১১:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই : সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

ইউএনএ প্রতিবেদক
  • আপডেট: ০৯:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫
  • / 4

রংপুরে সারজিস আলমের সঙ্গে কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম -ছবি : সংগৃহীত 

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী।

শনিবার (৩১ মে) দিনগত মধ্যরাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খবর পেয়ে ওইসময় সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।

এরআগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সেনপাড়া ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সময় জিএম কাদের বাড়িতেই ছিলেন।

এ ঘটনায় শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। খবর পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে ছুটে যান এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। পরে রাত ২টার দিকে তারা সেখানে থেকে চলে যান। এসময় স্থানীয় বিএনপির নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১টা, ২টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাদের যে কোনো টাইমে দিনের বেলা যেন অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।

এর আগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের আলাপচারিতায় সারজিস আলম বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা ভালো আছে এটার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। রংপুরে এতদিন তো এতকিছু দেখা যায়নি। বর্তমান দেশে সক্রিয় যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের মতামত নিয়ে দেখবেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের একটা বি টিম। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও নিষিদ্ধ হবার কথা ছিল। কেন হয়নি এটা সরকারকে আমরা জিজ্ঞেস করবো। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও জিজ্ঞেস করবো। আমরা মনে করি, কেন এসব ঘটনা ঘটছে তার কারণ আগে খুঁজতে হবে।

পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রংপুরে জিএম কাদেরের আসা, মিটিং করা এবং তাদের জাতীয় পার্টির যে সাবেক মেয়র মোস্তফা, ওনাকে মেয়র পদে পুনর্বহাল করা নিয়ে বিক্ষোভ করা এসব সামগ্রিক বিষয়ে এখানে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যেটা রংপুরে আমরা এর আগে দেখিনি, আগামীতেও প্রত্যাশা করি না।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির বর্তমান নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই করেছে। আমরা দেখেছি বিএনপি এবং জামায়াতের ভাইদের সঙ্গে যখন মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, হয়রানি হয়েছে, তখন জাতীয় পার্টি ক্ষমতার সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে ডামিবিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে যে কাজ করেছে, একই কাজ বি টিম হিসেবে জাতীয় পার্টিও করেছে। আওয়ামী লীগের যে কনসিকিউয়েন্স হয়েছে এবং আগামীতে আরও হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি, একই কনসিকিউয়েন্স জাতীয় পার্টির হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো, জাতীয় পার্টি এখনো নিষিদ্ধ না কেন? জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ মিলে কীভাবে তারা এতবড় মিছিল করতে পারে? জাতীয় পার্টির এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যারা মিছিল করেছে সেখানে কারা হামলা করেছে তা আগে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে হবে। মামলা হলে আগে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে হবে। গ্রেফতার করলে প্রথম তাদেরকে (জাতীয় পার্টি) গ্রেফতার করতে হবে।
এরপরে কেউ যদি তাদের জায়গা থেকে সার্বিক দিক থেকে যত রকমের প্রভাবক, অনুঘটক দিয়ে একটা ঘটনা উসকে দেয়ার চেষ্টা করে, এরকম দুই একটা বাইক পুড়ে যায়, সেটার দায় কখনো এদেরকে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি) করা যেতে পারে না।’

এরআগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই : সারজিসকে সেনা কর্মকর্তা

আপডেট: ০৯:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১ জুন ২০২৫

রংপুরে সারজিস আলমের সঙ্গে কথা বলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম -ছবি : সংগৃহীত 

জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিএনপির নেতাদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সেনাবাহিনী।

শনিবার (৩১ মে) দিনগত মধ্যরাতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। খবর পেয়ে ওইসময় সেখানে ছুটে যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। তিনি সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের সঙ্গে কথা বলেন।

এসময় ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম সারজিস আলমকে বলেন, শরীরে যতক্ষণ রক্ত আছে, উই আর নট গোয়িং টু প্রমোট এনিওয়ান যে দেশের বিরুদ্ধে করে। আপাতত স্ট্যান্ডিং হলো, যে জনগণের অসুবিধা করে ভ্যান্ডালিজম (নাশকতা) করে, মবের নামে যে আগুন লাগায়, ঘরদোর ভাঙচুর করে, এই পার্টিটাকে বার্তা দেওয়া যে, না, এইটা করার সুযোগ নেই এখন।

এরআগে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাত পৌনে ৯টার দিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের রংপুর সেনপাড়া ‘দ্য স্কাই ভিউ’ বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরপরই পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। তাদের মধ্যে কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। ঘটনার সময় জিএম কাদের বাড়িতেই ছিলেন।

