০৮:২৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ জুন ২০২৫
রাজনীতিতে নতুন মোড়

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক শুক্রবার

ইউএনএ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১২:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫
  • / 8

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশবাসীর কাছে প্রায় আচমকা এই ঘোষণা পৌঁছে যায় যে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঈদের আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলমান। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর জন্য এই ঘোষণা অস্বস্তির। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভ।

‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই’, তাদের এই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বলে দলগুলো মনে করে। বিএনপি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ’ ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিক জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। সার্বিক এই অবস্থায় কী হতে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আবার কারো মত, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছে—এই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘জনমনে একটা আশঙ্কা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। এটা থাকা স্বাভাবিক। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আমাদের জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী, সেটিও ওই মিটিংয়ের পর বোঝা যাবে।’

নির্বাচন যত দেরিতে হবে বিএনপির জন্য ততই ক্ষতি। ডিসেম্বর পার হয়ে জানুয়ারি এলেই আরো নতুন ভোটার। কয়েকটি দলের ধারণা, তারা নতুন ভোটারদের সমর্থন পাবে। এ জন্য ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন—এই দাবি থেকে বিএনপির সরে আসাটা দলীয়ভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতারা হয়তো ভাবছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দেরি হলেই তাদের লাভ। এনসিপি আরেকটু সময় চাইবে, যাতে তারা তাদের দলটা গোছাতে পারে। শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কিছুটা মুখোমুখি অবস্থায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সরকারের অধীনে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন হবে কি না, বিএনপি এটা বিশ্বাস করে কি না—এটার ওপর আসলে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি বিশ্বাস না করে, পরিস্থিতি যদি জটিল হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের পর একটা কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজন হবে। সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলোর বেশির ভাগ বিষয় বাস্তবায়ন করতে জাতীয় সংসদের প্রয়োজন। সে কারণে এ সরকারের মূল কাজটা ছিল একটা নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, তারপর নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়া।

ইউনূস-তারেক বৈঠকের অপেক্ষা : নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর তা অনেকটাই পরিষ্কার হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই বৈঠকে নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে এ সময়ের বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

রাজনীতিতে নতুন মোড়

লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক বৈঠক শুক্রবার

আপডেট: ১২:১৬:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ জুন ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ছবি: সংগৃহীত

এবার ঈদুল আজহার ছুটিতে দেশবাসীর কাছে প্রায় আচমকা এই ঘোষণা পৌঁছে যায় যে আগামী এপ্রিলের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ঈদের আগের দিন বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণে এই ঘোষণায় রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ চলমান। বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর জন্য এই ঘোষণা অস্বস্তির। বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর মধ্যেও ক্ষোভ।

‘ডিসেম্বরেই নির্বাচন চাই’, তাদের এই দাবি উপেক্ষিত হয়েছে বলে দলগুলো মনে করে। বিএনপি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং প্রধান উপদেষ্টা শব্দ চয়নে ‘রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম’ করেছেন বলে অভিযোগ করেন। বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে ‘ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অভিলাষ’ ফুটে উঠেছে বলে মন্তব্য করেন। অন্যদিক জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি ইসলামী দল এবং এনসিপি নির্বাচনের ঘোষিত সময় সম্পর্কে শর্ত দিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে। সার্বিক এই অবস্থায় কী হতে যাচ্ছে দেশের পরিস্থিতি এই প্রশ্ন এখন সর্বত্র।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের আপত্তি উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টা যদি এপ্রিলেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অনড় থাকেন তাহলে দেশের রাজনীতিতে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হবে। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আবার কারো মত, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত দেশের স্বার্থে মতপার্থক্য এড়িয়ে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুসারে এপ্রিলের প্রথমার্ধেই নির্বাচন হচ্ছে—এই ধারণা মাথায় রেখে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, ‘জনমনে একটা আশঙ্কা রয়েছে নির্বাচন নিয়ে। এটা থাকা স্বাভাবিক। ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তারেক রহমানের মিটিংয়ের পর আসলে বোঝা যাবে যে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে বা যাবে। আমাদের জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী, সেটিও ওই মিটিংয়ের পর বোঝা যাবে।’

নির্বাচন যত দেরিতে হবে বিএনপির জন্য ততই ক্ষতি। ডিসেম্বর পার হয়ে জানুয়ারি এলেই আরো নতুন ভোটার। কয়েকটি দলের ধারণা, তারা নতুন ভোটারদের সমর্থন পাবে। এ জন্য ডিসেম্বরেই জাতীয় নির্বাচন—এই দাবি থেকে বিএনপির সরে আসাটা দলীয়ভাবে ক্ষতি হবে বলে দলটির নেতারা হয়তো ভাবছেন। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী মনে করছে, দেরি হলেই তাদের লাভ। এনসিপি আরেকটু সময় চাইবে, যাতে তারা তাদের দলটা গোছাতে পারে। শুরু থেকেই দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপি কিছুটা মুখোমুখি অবস্থায়। বিএনপির পক্ষ থেকে এই সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সরকারের অধীনে শেষ পর্যন্ত নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন হবে কি না, বিএনপি এটা বিশ্বাস করে কি না—এটার ওপর আসলে অনেক কিছু নির্ভর করছে। যদি বিশ্বাস না করে, পরিস্থিতি যদি জটিল হয়, তাহলে এই অন্তর্বর্তী সরকারের পর একটা কেয়ারটেকার সরকারের প্রয়োজন হবে। সংস্কার কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে সেগুলোর বেশির ভাগ বিষয় বাস্তবায়ন করতে জাতীয় সংসদের প্রয়োজন। সে কারণে এ সরকারের মূল কাজটা ছিল একটা নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি করা, তারপর নির্বাচনটা দিয়ে দেওয়া।

ইউনূস-তারেক বৈঠকের অপেক্ষা : নির্বাচনের সময় নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কী ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে যাচ্ছে, আগামী ১৩ জুন লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর তা অনেকটাই পরিষ্কার হতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ওই বৈঠকে নতুন ‘ডাইমেনশন’ তৈরি হতে পারে। অনুষ্ঠেয় বৈঠকটিকে এ সময়ের বড় ‘পলিটিক্যাল ইভেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক সুযোগ তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে। অনেক কিছু সহজ হয়ে যেতে পারে। নতুন ডাইমেনশন তৈরি হতে পারে এ বৈঠকে। নতুন একটা দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে।

শেয়ার করুন