১১:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবেছে জনপদ

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ১২:৩৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪
  • / 22

ফাইল ফটো 

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে দেশের কয়েক জেলার লোকালয়। ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজারের বাসিন্দারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে ফুলগাজী ও পরশুরামের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইতে থাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। পানি বাড়তে শুরু করেছে নোয়াখালী অঞ্চলেও। তিন পার্বত্য জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলেও নদনদীর পানি বেড়ে তলিয়েছে অনেক নিম্নাঞ্চল।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বলছে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশসংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখানে বন্যা ও ভূমিধসে আটজন নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ আছেন দু’জন। বন্যার কারণে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে। ফলে গোমতী ও ফেনী নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে বন্যা। এ ছাড়া সিকিমে পাহাড়ধসে ভেঙে গেছে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাঁধ। ফলে পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ অস্বাভাবিক বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এতেই তিস্তার পানি নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলায় জেলায়।

দু’দিন ধরে ঢাকার চেয়ে দেশের অন্য অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে বেশি। আজ (২২ আগস্ট) বৃহস্পতিবারও একই পরিস্থিতি থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় যে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বইছে। শক্তিশালী হয়ে উঠছে মৌসুমি বায়ু। সব মিলিয়ে বৃষ্টি বেড়েছে। দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে উপকূলসহ দেশের নদীবন্দরগুলোতেও ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আবার সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করছে। এ কারণে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী এক সপ্তাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ, সিলেটসহ উপকূলীয় এলাকার নদীবন্দরে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফেনী-পরশুরাম সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনও পানিবন্দি। গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ডুবেছে জনপদ

আপডেট: ১২:৩৯:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০২৪

ফাইল ফটো 

ভারী বর্ষণ আর ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ডুবে গেছে দেশের কয়েক জেলার লোকালয়। ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, মৌলভীবাজারের বাসিন্দারা পড়েছেন সবচেয়ে বিপদে। পানিবন্দি হয়ে আছেন এসব জেলার লাখ লাখ মানুষ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তবর্তী নদীবেষ্টিত মৌলভীবাজারের কুশিয়ারা, মনু, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে।

ভারত থেকে আসা ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে ফুলগাজী ও পরশুরামের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। কুমিল্লায় গোমতী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইতে থাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। পানি বাড়তে শুরু করেছে নোয়াখালী অঞ্চলেও। তিন পার্বত্য জেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও দক্ষিণাঞ্চলেও নদনদীর পানি বেড়ে তলিয়েছে অনেক নিম্নাঞ্চল।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর বলছে, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশসংলগ্ন ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় ত্রিপুরা রাজ্যে। সেখানে বন্যা ও ভূমিধসে আটজন নিহত হয়েছেন, নিখোঁজ আছেন দু’জন। বন্যার কারণে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার ডুম্বুর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাঁধ খুলে দিয়েছে। ফলে গোমতী ও ফেনী নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে বন্যা। এ ছাড়া সিকিমে পাহাড়ধসে ভেঙে গেছে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাঁধ। ফলে পাশের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের গজলডোবা বাঁধে পানির চাপ অস্বাভাবিক বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গে বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আর এতেই তিস্তার পানি নিয়ে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলায় জেলায়।

দু’দিন ধরে ঢাকার চেয়ে দেশের অন্য অঞ্চলে বৃষ্টি হয়েছে বেশি। আজ (২২ আগস্ট) বৃহস্পতিবারও একই পরিস্থিতি থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় যে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস আছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র বলছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যে দেশের মধ্যাঞ্চল ও আশপাশ এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে দেশের বেশির ভাগ এলাকা কালো মেঘে ঢেকে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় দমকা হাওয়া বইছে। শক্তিশালী হয়ে উঠছে মৌসুমি বায়ু। সব মিলিয়ে বৃষ্টি বেড়েছে। দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার কারণে উপকূলসহ দেশের নদীবন্দরগুলোতেও ঝোড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। আবার সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি দেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থান করছে। এ কারণে আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীসহ অন্য অঞ্চলে বৃষ্টি আরও বাড়তে পারে। এ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামী এক সপ্তাহ। আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে ময়মনসিংহ, সিলেটসহ উপকূলীয় এলাকার নদীবন্দরে ১ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

ফেনীর পরশুরাম ও ফুলগাজীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরশুরামে বন্যার পানিতে ভেসে একজন নিখোঁজ রয়েছেন। ফেনী-পরশুরাম সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কয়েকটি ডিঙি নৌকায় লোকজনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ মানুষ এখনও পানিবন্দি। গ্রামীণ সব সড়ক ও ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও খামারের মাছ। দুর্গতদের উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা কাজ করছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে সেনাবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।

শেয়ার করুন