শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা
বিএমইউ’র চিকিৎসকসহ ৩৪ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির সিদ্ধান্ত

- আপডেট: ০৩:১৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২ জুন ২০২৫
- / 5
ফাইল ফটো
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ওপর হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ৩৪ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সিন্ডিকেট সূত্র বলছে, গত বছরের ৪ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে তাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর নৃশংস হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের সামনে এক ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টার সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে।
জানা গেছে, চাকরিচ্যুতদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বেশ কয়েকজন নেতাসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিতরা রয়েছেন। এসব শিক্ষক, চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে চার ধরনের অপরাধের প্রমাণ পেয়েছে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে কেবিন ব্লকের সামনে একজন ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টার সাথে জড়িত ছিলেন ১৫ জন, ছাত্র-জনতার সাথে মারামারিতে জড়িত ছিলেন প্রায় শতাধিক শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী। নেপথ্যে থেকে ওই ঘটনার নেতৃত্বদান ও পরিকল্পনাকারী ছিলেন ২৩ জন।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, গত শনিবার (৩১ মে) অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত সিন্ডিকেট সভায় ৩৪ জনকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে ‘ক’ ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যাচেষ্টায় সরাসরি জড়িতদের এবং ‘খ’ ক্যাটাগরিতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেবিন ব্লকের সামনে এক শিক্ষার্থীকে প্রাণনাশের উদ্দেশে যেভাবে নির্যাতন করা হয়, তার ভিডিও ফুটেজ ও সাক্ষ্য সুস্পষ্ট। ওই ঘটনায় ‘ক’ ক্যাটাগরির অন্তর্ভুক্ত ১৫ জন চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা সরাসরি অংশ নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষতা ও শৃঙ্খলা অধ্যাদেশের ৫(ঘ), ৫(ঝ) এবং ৫(ট) ধারায় আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে পদচ্যুত করার সুপারিশ করেছে কমিটি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটিই সবচেয়ে বড় সংখ্যক চিকিৎসক-কর্মকর্তার একযোগে চাকরিচ্যুতির সুপারিশ।
বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও সিন্ডিকেট সদস্য জানান, এখন পর্যন্ত দুই দফায় ৩৪ জন কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এখানেই তদন্ত থেমে নেই। তার ভাষ্য অনুযায়ী, মূলত তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৮ জনের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তদন্তাধীন চারজনকে আপাতত তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তাদের বিষয়ে আরও যাচাই চলছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় দফার সিদ্ধান্তে যেসব চিকিৎসক চাকরিচ্যুত হয়েছেন, তাদের ভূমিকা ছিল অনেক বেশি উদ্বেগজনক।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তদন্ত এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখন নজর দিচ্ছে অন্যান্য সহায়ক কর্মী যেমন : নার্স, ওয়ার্ডবয়, মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও প্রশাসনিক কর্মচারীদের ভূমিকার দিকেও। হয়তো আগামী সিন্ডিকেট সভায় সেই তালিকাও আসবে। তখন তাদের বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতার প্রসঙ্গে এ সিন্ডিকেট সদস্য বলেন, হামলাটি ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। আমরা দেখতে পেয়েছি কিছু চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে এতে জড়িত ছিলেন। এমন ঘটনায় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নয়, পুরো স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর একটা কালো দাগ লেগেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত এবং তদন্ত প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, এই মুহূর্তে কিছু বলতে চাই না। তদন্ত কমিটি স্বচ্ছভাবে কাজ করেছে, কোনো রাজনৈতিক প্রভাব বা ব্যক্তিগত বিবেচনা এখানে কাজ করেনি। আমরা তদন্ত কমিটির সুপারিশ সিন্ডিকেটে আলোচনা করেছি এবং সেখানকার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রশাসনিকভাবে কার্যক্রম শুরু করেছি।