এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ : কলমবিরতি কর্মসূচি চলমান থাকবে
রাজস্ব খাতে অচলাবস্থা নিরসনে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক সোমবার

- আপডেট: ০২:২৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / 3
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের বৈঠক সোমবার -ফাইল ফটো
রাজস্ব খাতে অচলাবস্থা নিরসনে সোমবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। এ বৈঠকে আরও কয়েকজন উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
তবে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের আন্দোলনকারী কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারের তরফ থেকে তারা আলোচনার প্রস্তাব পাননি। তাই এনবিআর বিলুপ্তি অধ্যাদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত কলমবিরতি কর্মসূচি চলমান থাকবে।
এদিকে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী রোববার সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত কলমবিরতি পালন করে কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের বিক্ষুব্ধ কর্মকর্তারা। পরে বেলা সাড়ে ৩টায় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে। এতে ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চল, ভ্যাট কমিশনারেট ও কাস্টমস হাউজের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অংশীজনদের মতামত গ্রহণ না করে, এনবিআর সংস্কার কমিটির সুপারিশ প্রকাশ না করে এবং তা আলোচনা-পর্যালোচনার সুযোগ না দিয়ে, সবাইকে অন্ধকারে রেখে নজিরবিহীন দ্রুততা ও গোপনীয়তার সঙ্গে এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। একতরফা অধ্যাদেশ জারি করায় এ সংস্কারের উদ্দেশ্য ও কার্যকারিতা নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী মহল ও থিংকট্যাংকসহ বিভিন্ন মহল প্রশ্ন তুলেছে।
তিনি আরও বলেন, এনবিআর বিলুপ্ত নয় বরং এনবিআরকে স্বতন্ত্র ও শক্তিশালী এজেন্সি হিসাবে রেখেই রাজস্ব সংস্কার করতে হবে। এনবিআরে গত ৪৫ বছর ধরে ফুলটাইম চেয়ারম্যান নেই। অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের যিনি সচিব তিনি সচিবালয়ে দায়িত্বের পাশাপাশি এনবিআরের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও এই দুইটা ভিন্ন পদ ও সম্পূর্ণ ভিন্ন পোর্টফোলিও। এই সচিবরা ভিন্ন ক্যাডার থেকে আসেন। যাদের আয়কর, ভ্যাট এবং কাস্টমসসহ অন্যান্য রাজস্ব আইন ও পদ্ধতি সম্পর্কে অভিজ্ঞতা এবং পেশাগত জ্ঞান থাকে না যা এনবিআরের কাজকর্মকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে।
কাস্টমসের উপকমিশনার সানজিদা খানম বলেন, এনবিআর বিলুপ্তির অধ্যাদেশ বাতিলের বিষয়ে উচ্চ আদালতে এক আইনজীবী শনিবার রিট করেছেন। এই রিটের সঙ্গে ঐক্য পরিষদের কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এই রিটের অগ্রগতি বিষয়ে ঐক্য পরিষদ নজর রাখছে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমের বরাতে আমরা জানতে পেরেছি অর্থ উপদেষ্টা এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ৩টায় আলোচনায় বসবেন। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সুনির্দষ্টি প্রস্তাব আমরা এখন পর্যন্ত পাইনি। ফলে আমাদের কর্মসূচি সোমবার একইভাবে সকাল ৯টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলবে।
এদিকে কাস্টমস ও আয়করের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, সরকারের তরফ থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এজন্য সরকারের নীতিনির্ধারক মহল আশা করেছিল, আলোচনার প্রতি সমর্থন জানিয়ে কলমবিরতি কর্মসূচি প্রত্যাহার করবেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সেটি না করে কলমবিরতি অব্যাহত রেখেছেন। যা অনভিপ্রেত।
সরকারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, শুরু থেকে একটি পক্ষ বিষয়টিকে পুঁজি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছে। যারা দাবি আদায়ের চেয়ে সরকারের রাজস্ব খাতকে বেকায়দায় ফেলে মহল বিশেষকে খুশি করতে চায়। এর মধ্যে ৩৩, ৩৪, ৩৬, ৩৮ ও ৪০ ব্যাচের গুটিকয়েক কর্মকর্তা জড়িত। যারা ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে তাদের ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
সূত্রটি আরও জানায়, এর বাইরে দুই ক্যাডারের বেশির ভাগ কর্মকর্তা মনে করেন, অধ্যাদেশের মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া কঠিন কিছু নয়। তারা বলেন, বেশির ভাগ কর্মকর্তা পেশাদারত্বের সঙ্গে চাকরি করছেন। তারা সবার উপরে দেশকে ভালোবাসেন। তবে দলবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা গণ-অভ্যুত্থানকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেননি শুধু তারাই এটাকে বড় ইস্যু বানিয়ে পরিস্থিতি ভিন্ন দিকে নেওয়ার অপচেষ্টা করছেন।
সূত্রটি দাবি করেন, ড. ইউনূসের সরকার কর ও কাস্টমস ক্যাডারের সব যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। আলোচনার টেবিলে এর প্রমাণ মিলবে।