শ্রমিক-কর্মচারী ফেডারেশনের দাবি সরকারের ১৮ দফা বাস্তবায়নের

- আপডেট: ০৯:৫৪:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪
- / 36
– ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. দলিলুর রহমান। ছবি: ইউএনএ
গণঅভ্যুত্থানের ফলে জনগণের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে তা কাজে লাগিয়ে একটি শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়নের বিপ্লবী ধারাকে শক্তিশালী করা জরুরি রাজনৈতিক কর্তব্য বলে দাবি করেছেন শ্রমজীবী ফেডারেশনের নেতারা। এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃকগৃহীত ১৮ দফা বাস্তবায়নের দাবি করেন তারা।
আজ শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন আয়োজিত ‘২৪-এর গণঅভ্যুত্থান ও শ্রমিকদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি মানস নন্দী। বক্তব্য রাখেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বাংলাদেশ ফিজিওথেরাপি এসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. দলিলুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য আবদুল্লাহ আল ক্বাফি রতনসহ বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের ফলে জনগণের মধ্যে যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে, তাকে জাগরুক রাখার উপরই নির্ভর করবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কতটুকু এ গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা পূরণে সচেষ্ট থাকবে। গণঅভ্যুত্থানের ফলে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে বঞ্চনা থেকে মুক্তির যে আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে, মুক্তভাবে মত প্রকাশ করা ও শোনার যে পরিবেশ তৈরি হয়েছে, অধিকার সচেতনতা তৈরি হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে অভূতপূর্ব। ফলে শ্রমিকদের রাজনীতি সচেতন করা অর্থাৎ শ্রেণী সচেতন করা, সংগঠিত করা ও বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়নে যুক্ত করার আপাত অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একে কাজে লাগিয়ে একটি শক্তিশালী শ্রমিক আন্দোলন ও ট্রেড ইউনিয়নের বিপ্লবী ধারাকে শক্তিশালী করা আজ জরুরি রাজনৈতিক কর্তব্য হিসেবে হাজির হয়েছে।
বক্তারা আরও বলেন, সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থানের ফলে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যেও গণতান্ত্রিক আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলন সংগ্রাম করে কিছু হবে না, দীর্ঘদিনের এ বদ্ধমূল ধারণা গণঅভ্যুত্থান ভুল প্রমাণিত করেছে। ফলে মালিকশ্রেণীর শোষণ-নির্যাতনের বিরুদ্ধে শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার পক্ষে কিছুটা অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রাজনীতি সচেতন বিপ্লবী ধারার ট্রেড ইউনিয়ন গড়ে তোলা ও শক্তিশালী করা এবং পাশাপাশি ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য দেশের শ্রমজীবী জনগণকে আহ্বান জানানো হয়।
আলোচনা সভায় গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শ্রমিকদের প্রত্যাশা পূরণে বিভিন্ন বিষয়ে করণীয়ও তুলে ধরা হয়।
করণীয়গুলো হলো
গণঅভ্যুত্থানে শহিদ শ্রমিক-ছাত্রসহ সকল হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার করার জোর দাবি জানাচ্ছি। শহিদদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা দ্রুত তৈরি করা, শহিদ পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহযোগিতা ও আহতদের চিকিৎসার ভার রাষ্ট্রকে নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সম্প্রতি সাভারের আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক হত্যার দ্রুত বিচার করার দাবি জানাচ্ছি। একইসাথে ২০২৩ সালে মজুরি আন্দোলনে হাসিনা সরকারের গুলিতে চারজন শ্রমিক হত্যার বিচার শুরু করার দাবি জানাচ্ছি। বিগত সরকারের সময় বিভিন্ন শ্রমিক আন্দোলন দমনের জন্য আন্দোলনরত শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের বিরুদ্ধে সরকার ও মালিকপক্ষের দায়েররকৃত সকল হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।
এছাড়াও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কর্তৃক সম্প্রতি ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে গৃহীত ১৮ দফা বাস্তবায়ন করার দাবি জানানো হয়।
দাবিগুলো হলো
- সংশোধিত শ্রম আইন ও বিধিমালার অগণতান্ত্রিক ধারা বাতিল করে গণতান্ত্রিক শ্রম আইন ও বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, সিন্ডিকেট ভাঙ্গা ও শ্রমিকের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালুর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
- শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে মালিক ও পুলিশের হামলা-মামলা-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ বিলুপ্ত করতে হবে।
- ন্যূনতম জাতীয় মজুরি কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা করতে হবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
- ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা-ভ্যান-ইজিবাইকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ও রুট পারমিট দিতে হবে। পুলিশি হয়রানি ও অন্যায়ভাবে জরিমানা আদায় বন্ধ করতে হবে।
- বন্ধ ঘোষিত সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল-চিনিকল আধুনিকায়ন করে চালু কর। স্থায়ী ও বদলিসহ সকল শ্রমিকের বকেয়া বেতন-বোনাস অবিলম্বে পরিশোধ কর। বিরাষ্ট্রীয়করণ, পিপিপি নীতি, লিজ প্রথা বাতিল করতে হবে। তিন মাস বেতন দিতে না পারা বা অন্য কারণে বন্ধ কারখানা জাতীয়করণ করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করতে হবে।
- অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন চা বাগানের বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও সব বন্ধ চা বাগান চালু করা, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা, চা শ্রমিক স্বার্থ বিরোধী গেজেট ২০২২ সহ শ্রম আইনের সব বৈষম্যমূলক ধারা বাতিল করা। চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ২০ মে ‘চা শ্রমিক দিবস’ হিসাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে হবে।
- সকল প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের ন্যায়সঙ্গত দাবি মানতে হবে এবং সকল শ্রমিকদের জন্য সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করতে হবে। নির্মাণ শ্রমিক, গৃহশ্রমিকসহ সকল অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পরিচয়পত্র, কর্মস্থলে নিরাপত্তা সামগ্রী সরবরাহ ও উপযুক্ত মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
- কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। দুর্ঘটনায় নিহতদের এক জীবনের আয়ের সমান ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং আহতদের পর্যান্ত ক্ষতিপূরণ, চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে। ক্ষতিপূরণ আইন সংশোধন করতে হবে ও আধুনিক করতে হবে।
- রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।