স্থলপথে বাংলাদেশি পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা ভারতের

- আপডেট: ০১:০৭:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
- / 4
নিষেধাজ্ঞা এসেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে -ছবি : বিবিসি
নিজেদের ভূখণ্ডের উত্তরপূর্বাঞ্চল দিয়ে বেশ কিছু বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্যের আমদানি বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে ভারত। নিষেধাজ্ঞা এসেছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতেও।
নয়া দিল্লি বলছে, এখন থেকে শুধু কলকাতা ও নভসেবা (জওহরলাল নেহরু) সমুদ্রবন্দর দিয়ে তৈরি পোশাক ভারতে ঢুকতে পারবে। অন্যসব বন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
শনিবার ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এ সংক্রান্ত নির্দেশনার খবর দিয়েছে টাইমস অব ইন্ডিয়া।
ওই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘জেনারেল নোটস রিগারডিং ইমপোর্ট পলিসিতে নতুন একটি অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে। এটি যুক্ত হয়েছে দেশটির আমদানি-রপ্তানির শ্রেণিবিন্যাস ব্যবস্থা ‘আইটিসি (এইচএস) ২০২২ এর সিডিউল ১ (আমদানি নীতি) এর অধীনে।’
দুই দেশের পাল্টাপাল্টি আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্তের মধ্যে নতুন করে এ ঘোষণা দিল নয়া দিল্লি।
ভারতের নতুন এ সিদ্ধান্তে প্রতিবেশী দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি ব্যাপকভাবে চাপে পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর যে চড়া শুল্ক আরোপ করেছে ভারতের এ পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য তার চেয়েও কঠোর।
ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর ধরে বড় অঙ্কের পণ্য রপ্তানি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়নের মধ্যে দুই দেশের পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার ঘটনা ঘটে।
প্রায় এক মাস আগে ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, সোনামসজিদ, বাংলাবান্ধা, বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে সুতা আমদানির সুযোগ বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর।
অপরদিকে গত ৯ এপ্রিল বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় কোনো দেশে রপ্তানি পণ্যের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করে ভারত।
এখন নতুন করে বেশ কিছু সীমান্তের বন্দর দিয়ে কিছু পণ্যের নাম তুলে ধরে সেগুলোর রপ্তানি বন্ধ করল।
শনিবার দেশটির বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল থেকে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, ভারতের আসাম, মেঘালয়, মিজোরাম ও ত্রিপুরা (ও পশ্চিমবঙ্গ) স্থলবন্দর দিয়ে বেশ কিছু বাংলাদেশি ভোগ্যপণ্যের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।
এ তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পানীয়; চিপস, কনফেকশনারি, বেকারি বা স্ল্যাকসের মত প্রক্রিয়াজাত খাবার; সুতা কিংবা সুতার বর্জ্য; প্লাস্টিক ও পিভিসির তৈরি (পিগমেন্ট, ডাইস, প্লাস্টিকাইজার ও গ্রানিউল বাদে) বিভিন্ন জিনিসপত্র এবং কাঠের আসবাবপত্র।
তবে বাংলাদেশ থেকে মাছ, এলপিজি, ভোজ্যতেল ও পাথর আমদানি অব্যাহত রেখেছে দেশটি।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, দেশটির উত্তরপূর্বাঞ্চলের ১১টি স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্য হয়। এগুলোর মধ্যে আসামে তিনটি, মেঘালয়ে দুটি ও ত্রিপুরায় ছয়টি বন্দর রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে সুসম্পর্ক আশা করি বলে বিষয়টিকে আমরা গভীরভাবে দেখছি। এভাবে বিচ্ছিন্নতা বাড়লে উভয় পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। আমরা এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে দর-কষাকষি করব।
এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের ব্যাপারে আলোচনা করতে ভারতের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই অনুরোধ আসবে বলে মনে করছেন বাণিজ্যসচিব।
ভারতীয় পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এখন কী করবেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব বলেন, রোববার অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় এ নিয়ে কথা হতে পারে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ কয়েকজন উপদেষ্টা এ নিয়ে আলাদা বৈঠকও করতে পারেন।
ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন সূত্র জানিয়েছে, তারা শনিবার দুপুরের পর এই বিধিনিষেধের খবর পায়। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। এর আগে ট্রান্সশিপমেন্ট সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও ভারত কিছু জানায়নি।
ভারতের বাজারে বড় রপ্তানিকারকদের একটি বাংলাদেশের প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, বাংলাদেশের প্রায় সব স্থলবন্দর ব্যবহার করে আমরা বিভিন্ন ধরনের পানীয় থেকে শুরু করে কনফেকশনারি সামগ্রী, প্লাস্টিকসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী ভারতের বাজারে রপ্তানি করি। ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব সামগ্রী আমদানিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেটি কার্যকর হলে আমাদের পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছর পাঁচই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটে।