প্রধান উপদেষ্টা-বিএনপি বৈঠক
সংস্কার-বিচার-নির্বাচন নিয়ে আলোচনা

- আপডেট: ১০:০২:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
- / 5
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নেতৃবৃন্দ -ছবি : ইউএনএ
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন; এই তিন বিষয়ে কথা বলেছে বিএনপির প্রতিনিধিদল। বৈঠক শেষে এ কথা জানান বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান উপদেষ্টা আমাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তার সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য আমরা চারজন এসেছিলাম। তবে আমাদেরকে আলোচনার বিষয়বস্তু আগে জানানো হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে আমরা যা আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, তার উপরে ভিত্তি করে আমরা একটা লিখিত বক্তব্য নিয়ে এসেছি। এবং সেই লিখিত বক্তব্যটি আমরা প্রধান উপদেষ্টার সমীপে পেশ করেছি। সেই ভিত্তিতে আমরা আলোচনা করেছি। তার একটি সারাংশ আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।
তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি করার পাশাপাশি বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
আপনারা জানেন, আমরা এটা প্রকাশ্যে দাবি করে আসছি। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে সরকারের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার স্বার্থে বিতর্কিত উপদেষ্টাদের বাদ দিয়ে উপদেষ্টা পরিষদ পুনর্গঠনের জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি।
বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী ব্যক্তিগতভাবে, রাজনৈতিকভাবে, পারিবারিকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের আমলে। এবং সেই জন্য আওয়ামী লীগের বিচার সবচাইতে বেশি দাবি করে বিএনপি। এই বিচার প্রক্রিয়া কোনোভাবে অসম্পূর্ণ থাকলে, বিএনপি সরকারের দায়িত্বে যখন যাবে তখন বিচারের আওতায় এনে, তা বিচার বিভাগের মাধ্যমে, স্বাধীন বিচার বিভাগের মাধ্যমে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করা হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সংস্কার কার্যক্রম অবিলম্বে সম্পন্ন করে ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য দ্রুত একটি রোডম্যাপ প্রদানের দাবি আমরা জানিয়েছি।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মূল দায়িত্ব হচ্ছে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্রে উত্তরণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা। যেকোনো উসিলায় নির্বাচন যত বিলম্ব করা হবে, আমরা মনে করি জাতির কাছে আবার স্বৈরাচার পুনরায় ফিরে আসার ক্ষেত্র প্রস্তুত হবে। এর দায় দায়িত্ব বর্তমান সরকার ও তাদের সাথে সংশ্লিষ্টদের উপরে বর্তাবে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যে নানা ধরনের গুজব আছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে বলেছি, বিএনপি কখনোই প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চায়নি। বরং প্রথম দিন থেকেই এই সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। আমাদের যে আলোচনা তার এই সারাংশ ছিল। এতটুকু। আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ।
আপনারা কি কোনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপের আশ্বাস পেয়েছেন? উনারা কি বলেছেন? এই প্রশ্নের জবাবে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা আমাদের দাবি জানিয়েছি। হয়তোবা উনারা উনার প্রেসের মাধ্যমে জানাবেন। সেজন্য আমরা অপেক্ষা করব।
আরেক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, মূলত, সংস্কার এবং বিচার, নির্বাচন, এই তিনটার উপর আলোচনা হয়েছে। সংস্কারের ব্যাপারে আমরা এটা পরিষ্কার এবং উনারা একমত হয়েছে, সংস্কার যেখানে ঐকমত্যের ভিত্তিতে হওয়ার কথা, তার ভিত্তিতে সংস্কারের কাজ সম্পন্ন হবে। সেই কাজ অতি সহজে সম্পন্ন করা সম্ভব। এখানে কোনো দ্বিমত পোষণ করেন নাই।
বিচার ব্যবস্থা বিচার বিভাগ করবে এবং বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে, এখানে উনাদের কোনো দ্বিমত নাই। সুতরাং ডিসেম্বরের আগেও নির্বাচন করা সম্ভব। এই আলোচনা হয়েছে এখানে।
ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, তিন বিষয় নিয়ে কথা বলেছি। সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচন। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলেছি যে, একটার সঙ্গে আরেকটার কোনো সম্পর্ক নেই।
এর আগে শনিবার সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বিএনপির প্রতিনিধিদল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সালাহউদ্দিন আহমদ।