১২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
কোরবানিতে জবাই হবে না

বিশালদেহী ষাঁড় তুফানের সিমেন সংগ্রহের দাবি

ইউএনএ প্রতিনিধি, নোয়াখালী
  • আপডেট: ০৫:২৬:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 4

হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালদেহী ষাঁড় তুফান -ছবি : ইউএনএ

মাত্র ২৫ মাস বয়স আর ওজনও ২৫ মণ! অগণিত মানুষের কৌতুহল আর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালদেহী ষাঁড় তুফানের প্রতি। কোরবানির হাটে তোলার আগেই আলোচনার ঝড় ওঠলেও মজার ব্যাপার হলো এবারের কোরবানিতে জবাই হচ্ছে না ‘তুফান’। কিন্তু কেন?

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ২৪ বছর ধরে নোয়াখালী সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের করমূল্যা এলাকায় ডাক্তার এগ্রো নামের খামার পরিচালনা করে আসছেন জেলার চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ। এই খামারেই নোয়াখালীর তুফানের বসবাস। শখের বশে ৫ মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়টি কিনে নিজ খামারে এনেছেন তিনি। খামারে আনার পর ষাড় গরুটির দাম্ভিকতা আর মেজাজ দেখে নাম রাখা হয় ‘তুফান’। দিচ্ছেন রুটিন মাপিক খাবার, গোসল ও বিশ্রাম। নিজ সন্তানের মতো আদর-যত্নে গড়ে ওঠা বিশালদেহী ষাঁড় গরু ‘তুফান’ এখন অনেক শান্ত। বর্তমানে তার বয়স ২৫ মাস। ওজনও দাঁড়িয়েছে ২৫ মণে। প্রতিমাসে ১ মণের অধিক ওজন লাভ করে ‘তুফান’। শুধু আকারে নয়, আচরণ আর খাদ্য-তালিকায়ও এই ষাঁড় যেন একেবারে ভিআইপি।

খামারের মালিক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ ও কেয়ারটেকাররা বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পরম আদর-যত্নে প্রতিদিন প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি আপেল, কমলা মাল্টাসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান ও দানাদার খাবার দেওয়া হয় তুফানকে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার একশত টাকার খাবার খায় তুফান। লম্বায় সাড়ে ৯ ফুট ও ৬ ফুট উঁচু হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ‘তুফান’ ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের। কোরবানির উদ্দেশ্যে পালন করা হলেও শারীরিক গঠন দেখে এখন আর কোরবানিতে জবাইয়ের জন্য বিক্রি করবেন না তুফানকে। তাদের দাবি, তুফান দেশের সম্পদ। তাই সরকারি অর্থায়ণে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর অথবা বড় কোন খামারী ক্রয় করে তুফানের সিমেন সংগ্রহের মাধ্যমে দেশে বড় জাতের গো-সম্পদের প্রজনন বৃদ্ধি করলে গো-সম্পদ আরো সমৃদ্ধ হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিশাল আকৃতির গরু তেমন আমাদের গ্রামে দেখা যায় না। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এই তুফানকে দেখতে আসছেন। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা তথা পুরো নোয়াখালীতে তুফানের নাম ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হয়, এত অল্প বয়সে বিশাল আকৃতির এই গরু সারা বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যাবে না। বিশাল আকৃতির ষাড় তুফানকে একনজর দেখতে ও সেলফি তুলতে ডাক্তার এগ্রোতে প্রতিনিয়তই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

জেলা শহর মাইজদী থেকে ষাড় গরুটি দেখতে যাওয়া দর্শনার্থী জহির উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ষাড় গরু খুব একটা দেখা যায় না। যা মাত্র ২৪-২৫ মাসে ২৫ মণ ওজন হয়ে গেছে। এটা আরো ২-৩ বছর পালন করলে ৪০-৪৫ মণ ওজন হয়ে যাবে। সরকারের উচিত পর্যাপ্ত বয়সে এই ষাড়ের সিমেন সংগ্রহ করে বড় জাতের গো-সম্পদ বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো। এতে অধিক লাভের আশায় তরুণরা উদ্যোগক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে।

সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলীমা ফেরদৌসী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটাই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তাই আমরা ষাড় গরুটির সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান করছি। খামারের মালিকের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ষাড় গরুটি ক্রয় করে প্রজনন বৃদ্ধির কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা অতিদ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু উৎপাদন সম্ভব। তাই তুফানের মতো বড় জাতের ষাড় গরু সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে দেশে গো-সম্পদ প্রজনন সমৃদ্ধ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন নোয়াখালীর খামারীরা।

 

 

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কোরবানিতে জবাই হবে না

বিশালদেহী ষাঁড় তুফানের সিমেন সংগ্রহের দাবি

আপডেট: ০৫:২৬:১২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালদেহী ষাঁড় তুফান -ছবি : ইউএনএ

মাত্র ২৫ মাস বয়স আর ওজনও ২৫ মণ! অগণিত মানুষের কৌতুহল আর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের বিশালদেহী ষাঁড় তুফানের প্রতি। কোরবানির হাটে তোলার আগেই আলোচনার ঝড় ওঠলেও মজার ব্যাপার হলো এবারের কোরবানিতে জবাই হচ্ছে না ‘তুফান’। কিন্তু কেন?

