নতুন করে আলোচনার জন্ম
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আয়নাঘরে থাকার দাবি

- আপডেট: ০৩:০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫
- / 8
সুব্রত বাইনকে আদালত থেকে হাজতখানায় নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। বুধবার বিকেলে ঢাকার সিএমএম আদালত প্রাঙ্গণে -ফাইল ফটো
শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের আইনজীবী আদালতে দাবি করেছেন, ২০২২ সালের পর থেকে সুব্রত বাইন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে ছিলেন। ছাত্র–জনতার গণঅভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাকে নারায়ণগঞ্জের ভুলতায় ফেলে চলে যান।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বুধবার বিকেলে সুব্রত বাইনের রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন তার আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া।
আইনজীবী বাদল মিয়া আরও বলেন, সুব্রত বাইনকে গত বছরের ৫ আগস্ট ভূলতায় ফেলে যাওয়ার পর তার মক্কেল ভয় পেয়ে যান। তিন বছর ধরে আয়নাঘরে নির্যাতিত হওয়ার তথ্য জানাতে সংবাদ সম্মেলন করার কথাও ভেবেছিলেন কিন্তু জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত সুব্রত বাইন ওই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
সুব্রত বাইনকে ২০২২ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল বলে আদালতে দাবি করেন তার এই আইনজীবী।
২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ২৩ জনকে শীর্ষ সন্ত্রাসী উল্লেখ করে একটি তালিকা প্রকাশ করে ছিল। সেই তালিকায় সুব্রত বাইনের নাম ছিল।
সুব্রত বাইনের নাম মিডিয়ার সৃষ্টি দাবি করে আদালতে আইনজীবী মোহাম্মদ বাদল মিয়া বলেন, তার মক্কেল নিরপরাধ। তিনি অসুস্থ।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী আদালতকে বলেন, সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ গুরুতর ফৌজদারি অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে। তাদের কাছ থেকে ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং ১টি স্যাটেলাইট ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। মামলার ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
উভয়পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত সুব্রত বাইনকে আট দিন এবং আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদসহ তিনজনকে ছয় দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন। রিমান্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি হলেন মোল্লা মাসুদের সহযোগী শুটার আরাফাত ও শরীফ।
এর আগে সুব্রত বাইনসহ চারজনকে কড়া পুলিশ পাহারায় বিকেল সাড়ে তিনটার পর হাজতখানা থেকে আদালত কক্ষে তোলা হয়। কাঠগড়ায় তোলার পর সুব্রত বাইনসহ অন্যদের পরানো হেলমেট খুলে দেওয়া হয়।
সাংবাদিকদের দেখার পর সুব্রত বাইন বলতে থাকেন, সংবাদকর্মীরা তার বিরুদ্ধে মনগড়া কাহিনী লিখে যাচ্ছেন বহু বছর ধরে। তিনি এর কোনো প্রতিবাদ করেননি। বাস্তব কাহিনী সাংবাদিকেরা জানেন না বলেও দাবি করেন সুব্রত বাইন।
সুব্রত বাইন সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, ভারতে থাকা অবস্থায় তিনি তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০২২ সালে তাকে ভারত থেকে বাংলাদেশে পাঠানোর পর আয়নাঘরে ছিলেন।
এক পর্যায়ে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের নিজের মাথা দেখিয়ে বলতে থাকেন, আয়নাঘরে তাকে দিনের পর দিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন করেছেন। আয়নাঘরে তাকে ছোট্ট একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেছেন বলেও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন সুব্রত।
সুব্রত আরও বলতে থাকেন, তার নামে যদি কেউ চাঁদাবাজি করে থাকেন তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করা।
সুব্রতর আইনজীবীর অভিযোগ এবং সুব্রতর দাবির বিষয়ে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ফৌজদারি মামলার যেকোনো আসামি আদালতে এসে নিজেদের নিরপরাধ হিসেবে উপস্থাপন করেন। অন্যান্য ফৌজদারি মামলার আসামিদের মতো সুব্রত বাইন ও তার আইনজীবী আদালতের কাছে দাবি করেন, ভারত সরকার ২০২২ সালে তাকে পুশ করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছিল। এরপর থেকে তিনি আয়নাঘরে ছিলেন।’
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, সুব্রত বাইন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তিনি এবং তার আইনজীবীরা যা–ই দাবি করুক না কেন, সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রসহ সুব্রত, মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা ৫ আগস্টের পর দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র করে আসছিলেন। তদন্তে তাদের সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের তথ্য আদালতকে প্রতিবেদন আকারে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, সুব্রত বাইন দেশের এক সময়কার কুখ্যাত শীর্ষ সন্ত্রাসী। দীর্ঘদিন তিনি ভারতেও আত্মগোপনে ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে। তবে এবার গ্রেপ্তারের পর তার ‘আয়নাঘরে’ থাকার দাবি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখন নানা মহলে প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কীভাবে ও কোথায় তিনি এই আড়াই বছর ছিলেন?