এ ঘটনায় শনিবার দিনগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর পায়রা চত্বর মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা ও মহানগর কমিটির আহ্বায়ক ইমরান আহমেদ ও ইমতিয়াজ আহমেদ ইমতিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন সেনাবাহিনীর ৭২ পদাতিক ব্রিগেডের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুম। খবর পেয়ে বৃষ্টির মধ্যেই সেখানে ছুটে যান এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। পরে রাত ২টার দিকে তারা সেখানে থেকে চলে যান। এসময় স্থানীয় বিএনপির নেতাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলাপ শেষে সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, তদন্তের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন হোক, বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির যে কাউকে হোক জিজ্ঞাসাবাদ করা যেতে পারে। অবশ্যই প্রয়োজন। আমরা মনে করি রাত ১টা, ২টা, ওই সময়টাই দৃষ্টিকটু দেখায়। আমরা প্রত্যাশা করি, তাদের যে কোনো টাইমে দিনের বেলা যেন অফিস আওয়ারে ডেকে নেওয়া হয়। সবাই প্রস্তুত থাকবে এ বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য।

এর আগে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হুমায়ুন কাইয়ুমের আলাপচারিতায় সারজিস আলম বলেন, অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যতটা ভালো আছে এটার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটা গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। রংপুরে এতদিন তো এতকিছু দেখা যায়নি। বর্তমান দেশে সক্রিয় যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তাদের মতামত নিয়ে দেখবেন, জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের একটা বি টিম। আওয়ামী লীগের মতো তাদেরও নিষিদ্ধ হবার কথা ছিল। কেন হয়নি এটা সরকারকে আমরা জিজ্ঞেস করবো। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকেও জিজ্ঞেস করবো। আমরা মনে করি, কেন এসব ঘটনা ঘটছে তার কারণ আগে খুঁজতে হবে।

পরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, রংপুরে জিএম কাদেরের আসা, মিটিং করা এবং তাদের জাতীয় পার্টির যে সাবেক মেয়র মোস্তফা, ওনাকে মেয়র পদে পুনর্বহাল করা নিয়ে বিক্ষোভ করা এসব সামগ্রিক বিষয়ে এখানে একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যেটা রংপুরে আমরা এর আগে দেখিনি, আগামীতেও প্রত্যাশা করি না।

২০২৪ সালের অভ্যুত্থানে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপির বর্তমান নেতৃবৃন্দ ফ্যাসিস্টবিরোধী লড়াই করেছে। আমরা দেখেছি বিএনপি এবং জামায়াতের ভাইদের সঙ্গে যখন মিথ্যা মামলা, গুম-খুন, হয়রানি হয়েছে, তখন জাতীয় পার্টি ক্ষমতার সঙ্গে নেগোসিয়েশন করে ডামিবিরোধী দল সেজে আওয়ামী লীগকে সরকারি দলের বৈধতা দিয়েছে।

আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে যে কাজ করেছে, একই কাজ বি টিম হিসেবে জাতীয় পার্টিও করেছে। আওয়ামী লীগের যে কনসিকিউয়েন্স হয়েছে এবং আগামীতে আরও হবে বলে আমরা প্রত্যাশা করি, একই কনসিকিউয়েন্স জাতীয় পার্টির হওয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হলো, জাতীয় পার্টি এখনো নিষিদ্ধ না কেন? জাতীয় পার্টি এবং আওয়ামী লীগ মিলে কীভাবে তারা এতবড় মিছিল করতে পারে? জাতীয় পার্টির এই অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যারা মিছিল করেছে সেখানে কারা হামলা করেছে তা আগে তদন্ত বা অনুসন্ধান করতে হবে। মামলা হলে আগে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে হবে। গ্রেফতার করলে প্রথম তাদেরকে (জাতীয় পার্টি) গ্রেফতার করতে হবে।
এরপরে কেউ যদি তাদের জায়গা থেকে সার্বিক দিক থেকে যত রকমের প্রভাবক, অনুঘটক দিয়ে একটা ঘটনা উসকে দেয়ার চেষ্টা করে, এরকম দুই একটা বাইক পুড়ে যায়, সেটার দায় কখনো এদেরকে (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও এনসিপি) করা যেতে পারে না।’

এরআগে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানায় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও কো-চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ জাতীয় পার্টি ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের ১৮ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অভিযোগ দেন জাতীয় নাগরিক পার্টির রংপুর জেলা সংগঠক আলমগীর রহমান নয়ন।

শেয়ার করুন