সরেজমিনে জানা গেছে, প্রায় ২৪ বছর ধরে নোয়াখালী সদরের এওজবালিয়া ইউনিয়নের করমূল্যা এলাকায় ডাক্তার এগ্রো নামের খামার পরিচালনা করে আসছেন জেলার চাটখিল উপজেলার বাসিন্দা ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ। এই খামারেই নোয়াখালীর তুফানের বসবাস। শখের বশে ৫ মাস আগে চট্টগ্রাম থেকে হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাড়টি কিনে নিজ খামারে এনেছেন তিনি। খামারে আনার পর ষাড় গরুটির দাম্ভিকতা আর মেজাজ দেখে নাম রাখা হয় ‘তুফান’। দিচ্ছেন রুটিন মাপিক খাবার, গোসল ও বিশ্রাম। নিজ সন্তানের মতো আদর-যত্নে গড়ে ওঠা বিশালদেহী ষাঁড় গরু ‘তুফান’ এখন অনেক শান্ত। বর্তমানে তার বয়স ২৫ মাস। ওজনও দাঁড়িয়েছে ২৫ মণে। প্রতিমাসে ১ মণের অধিক ওজন লাভ করে ‘তুফান’। শুধু আকারে নয়, আচরণ আর খাদ্য-তালিকায়ও এই ষাঁড় যেন একেবারে ভিআইপি।

খামারের মালিক ডাক্তার আবুল কালাম আজাদ ও কেয়ারটেকাররা বলেন, আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পরম আদর-যত্নে প্রতিদিন প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি আপেল, কমলা মাল্টাসহ নানা পুষ্টিকর উপাদান ও দানাদার খাবার দেওয়া হয় তুফানকে। প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার একশত টাকার খাবার খায় তুফান। লম্বায় সাড়ে ৯ ফুট ও ৬ ফুট উঁচু হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ‘তুফান’ ইতোমধ্যে নজর কেড়েছে দর্শনার্থীদের। কোরবানির উদ্দেশ্যে পালন করা হলেও শারীরিক গঠন দেখে এখন আর কোরবানিতে জবাইয়ের জন্য বিক্রি করবেন না তুফানকে। তাদের দাবি, তুফান দেশের সম্পদ। তাই সরকারি অর্থায়ণে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর অথবা বড় কোন খামারী ক্রয় করে তুফানের সিমেন সংগ্রহের মাধ্যমে দেশে বড় জাতের গো-সম্পদের প্রজনন বৃদ্ধি করলে গো-সম্পদ আরো সমৃদ্ধ হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বিশাল আকৃতির গরু তেমন আমাদের গ্রামে দেখা যায় না। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ এই তুফানকে দেখতে আসছেন। ইতোমধ্যে সদর উপজেলা তথা পুরো নোয়াখালীতে তুফানের নাম ছড়িয়ে পড়ছে। মনে হয়, এত অল্প বয়সে বিশাল আকৃতির এই গরু সারা বাংলাদেশে কোথাও পাওয়া যাবে না। বিশাল আকৃতির ষাড় তুফানকে একনজর দেখতে ও সেলফি তুলতে ডাক্তার এগ্রোতে প্রতিনিয়তই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

জেলা শহর মাইজদী থেকে ষাড় গরুটি দেখতে যাওয়া দর্শনার্থী জহির উদ্দিন বলেন, এ ধরনের ষাড় গরু খুব একটা দেখা যায় না। যা মাত্র ২৪-২৫ মাসে ২৫ মণ ওজন হয়ে গেছে। এটা আরো ২-৩ বছর পালন করলে ৪০-৪৫ মণ ওজন হয়ে যাবে। সরকারের উচিত পর্যাপ্ত বয়সে এই ষাড়ের সিমেন সংগ্রহ করে বড় জাতের গো-সম্পদ বৃদ্ধিতে কাজে লাগানো। এতে অধিক লাভের আশায় তরুণরা উদ্যোগক্তা হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে।

সদর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. তাসলীমা ফেরদৌসী বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটাই জেলার সবচেয়ে বড় গরু। তাই আমরা ষাড় গরুটির সার্বিক বিষয়ে খোঁজ-খবর রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা, ওষুধ ও পরামর্শ প্রদান করছি। খামারের মালিকের প্রস্তাবনার প্রেক্ষিতে সরকারিভাবে ষাড় গরুটি ক্রয় করে প্রজনন বৃদ্ধির কাজে লাগানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন দ্বারা অতিদ্রুত এবং ব্যাপক ভিত্তিতে উন্নত জাতের গবাদিপশু উৎপাদন সম্ভব। তাই তুফানের মতো বড় জাতের ষাড় গরু সরকারিভাবে সংরক্ষণ করে দেশে গো-সম্পদ প্রজনন সমৃদ্ধ করা হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন নোয়াখালীর খামারীরা।

 

 

শেয়ার করুন