সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও বেড়েছে চালের দাম

- আপডেট: ০৯:১৩:২০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / 5
রাজধানীর বাজারে মানভেদে সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত / ইউএনএ
বোরো মৌসুম পুরোপুরি শেষ না হতেই বাড়ছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে মানভেদে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চালের দাম বাড়তি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, শান্তিনগর ও তুরাগ এলাকার নতুনবাজারে খোঁজ নিয়ে চালের দামের এ চিত্র পাওয়া যায়।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, চালের দাম বাড়ার বড় কারণ ধানের দাম বেশি। ধানের দাম বেশি হলে চালের দাম কীভাবে কমবে? তারা বলেছেন, বড় বড় অটো রাইচ মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রতিযোগিতা করে ধান কেনে। বোরো মৌসুমের সব ধান এখন তারা মজুত করেছে। ফলে কৃষকের ধান সাধারণ মিলারদের হাতে নেই বললেই চলে। এতে হাটবাজারগুলোতে ধানের দাম বেড়ে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। দাম কমাতে চাল আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা বলেছেন তারা। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, চাল আমদানি ও অভ্যন্তরীণ ফলন ভালো হলেও বাজারে দাম বাড়তি। সরকার চালের বাড়তি দর নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে।
গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি মোটা চাল ইরি/স্বর্ণা ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম/লতা ৬০ থেকে ৬৭ টাকা ও সরু চাল নাজিরশাইল/মিনিকেট ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা দরে বিক্রি হয়, যা সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে চালের কেজিতে তিন থেকে পাঁচ টাকা বেশি। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশও (টিসিবি) তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে চালের দাম বাড়ার তথ্য তুলে ধরেছে। সংস্থাটির তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে নাজিরশাইল/মিনিকেটের দাম ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ, পাইজাম/লতার দাম ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ইরি/স্বর্ণার দাম ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ দর বেড়েছে। যদিও বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, দাম বেড়েছে আরো বেশি। খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন বাজারে চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। এছাড়া, সরকারের গুদামেও যথেষ্ট পরিমাণে চাল মজুত আছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে সরকারের গুদামে চাল ও গমের মজুত রয়েছে ১৭ দশমিক ৬৪ লাখ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৩ লাখ টন বেশি।
চালের দাম বাড়তি প্রসঙ্গে রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজামউদ্দিন বলেন, দেশের ধান, চালের বাজার এখন অটো রাইচ মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে। তারা বাজার থেকে প্রতিযোগিতা করে ধান কেনে। ফলে ধানের বাজার বাড়তি। এছাড়া বর্তমান আবহাওয়াও চাল উৎপাদনের জন্য উপযোগী নয়। এরও বিরূপ প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। তিনি চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে চাল আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ার দাবি জানান। দেশে ধান-চালের অন্যতম বড় মোকাম উত্তরাঞ্চলের বগুড়া। চালের দাম বাড়া প্রসঙ্গে জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, বাজারে ধানের দাম বেশি। এ কারণে চালের দাম বাড়ছে। গত তিন সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে পাঁচ থেকে ছয় টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগিতা করে বাজার থেকে হাজার হাজার মণ ধান কিনেছে। সরকার তাদের কিছুই বলে না। অথচ সাধারণ মিলাররা ৫০০ মণ ধান কিনলেই সরকার ব্যবস্থা নেয়। আমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে বগুড়ায় সাড়ে ৭০০ মিল রয়েছে। অথচ ২০২২ সালে বগুড়ায় ২ হাজার ৩৫টি মিল ছিল। তিনি বলেন, বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাধারণ মিলাররা চাল ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাটবাজারগুলোতে এখন ধানের সরবরাহ কমে গেছে। দামও বেশি। তাই চালের দাম কমার সমভাবনা কম। তবে সরকারি-বেসরকারিভাবে চাল আমদানি করলে বাজার স্থিতিশীল থাকবে বলে জানান তিনি।