মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ রাত পবিত্র শবে-বরাত

- আপডেট: ০৫:৪৫:০৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / 41
আজ পবিত্র শবে বরাত।
শবে বরাত শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। “শব” অর্থ রাত এবং “বরাত” অর্থ ভাগ্য, বন্টন বা নির্ধারিত। শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত অর্থ্যাৎ ১৪ তারিখ দিবাগত রাত হলো পবিত্র শবে বরাত । শবে বরাত এর অর্থ ‘ভাগ্যের রাত’। ‘শবে বরাত’-এর আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারকাত’। হাদিস শরিফে যাকে ‘নিসফ শাবান’ বা শাবান মাসের মধ্য দিবসের রজনী বলা হয়েছে। মুসলিম উম্মাহর কাছে এ রাত “শবে বরাত” বা “লাইলাতুল বরাত” বা “ভাগ্যের রজনি” হিসেবে পরিচিত।
মুসলিম উম্মাহর ইবাদতের জন্য যেসব রাত বিখ্যাত, তারমধ্যে পাঁচটি রাত বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে সকল রাতে মুসলিম উম্মাহ নিজেদের পরকালের মুক্তির আসায় এবং মহান আল্লাহর সান্নীদ্ধ পাওয়ার আসাই ইবাদত করে সেই বিশেষ পাঁচটি রাত হলো: দুই ঈদের রাত্রি (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা), শবে মেরাজ (রজব মাসের ২৭ তারিখ), শবে বরাত(১৫ সাবান) ও শবে কদর (রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাত)।
শবে বরাতের ফজিলত-
১। আলি ইবনে আবি তালিব (রাখা.) থেকে বর্ণত, রাসুল (স.) বলেন ‘যখন অর্ধ-শাবানের রাত তোমাদের সামনে আসে তখন তোমরা নামাজ আদায় কর এবং পরবর্তি দিন রোজা রেখো। আল্লাহ তায়ালা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে অবতরণ করেন। এর পর তিনি এই বলে ডাকতে থাকেন, “তোমাদের মধ্যে কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। তোমাদের মধ্যে কোনো রিজিক অন্বেষণ কারি আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। তোমাদের মধ্যে কোনো বিপদগ্রস্থ আছে কি? আমি তাকে বিপদ দুর করে দেব।” ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকে।(ইবনে মাজাহ ১৩৮৮)
২। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন নবী কারীম (স.) এরশাদ করেছেন “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ-সাবানের রাতে সৃষ্টির প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে মাফ করে দেন।” (সহীহ ইবনে হিব্বান-৫৬৬৫)
৩। হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এত দীর্ঘ সেজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো, তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; আমি তখন উঠে তার পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল; তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়িশা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে? আমি উত্তরে বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.)! আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না? নবীজি (সা.) বললেন, তুমি কি জানো এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলই ভালো জানেন। তখন নবীজি (সা.) বললেন, এটা হলো অর্ধশাবানের রাত; এ রাতে আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮২)।
৪। এই রাতে মহান আল্লাহ মুক্তি ও মাগফিরাতের দুয়ার খুলে দেন। হাদিসে আলি ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন মধ্য শাবানের রাত আসে, তখন তোমরা এ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ো এবং দিনে রোজা রাখো।
৫। হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিগফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুণাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি শরিফ, হাদিস: ৭৩৯)।
৬। কেননা এদিন সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর নিকটতম আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন, কে আছো আমার নিকট ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। কে আছো রিজিক প্রার্থী? আমি তাকে রিজিক দেব। কে আছো রোগমুক্তি চাও? আমি তাকে সুস্থতা দেব। কে আছো এই এই চাও?’ এভাবে ফজরের সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ, ১৬২)
শবে বরাতের আমল-
১। নফল ইবাদত: শবে বরাতের রাতের সব আমলই নফল। সে ক্ষত্রে নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, তওবা, ইস্তিগফার ও ক্ষমাপ্রার্থনা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে রাত কাটানো। আর নফল আমল নিজ নিজ ঘরে একাগ্রচিত্তে আদায় করাই উত্তম।
২। রোজা আদায় করা: আলি ইবনে আবি তালিব (রা.) ইবনে মাজার এর ১৩৮৮ নং হদিস থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন অর্ধ শাবানের রাত তোমাদের সম্মুখে আসে, তখন তোমরা তাতে কিয়াম তথা নামাজ আদায় করো এবং পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখো।’
৩। মৃতদের জন্য দোয়া করা: আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি এক রাতে রাসুলুল্লাহ (সা.) কে কাছে না পেয়ে খোঁজ করতে বের হলাম। হঠাৎ দেখলাম, তিনি “জান্নাতুল বাকি” কবরস্থানে আছেন। তিনি বললেন, ‘(হে আয়েশা) তোমার কি এ আশঙ্কা হয় যে আল্লাহ ও তার রাসুল তোমার ওপর অবিচার করবেন?’ আমি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমার ধারণা হলো, আপনি অন্য কোনো স্ত্রীর কাছে গিয়েছেন।’ তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে দুনিয়ার কাছের আকাশে আসেন। তারপর কালব গোত্রের বকরি পালের লোমের চেয়েও বেশি সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন।’ (তিরমিজি: ৭৩৯; ইবনে মাজাহ: ১৩৮৯)
বিভিন্ন হাদীসের আলোকে এটাই প্রতিয়মান হয় যে, শবে বরাতের রজনিতে রাসুল (স.) রাত জেগে ইবাদত করেছেন এবং বিভিন্ন আমলে মশগুলছিলেন। শবে বরাতে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নাম ও গুণগান। শবে বরাতে মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর নাম ও গুণগান এর মাধ্যমে গুনাহ হতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে থাকেন।