চতুর্থ দিনের মতো কর্মচারীদের বিক্ষোভ
সচিবালয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, সোয়াট ও বিজিবি মোতায়েন

- আপডেট: ১২:১৩:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
- / 14
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ অনুমোদনের প্রতিবাদে টানা চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা -ছবি : ইউএনএ
সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে জারি করা অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করছেন কর্মচারীরা। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পাশে বাদামতলায় জড়ো হয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। পৌনে ১২টার দিকে কর্মচারীরা বাদামতলা থেকে অবস্থান সরিয়ে সচিবালয়ের বিভিন্ন ভবনের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
এ নিয়ে চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ করছেন তারা।
বিক্ষোভে অংশ না নেওয়া অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। ‘অবৈধ কালো আইন মানা হবে না’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন কর্মচারীরা।
এদিকে ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদনের প্রতিবাদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের মধ্যেই প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয় ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে সোয়াট ও বিজিবির সদস্যদের।
মঙ্গলবার (২৭ মে) সকালে এ চিত্র দেখা গেছে।
আরও দেখা যায়, সচিবালয়ের গেটের সামনে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত রয়েছেন। কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারী ছাড়া আর অন্য কাউকে সচিবালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সাংবাদিকরাও সকালে প্রবেশ করতে পারেননি।
সচিবালয়ের কর্মচারীদের চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হচ্ছেন বিএনপিপন্থি সাবেক আমলারা। এতদিন তারা এ আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে আসছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার সচিবালয়ে দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ সোমবার রাতে এক গণবিজ্ঞপ্তিতে সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনাসহ আশপাশ এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
গত বৃহস্পতিবার (২২ মে) অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ সংশোধন করে সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর খসড়া অনুমোদনের পর রোববার অধ্যাদেশ জারি করা হয়।
কর্মচারীদের অভিযোগ, সাড়ে চার দশক আগের বিশেষ বিধানের কিছু ‘নিবর্তনমূলক ধারা’ সংযোজন করে অধ্যাদেশটি করা হয়েছে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে খসড়াটি অনুমোদনের পর থেকেই এর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-মিছিল করছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মচারীরা।
অধ্যাদেশ বাতিল ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য সোমবার সচিবালয়ে আন্দোলনরত সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরাম গঠন করা হয়েছে। এ ফোরামের কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের মো. নূরুল ইসলাম ও মো. বাদীউল কবিরকে। কো-মহাসচিব হয়েছেন আন্তঃমন্ত্রণালয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের মো. নজরুল ইসলাম, সংযুক্ত পরিষদের মো. মোজাহিদুল ইসলাম ও নিজাম উদ্দিন আহমেদ।
তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব ড. মোখলেস উর রহমান বলেন, এই অধ্যাদেশ নিয়ে সরকারি কর্মচারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। গণহারে এই অধ্যাদেশের অধীনে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি বাদীউল কবির বলেন, দপ্তর-সংস্থার বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও সেটি শেষ পর্যন্ত হয়নি।
সংশোধিত অধ্যাদেশ বাতিল ও বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরামের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তিনটি কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত রাখা; ফোরামের নেতারা প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত উপদেষ্টা ও সচিবদের সঙ্গে আলোচনা করবেন; ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের অব্যাহতভাবে প্রশ্রয় দেওয়া এবং জনপ্রশাসনকে দক্ষতা ও সুচারুভাবে পরিচালিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ ও জনপ্রশাসন সচিব মোখলেস উর রহমানের অপসারণের দাবি উত্থাপন করে প্রধান উপদেষ্টা, সব সংস্থা, অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এ কর্মসূচির কথা জানান।