৎসাহ দিতে বিদেশ থেকে আমদানি করা অপারেটিং সিস্টেম, ডেটাবেজ, ডেভেলপমেন্ট টুলস, সিকিউরিটি সফটওয়্যারে আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে।
বিদেশি জুস : নন-অ্যালকোহলিক জুস আমদানির ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাবও থাকতে পারে প্রস্তাবিত বাজেটে। ফলে বিদেশি জুস মিলতে পারে তুলনামূলক কম দামে।
মাটি ও পাতার তৈরি পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার : মাটির ও পাতার তৈরি তৈজসপত্রের ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব আসছে। বর্তমানে এসব পণ্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট রয়েছে। যা বাজেটে প্রত্যাহারের প্রস্তাব রয়েছে বলে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে।
পিভিসি পাইপ ও কপার ওয়্যার : পিভিসি পাইপ দেশে উৎপাদন করা হলেও এর উপকরণ আমদানি করতে হয়। যেকোনো অবকাঠামোগত কাজেও পিভিসি পাইপের ব্যবহার রয়েছে। ওই পাইপের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপকরণের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। একই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কপার ওয়্যারেও। এই পণ্যের উপকরণ আমদানিতে কাস্টমস শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে প্রস্তাবিত বাজেটে।
এছাড়া পরিবহনের টায়ার, টিউব, ব্রেক সু, ব্রেক প্যাড, মার্বেল ও গ্রানাইটের কাঁচামাল এবং যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর শুল্ক কমার প্রস্তাব থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। যার ইতিবাচক প্রভাব ভোক্তার পর্যায়ে দামে পড়তে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।