০১:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদ‌কের

হলফনামায় শেখ হাসিনার সম্প‌দের তথ্য গোপন : অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদ‌কের

ইউএনএ প্রতিবেদক
  • আপডেট: ০৯:২৭:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫
  • / 7

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক -ফাইল ফটো

৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় সম্পদের ঘোষণায় অসত্য তথ্য প্রদান করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরু‌দ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় আইনি ব্যবস্থা নি‌তে চি‌ঠি দি‌য়ে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন (দুদক)।

একইস‌ঙ্গে এই অ‌ভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ‌বৈধভাবে সম্পদ অর্জ‌নের বিষ‌য়ে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম‌্যান ড. আবদুল মো‌মেন এ তথ‌্য জানান।

তিনি বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয়। একটি অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। আরেকটা অংশ হচ্ছে হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাব করে আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুসারে দুদক পৃথকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলেও জানান দুদক চেয়ারম্যান।

ই‌সি বরাব‌র পাঠা‌নো চি‌ঠি‌তে দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়। উক্ত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে তার দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিলকৃত পরিসম্পদ এবং দায়ের বিবরণীতে তার নিজ নামে অর্জিত কৃষিজমির পরিমাণ ৬.৫০ একর উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

কিন্তু সমসাময়িক সময়ে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দিয়েছেন। সেখানে তার নামে ২৮.৪১ একর জমির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে তার ক্রয়কৃত জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। সে অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়কৃত জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন।

এ ছাড়াও তিনি মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের সংসদ সদস্য পদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করে নিজ আবাসিক ঠিকানায় (সুধা সদন, বাড়ি নং-৫৪, রোড নং-৫, ধানমন্ডি) ব্যবহার করে গাড়িটি রেজিষ্ট্রেশন করেন এবং নিজে তা ব্যবহার করেন।

প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত তার হলফনামায় আলোচ্য গাড়িটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি এবং তিনি কখনো গাড়িটি ব্যবহারও করেননি মর্মে জানা গে‌ছে।

এ অবস্থায় কমিশন কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বর্ণিত তথ্যাদির আলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২’- এর আওতায় হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের বিষয়ে আইনানুগ প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদ‌কের পক্ষ থে‌কে অনুরোধ করা হ‌য়ে‌ছে।

দুদক জানায়, যে‌হেতু হলফনামায় মিথ‌্যা ঘোষণা দেয়ার বিষয়‌টির ব‌্যাপা‌রে আই‌নি ব‌্যবস্থা নেওয়ার এখ‌তিয়ার নির্বাচন ক‌মিশ‌নের, সে‌হেতু ব‌র্ণিত ত‌থ্যের উপর আই‌নি ব‌্যবস্থা নি‌তে দুদক হ‌তে নির্বাচন ক‌মিশ‌নে প্রের‌ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

একইসঙ্গে অ‌ভি‌যোগ সং‌শ্লিষ্ট সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞাত আয় ব‌হির্ভূত সম্পদ বিষ‌য়ে প্রাপ্ত তথ‌্য ২০০৮ সা‌লে বিধায় বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত বিস্তা‌রিত অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাপ্ত ত‌থ্যের আ‌লো‌কে পূর্ণাঙ্গ প্রতি‌বেদন সা‌পে‌ক্ষে পরবর্ত‌ী সিদ্ধান্ত নে‌বে ক‌মিশন।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদ‌কের

হলফনামায় শেখ হাসিনার সম্প‌দের তথ্য গোপন : অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত দুদ‌কের

আপডেট: ০৯:২৭:২০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ মে ২০২৫

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরু‌দ্ধে অ‌ভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক -ফাইল ফটো

৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় সম্পদের ঘোষণায় অসত্য তথ্য প্রদান করায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরু‌দ্ধে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর আওতায় আইনি ব্যবস্থা নি‌তে চি‌ঠি দি‌য়ে‌ছে দুর্নী‌তি দমন ক‌মিশন (দুদক)।

একইস‌ঙ্গে এই অ‌ভি‌যোগ আম‌লে নি‌য়ে সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অ‌বৈধভাবে সম্পদ অর্জ‌নের বিষ‌য়ে অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নি‌য়ে‌ছে দুদক।

বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দুদক চেয়ারম‌্যান ড. আবদুল মো‌মেন এ তথ‌্য জানান।

তিনি বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয়। একটি অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নেবে। আরেকটা অংশ হচ্ছে হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাব করে আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুসারে দুদক পৃথকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

বিষয়টি সময়সাপেক্ষ বলেও জানান দুদক চেয়ারম্যান।

ই‌সি বরাব‌র পাঠা‌নো চি‌ঠি‌তে দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করা হয়। উক্ত সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনে তার দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়।

পর্যালোচনায় দেখা যায়, শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিলকৃত পরিসম্পদ এবং দায়ের বিবরণীতে তার নিজ নামে অর্জিত কৃষিজমির পরিমাণ ৬.৫০ একর উল্লেখ করেছেন। এর মধ্যে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

কিন্তু সমসাময়িক সময়ে তিনি দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দিয়েছেন। সেখানে তার নামে ২৮.৪১ একর জমির তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে তার ক্রয়কৃত জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। সে অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন এবং ক্রয়কৃত জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন।

এ ছাড়াও তিনি মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের সংসদ সদস্য পদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করে নিজ আবাসিক ঠিকানায় (সুধা সদন, বাড়ি নং-৫৪, রোড নং-৫, ধানমন্ডি) ব্যবহার করে গাড়িটি রেজিষ্ট্রেশন করেন এবং নিজে তা ব্যবহার করেন।

প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত তার হলফনামায় আলোচ্য গাড়িটির বিষয়ে কোনো তথ্য উল্লেখ করেননি এবং তিনি কখনো গাড়িটি ব্যবহারও করেননি মর্মে জানা গে‌ছে।

এ অবস্থায় কমিশন কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক বর্ণিত তথ্যাদির আলোকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২’- এর আওতায় হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের বিষয়ে আইনানুগ প্রযোজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে দুদ‌কের পক্ষ থে‌কে অনুরোধ করা হ‌য়ে‌ছে।

দুদক জানায়, যে‌হেতু হলফনামায় মিথ‌্যা ঘোষণা দেয়ার বিষয়‌টির ব‌্যাপা‌রে আই‌নি ব‌্যবস্থা নেওয়ার এখ‌তিয়ার নির্বাচন ক‌মিশ‌নের, সে‌হেতু ব‌র্ণিত ত‌থ্যের উপর আই‌নি ব‌্যবস্থা নি‌তে দুদক হ‌তে নির্বাচন ক‌মিশ‌নে প্রের‌ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হ‌য়ে‌ছে।

একইসঙ্গে অ‌ভি‌যোগ সং‌শ্লিষ্ট সা‌বেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞাত আয় ব‌হির্ভূত সম্পদ বিষ‌য়ে প্রাপ্ত তথ‌্য ২০০৮ সা‌লে বিধায় বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত বিস্তা‌রিত অনুসন্ধা‌নের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। প্রাপ্ত ত‌থ্যের আ‌লো‌কে পূর্ণাঙ্গ প্রতি‌বেদন সা‌পে‌ক্ষে পরবর্ত‌ী সিদ্ধান্ত নে‌বে ক‌মিশন।

শেয়ার করুন