বৃহস্পতিবার ঢাকা-টোকিও পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

- আপডেট: ০৩:১৬:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
- / 4
ছবি : ফাইল ফটো
পূর্বনির্ধারিত সময়ে হচ্ছে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। বৃহস্পতিবার টোকিওতে এ বৈঠক হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অবনতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে জাপানের। অন্যদিকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি নিয়েও চিন্তিত দেশটি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে দিল্লি-বেইজিং নিয়ে ঢাকার মনোভাব জানার চেষ্টা করে আসছে টোকিও।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের আলোচনা, ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) বৈঠকে বসছে।
আলোচনার টেবিলে থাকার কথা রয়েছে ভারত-চীন প্রসঙ্গ। টোকিওর পক্ষ থেকে দিল্লি-বেইজিংয়ের সঙ্গে ঢাকার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে জানতে চাওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।
ঢাকা-বেইজিংয়ের নির্ভরযোগ্য কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, এফওসির বৈঠকটি দুই ভাগে বিভক্ত থাকবে। বৈঠকের দ্বিতীয় ভাগে আঞ্চলিক ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। সেখানে জাপানের আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে বাংলাদেশ তার মনোভাব তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে আলোচনায় উঠে আসার কথা রয়েছে ভারত প্রসঙ্গ। অর্থাৎ ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক কেমন সেটি টোকিওকে জানানো হবে।
ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের বক্তব্য শোনার পর জাপান তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে জোর দেয় তার জন্য অনুরোধ আসতে পারে জাপানের দিক থেকে। এছাড়া জাপানের বিগ বি নিয়ে আলোচনা হবে। তাতে প্রকল্পটি সামনে এগিয়ে নেওয়া এবং ভারত যুক্ত হতে চাইলে তার জন্য সুযোগ রাখার বিষয়টি আসতে পারে।
জাপানের পক্ষ থেকে চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। এক্ষেত্রে আলোচনার মূল ইস্যু হতে পারে চীন প্রসঙ্গ। বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি, বিশেষ করে বাংলাদেশ চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া নিয়ে যে ধারণা রয়েছে তার বাস্তব চিত্র জানতে চাইতে পারে টোকিও। এছাড়া টোকিওর আলোচনায় আসতে পারে তিস্তা প্রকল্প, মাতারবাড়ি ও বে অফ বেঙ্গলে চীনকে কতটুকু অগ্রাধিকার দিচ্ছে ঢাকা।
সরকারের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে জাপানের কনসার্ন আছে। বাংলাদেশ চীনের দিকে বেশি ঝুঁকছে কিনা আবার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বর্তমান অবস্থান জানতে চাইতে পারে জাপান।
আমাদের অবস্থান স্পষ্ট, আমরা একজনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আরেকজনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করব বিষয়টি এমন নয়। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতি এবং স্বার্থ বিবেচনায় সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখব। চীন যেমন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ভারতও। কাউকে আলাদা চোখে দেখার সুযোগ নেই। হয়তো অনেক সময় যে কারও সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয় আবার খারাপ হয়। আবার দুই পক্ষের সম্মতি থাকলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানও করা যায়।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এফওসি বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিনের পরিবর্তে ঢাকার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) ড. মো. নজরুল ইসলাম। অন্যদিকে জাপানের প্রতিনিধিত্ব করবেন দেশটির সিনিয়র ডেপুটি ফরেন মিনিস্টার আকাহোরি তাকেশি। প্রথম পর্বের আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ফ্রি অ্যান্ড ওপেন ইন্দো-প্যাসিফিক, অর্থনৈতিক এবং সেক্টরাল সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা, মানুষে মানুষে যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং মিয়ানমার ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ।
দ্বিতীয় পর্বে আঞ্চলিক ইস্যুতে দক্ষিণ এশিয়া এবং চীনসহ পূর্ব এশিয়া নিয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক প্রসঙ্গ এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা।
সরকারের আরেক কর্মকর্তা জানান, আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয় থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস চলতি মাসের শেষের দিকে জাপান সফর করবেন। এফওসি বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে আলোচনা হবে, এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিইচি বলেন, আশা করছি ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপান সফর করবেন। এই সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক বাড়বে। জাপান বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বাণিজ্যিক অংশীদার। উভয়পক্ষ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী।
আগামী ২৯ মে টোকিওতে নিক্কেই ফোরামের সম্মেলনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এরপর তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। মূলত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতি হিসেবে হচ্ছে বৃহস্পতিবারের এফওসি। গত এপ্রিলের শেষদিকে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের ষষ্ঠ বৈঠক ও প্রধান উপদেষ্টার জাপান সফর নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠক হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, আঞ্চলিক বলয় বাড়াতে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নিয়ে সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী জাপান। এ বিষয়ে গত বছর পঞ্চম এফওসিতে একমত হয়েছে বাংলাদেশও। এবারের এফওসিতে দু’দেশের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সেসঙ্গে ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস), প্রতিরক্ষা, মেরিটাইম সিকিউরিটি, বাণিজ্য, বিনিয়াগ, কৃষি, কানেকটিভিটি, অবকাঠামোগত সহযোগিতার মতো বিষয়ও থাকবে। এ ছাড়া মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করবে দু’দেশ।
বৈঠকে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যু বিষয়ে আলোচ্যসূচিতে এ অঞ্চলে জাপানের সহযোগী ও প্রতিযোগী দেশগুলোর পরিস্থিতি, রাশিয়া-ইউক্রেন, ফিলিস্তনি-ইসরায়েল, নিরস্ত্রীকরণ ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সহযোগিতা এবং জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে সমর্থনের মতো বিষয় রয়েছে। বৈঠকে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার যেসব চুক্তি হয়েছিল সেগুলোর হালনাগাদ বিষয়ে আলোচনা হবে। এ ছাড়া জাপানের সঙ্গে অর্থনৈতিক সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী বাংলাদেশ। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও ঢাকা আগের মতো এ বিষয়ে জোর দেবে।
প্রসঙ্গত, গত বছরের জুনে ঢাকায় বাংলাদেশ জাপানের মধ্যে এফওসি হয়। এটি হবে ষষ্ঠ এফওসি।