০১:২৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
হেফাজত ট্রাজেডির এক যুগ

শাপলা চত্বরে শহীদদের খসড়া তালিকা প্রকাশ

ইউএনএ নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০৮:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • / 4

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ – ফাইল ছবি 

ট্রাজেডির এক যুগ পর অবশেষে শাপলা চত্বরে আওয়ামী লীগ সরকারের নৃশংসতায় নিহত হওয়া শহীদদের তালিকা প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের ৫ মের ওই ঘটনায় ৯৩ জনের নাম ও পরিচয় প্রাথমিক খসড়া তালিকায় প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

রোববার (৪ মে) হেফাজতের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বশীল মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী এই তথ্য জানিয়েছেন।

আজহারী জানান, এটি একটি প্রাথমিক খসড়া তালিকা এবং যাচাই-বাছাই শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তালিকা চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই ঘটনার পর হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছিল তাদের শত শত নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তবে তারা কোনো তালিকা পেশ করতে পারেনি। এটা নিয়ে হেফাজতের ভেতরেও অনেকের ক্ষোভ ছিল।

মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ঘটনার পরপর হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে ৬১ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছিল শাপলা চত্বরের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। যদিও তাদের এই বক্তব্য কেউই বিশ্বাস করেনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক আদালতে একটি মামলার তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকাটিতে আইন মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর শাখার সুপারিশ রয়েছে। ওই তালিকায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়ের করা ৪৫ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবেদনপত্রটি পেয়ে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে হেফাজত ইসলামের পক্ষ থেকে আরও ৬/৭টি মামলার তালিকা আমার কাছে দিয়েছে। সেই তালিকাও যাচাই করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মোট ২২০ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আমরা করেছি। এর বাইরে আরও ৫০ টি মামলা রয়েছে যেসব প্রত্যাহারের আবেদন এখনও করা হয়নি।

সূত্র জানায়, শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতাসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা কামরুদ্দিন, মাওলানা মিজানুর রহমান, শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মুফতি মুনির হুসেন কাসেমী, মুফতি নূর হুসাইন নুরানী, মাওলানা আবদুল মান্নান, মাওলানা দিদারুল আলম ও মাওলানা আজিজুল হক উল্লেখযোগ্য।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারাবন্দী হেফাজত নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পান। বেশ কয়েকজন এখনও কারাবন্দী রয়েছেন বলে দাবি করেছেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সব নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে হেফাজত যা করার তা-ই করবে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, শাপলা চত্বরে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার জন্য দায়ী তৎকালীন সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নামাজরত এবং ঘুমন্ত এতিমদের ওপর যেভাবে গুলি চালানো হয়েছিল সেটি ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমরা এর জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।

শাপলা চত্বরের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা: হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা (মিস কেস) হয়েছে।

মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। এদের মধ্যে শামসুল হক টুকু, এ কে এম শহিদুল হক, জিয়াউল আহসান ও মোল্যা নজরুল ইসলাম অন্য মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বাকি ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

 

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

হেফাজত ট্রাজেডির এক যুগ

শাপলা চত্বরে শহীদদের খসড়া তালিকা প্রকাশ

আপডেট: ০৮:৩৩:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ – ফাইল ছবি 

ট্রাজেডির এক যুগ পর অবশেষে শাপলা চত্বরে আওয়ামী লীগ সরকারের নৃশংসতায় নিহত হওয়া শহীদদের তালিকা প্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের ৫ মের ওই ঘটনায় ৯৩ জনের নাম ও পরিচয় প্রাথমিক খসড়া তালিকায় প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

রোববার (৪ মে) হেফাজতের জনসংযোগ বিভাগের দায়িত্বশীল মুফতি কেফায়েতুল্লাহ আজহারী এই তথ্য জানিয়েছেন।

আজহারী জানান, এটি একটি প্রাথমিক খসড়া তালিকা এবং যাচাই-বাছাই শেষে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তালিকা চূড়ান্ত করতে কিছুটা সময় লাগবে বলেও জানান তিনি।

দেশ-বিদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই ঘটনার পর হেফাজতে ইসলাম দাবি করেছিল তাদের শত শত নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। তবে তারা কোনো তালিকা পেশ করতে পারেনি। এটা নিয়ে হেফাজতের ভেতরেও অনেকের ক্ষোভ ছিল।

মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ ঘটনার পরপর হেফাজতের কর্মসূচি ঘিরে ৬১ জন নিহতের তথ্য জানিয়েছিল। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছিল শাপলা চত্বরের অভিযানে কেউ মারা যায়নি। যদিও তাদের এই বক্তব্য কেউই বিশ্বাস করেনি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সম্প্রতি হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতা মাওলানা মামুনুল হক আদালতে একটি মামলার তালিকা জমা দিয়েছেন। তালিকাটিতে আইন মন্ত্রনালয়ের সলিসিটর শাখার সুপারিশ রয়েছে। ওই তালিকায় হেফাজতের বিরুদ্ধে ঢাকায় দায়ের করা ৪৫ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়েছে। আমরা আবেদনপত্রটি পেয়ে সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরবর্তীতে হেফাজত ইসলামের পক্ষ থেকে আরও ৬/৭টি মামলার তালিকা আমার কাছে দিয়েছে। সেই তালিকাও যাচাই করে জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো হয়েছে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে দায়ের করা মোট ২২০ টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদন আমরা করেছি। এর বাইরে আরও ৫০ টি মামলা রয়েছে যেসব প্রত্যাহারের আবেদন এখনও করা হয়নি।

সূত্র জানায়, শাপলা চত্বরের ওই ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হেফাজত ইসলামের শীর্ষ নেতাসহ সহস্রাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার হন। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মাওলানা মামুনুল হক, মুফতি হারুন ইজাহার, মাওলানা কামরুদ্দিন, মাওলানা মিজানুর রহমান, শিশুবক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানী, মুফতি সাখাওয়াত হুসাইন রাজী, মুফতি মুনির হুসেন কাসেমী, মুফতি নূর হুসাইন নুরানী, মাওলানা আবদুল মান্নান, মাওলানা দিদারুল আলম ও মাওলানা আজিজুল হক উল্লেখযোগ্য।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কারাবন্দী হেফাজত নেতা-কর্মীদের বেশিরভাগই জামিনে মুক্তি পান। বেশ কয়েকজন এখনও কারাবন্দী রয়েছেন বলে দাবি করেছেন হেফাজত ইসলামের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হেফাজত ইসলামের মহাসমাবেশে মাওলানা মামুনুল হক বলেন, আগামী দুই মাসের মধ্যে হেফাজত ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে থাকা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। সব নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে হেফাজত যা করার তা-ই করবে।

হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রাব্বানী বলেন, শাপলা চত্বরে আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালিয়েছিল, তার জন্য দায়ী তৎকালীন সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নামাজরত এবং ঘুমন্ত এতিমদের ওপর যেভাবে গুলি চালানো হয়েছিল সেটি ইতিহাসে একটি জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। আমরা এর জন্য শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের বিচার চাই।

শাপলা চত্বরের ঘটনায় ট্রাইব্যুনালে মামলা: হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের হত্যা-নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা (মিস কেস) হয়েছে।

মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারসহ নয়জনকে আসামি করা হয়েছে। বাকিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান ও পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোল্যা নজরুল ইসলাম। এদের মধ্যে শামসুল হক টুকু, এ কে এম শহিদুল হক, জিয়াউল আহসান ও মোল্যা নজরুল ইসলাম অন্য মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছে। ট্রাইব্যুনাল বাকি ৫ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।

 

শেয়ার করুন