বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক কোর্সের সমাপনী

- আপডেট: ০১:২৮:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
- / 2
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে শনিবার (৩১ মে) বিকালে গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক কোর্স-২০২৫ এর সমাপনী ও সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় – ছবি : ইউএনএ
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে শনিবার (৩১ মে) বিকালে গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক কোর্স-২০২৫ এর সমাপনী ও সনদপত্র প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট গবেষক এবং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম এবং প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ। শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক এবং ইউএনডিপির ন্যাশনাল পলিসি এনালিষ্ট ইশতিয়াক বারী।
শিক্ষকদের বক্তব্য শেষে কোর্স সম্পর্কে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে নিজস্ব মতামত জানান ব্যাংক এশিয়া পিএলসি এর চীফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসার (সিআইএসও) মো. বোরহানুল ইসলাম; জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস এর প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট নিনাদ আফরিন জোহরা। শিক্ষার্থীদের ফলাফল উপস্থাপনে সহযোগিতা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপপরিষদ সদস্য সালেহা বানু, আফরুজা আরমান এবং ইসরাত জাহান।
সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন,সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়েছে একটি অসাম্প্রদায়িক, যুক্তিবাদী, গণতান্ত্রিক এবং সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। এটা নারীদের একার পক্ষে সম্ভব নয়। সমাজ কে পরিবর্তন করতে সকলের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সম্মিলিত অংশগ্রহণ প্রয়োজন। নারী আন্দোলনকে সমৃদ্ধ করতে তথ্য উপাত্তের বেশ অভাব আছে। এজন্য সীমিত পরিসরে সংগঠন গবেষণা করে থাকে।
এবারের গবেষণা কোর্সটির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নতুন নতুন গবেষণার যে ক্ষেত্র গুলো চিহ্নিত হয়েছে তা সংগঠনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণে সহায়তা করবে। সংগঠন মনে করে নারীর অধিকার আদায়ে নিজের ক্ষমতা অর্জন জরুরি। এক্ষেত্রে গবেষণা লব্ধ জ্ঞান চর্চা করতে হবে, জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে এবং জ্ঞান অন্বেষণ প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশিষ্ট গবেষক এবং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ অব বাংলাদেশ এর প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা বলেন, গবেষণা পদ্ধতি বিষয়ক কোর্স একটি প্রাকটিক্যাল কোর্স। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানগুলোকে একত্র করে চর্চার দিকটি অব্যাহত রাখতে হয় উচ্চতর শিক্ষা অর্জনে।
একটিভিস্টদের জন্যও জ্ঞানচর্চার প্রয়োজন আছে। নারীর অধিকার আদায়ের মত চেতনাভিত্তিক যেকোনো কাজ করার জন্যও গবেষণা আবশ্যক। গবেষণায় প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, কি করে আমি চিন্তা অগ্রসর করবো সেই চিন্তা আমাকেই করতে হবে এটি গবেষণার অন্যতম মূল নীতি, এটি প্রযুক্তি বা চ্যাট জিপিটি নির্ধারণ করবে না।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোর্স পরিচালক সীমা মোসলেম বলেন, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ অধিকার ভিক্তিক গণনারী সংগঠন হিসেবে সামগ্রিক ভাবে নারীর অধিকারকে দেখে এবং বহুমুখী কাজ পরিচালনা করে থাকে।
সংগঠন বহুমুখী কাজ পরিচালনার অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। নারীর প্রতি গৎ বাধা দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে, সমাজকে জেন্ডার সংবেদনশীল করে গড়ে তুলতে, সকল প্রজন্মকে নারী আন্দোলনে যুক্ত করতে এবং নারী আন্দোলনকে নারীর অধিকার আদায়ে সামাজিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে এবছরে গবেষণা কোর্স পদ্ধতি চালু করা হয়েছে।
প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ তার বক্তব্যে, কোর্স থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ অবস্থানে থেকে প্রয়োগের আহ্বান জানান। সংগঠন মনে করে তরুণ প্রজন্ম সময়ের সাথে সাথে যেকোনো কাজে এগিয়ে যাবেন
শিক্ষকদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, দেড় সপ্তাহের গবেষণাকোর্সটির মাধ্যমে ফেমিনিষ্ট মেথোডলজির ক্ষেত্রে গবেষণার প্রাথমিক ধাপগুলো সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের ধারণা দেয়া হয়েছে। এই ধাপগুলো অনুসরণ করে আরো গভীরতর জ্ঞান অর্জনে গবেষণা সম্পর্কিত কাজ চালু রাখতে হবে শিক্ষার্থীদের।
নারী আন্দোলনকর্মীরা মনে করেন ক্ষমতা অসীম। নারীকে তার ভেতর থেকে ক্ষমতাকে উপলব্ধি করতে হবে। তিনি এসময় কোর্সের সময়সীমা দেড় সপ্তাহের পরিবর্তে আরো বৃদ্ধি করার জন্যও আহ্বান জানান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. তানিয়া হক বলেন, বাংলাদেশে প্রেক্ষাপটে নারীর ক্ষমতায়নের দিকটি এখনো দুর্বল। এখনো নলেজ গ্যাপ আছে। গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ নেই। আমরা এখনো বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
জেন্ডার এখনো নারীর ইস্যূ হিসেবে দেখা হয়। ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় পরিবর্তনে কোর্স থেকে প্রাপ্ত জ্ঞানকে জেন্ডার লেন্সের পাশাপাশি ইন্টারসেকশনাল লেন্স থেকে প্রয়োগের আহ্বান জানান তিনি
ইউএনডিপি এর ন্যাশনাল পলিসি এনালিষ্ট ইশতিয়াক বারী বলেন, কোর্সটি শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রক্রিয়া ছিলো। আমাদের সাংস্কৃতিক কাঠামোায় নারী-পুুরুষ নির্বিশেষে অধিকারের ক্ষেত্রে প্রশ্ন করার ক্ষমতা সীমিত হয়ে যায়, গবেষণা প্রক্রিয়া এই প্রশ্ন করার পদ্ধতিকে ধাপে ধাপে উন্মুক্ত করে দেয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে কোর্সের ২১ জন শিক্ষার্থীসহ বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেত্রীবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী এবং কর্মকর্তাসহ প্রায় ৫০ জন উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার উপ পরিষদ সদস্য শাহজাদী শামীমা আফজালী।