০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৫

রাবি মেডিক্যালে জনবল ঘাটতি

ইউএনএ প্রতিবেদক
  • আপডেট: ০৮:২৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / 2

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিক্যাল সেন্টার   – ছবি : ইউএনএ

জনবল সংকটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিক্যাল সেন্টারে। প্রায় ছয় দশক পেরোলেও জনবল ঘাটতির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না মেডিক্যাল সেন্টারটি। সংশ্লিষ্টদের দাবি রাবি প্রশাসনের অবহেলা এর অন্যতম কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৫ বছর পরেই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৫৮ সালে মেডিকেল সেন্টারটি চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

জুলাই বিপ্লবের পর অন্যান্য অনেকগুলো জায়গায় এডহক নিয়োগ দেয়া হলেও মেডিক্যাল সেন্টারটিতে এমন কোন উদ্যোগ নেয়নি রাবি প্রশাসন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হলেও জনবল সংকটে যেসব সেবা বন্ধ সেগুলোতে নজর দিচ্ছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু এই স্বল্প পদের বিপরীতেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৪ জন। অবসরে যাওয়া ২ চিকিৎসককে চুক্তিভিত্তিক এবং একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। মোট ৩৬টি পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১ পদই পড়ে রয়েছে ফাঁকা।

এদিকে সেন্টারে ২ জন পুরুষসহ মোট ৬ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তা ২ জনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ৬ জনের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন। নাক-কান-গলা, মনোরোগ, অর্থোপেডিক ও গাইনোকোলোজিস্ট কোনো চিকিৎসক নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিক্যাল সেন্টারটিতে নেই কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট, পেশেন্ট বেড ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন চ্যানেল। একটি ইসিজি মেশিন আছে, তবে সেটা পরিচালনা করার জন্য একজনও স্পেসালিস্ট নেই। সম্প্রতি ইমারজেন্সী সেকশন থেকে একজন স্টাফকে এনে ইসিজি মেশিনটি সচল রাখা হলেও বন্ধ রয়েছে সেবা। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটা পরিচালনার জন্য পূর্ণকালীন টেকনোলোজিস্ট নেই। এছাড়াও মেডিক্যাল সেন্টারটিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকলেও কোন প্যাথলজি ডাক্তার নেই। শিক্ষার্থীরা যখন সেবা নিতে আসছেন প্যাথলজি ডাক্তার না থাকায় শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ রাখছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর সেবাদানের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা মোট ৪ টি। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে বিপুল সংখ্যক এই শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪ টি অ্যাম্বুল্যান্স পর্যাপ্ত নয় বলে জানায় মেডিক্যাল সেন্টার সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি সাধারণ কিছু ওষুধ সবাইকেই দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময়ই যথাযথ ওষুধ পান না তারা। এদিকে প্রতিবছর একেকজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি বাবদ গুনতে হয় ১০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের দেয়া মোট এই অর্থের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আছিয়া আকতার স্মরণী বলেন, চিকিৎসা ফি নামে আমাদের যেই টাকা নেওয়া হয় আমার মনে হয়না সেটির যথাযথ প্রয়োগ এই সেন্টারটিতে হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, আমি জানি না কেন এটিকে মেডিক্যাল সেন্টার বলা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থতা তো দূরে থাক, এখানে সাধারণ রোগের চিকিৎসাও পাওয়া যায় না, রোগীকে ছুটতে হয় রামেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শূন্য ১৮ টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। এদিকে বিগত সরকারের পতন হলে কর্তব্যরত আরও ৪ জন ডাক্তার পদত্যাগ করেন। এতে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।

সর্বশেষ একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে শূন্য পদসংখ্যা ২১ টি। কথা হয় রাবি মেডিক্যাল সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাফরুহা সিদ্দিকা লিপির সাথে। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারে জনবল সংকট অনেক বড় একটি বাঁধা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গেলে বারবার তারা শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এই প্রশাসন আসার পর আমি বারবার তাদের কাছে গিয়েছি। আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। তারা যে খুব বেশি কিছু করছেন সেটা বলার সুযোগ নেই। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। অবসরে যাওয়া আমার দুই সহকর্মী চুক্তিতে আবারও জয়েন করেছেন। তবে এটি যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। এখনও আমাদের একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। আমি প্রশাসনকে বলবো তারা যেন দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।

এদিকে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব জানান, আমরা মেডিক্যাল সেন্টার নিয়ে কাজ করছি। সর্বশেষ একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও কয়েকজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানান, আমরা দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। এছাড়াও প্যাথলজি চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারেও একই কথা বলেন তিনি।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

রাবি মেডিক্যালে জনবল ঘাটতি

আপডেট: ০৮:২৯:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিক্যাল সেন্টার   – ছবি : ইউএনএ

জনবল সংকটে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) মেডিক্যাল সেন্টারে। প্রায় ছয় দশক পেরোলেও জনবল ঘাটতির কারণে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারছে না মেডিক্যাল সেন্টারটি। সংশ্লিষ্টদের দাবি রাবি প্রশাসনের অবহেলা এর অন্যতম কারণ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মাত্র ৫ বছর পরেই স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৫৮ সালে মেডিকেল সেন্টারটি চালু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত কখনোই পর্যাপ্ত জনবল নিয়োগ দেয়নি কর্তৃপক্ষ।

জুলাই বিপ্লবের পর অন্যান্য অনেকগুলো জায়গায় এডহক নিয়োগ দেয়া হলেও মেডিক্যাল সেন্টারটিতে এমন কোন উদ্যোগ নেয়নি রাবি প্রশাসন। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেয়া হলেও জনবল সংকটে যেসব সেবা বন্ধ সেগুলোতে নজর দিচ্ছেন না তারা।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে রাবি মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসকের পদ রয়েছে ৩৬টি। কিন্তু এই স্বল্প পদের বিপরীতেও চিকিৎসক আছেন মাত্র ১৪ জন। অবসরে যাওয়া ২ চিকিৎসককে চুক্তিভিত্তিক এবং একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। মোট ৩৬টি পদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১ পদই পড়ে রয়েছে ফাঁকা।

এদিকে সেন্টারে ২ জন পুরুষসহ মোট ৬ জন নার্স থাকার কথা থাকলেও যাত্রা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত তা ২ জনেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইমার্জেন্সি মেডিক্যাল অফিসার ৬ জনের বিপরীতে রয়েছেন ৩ জন। নাক-কান-গলা, মনোরোগ, অর্থোপেডিক ও গাইনোকোলোজিস্ট কোনো চিকিৎসক নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেডিক্যাল সেন্টারটিতে নেই কোনো মাইক্রো বায়োলোজিস্ট, পেশেন্ট বেড ও পর্যাপ্ত অক্সিজেন চ্যানেল। একটি ইসিজি মেশিন আছে, তবে সেটা পরিচালনা করার জন্য একজনও স্পেসালিস্ট নেই। সম্প্রতি ইমারজেন্সী সেকশন থেকে একজন স্টাফকে এনে ইসিজি মেশিনটি সচল রাখা হলেও বন্ধ রয়েছে সেবা। ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন থাকলেও সেটা পরিচালনার জন্য পূর্ণকালীন টেকনোলোজিস্ট নেই। এছাড়াও মেডিক্যাল সেন্টারটিতে পর্যাপ্ত অবকাঠামো থাকলেও কোন প্যাথলজি ডাক্তার নেই। শিক্ষার্থীরা যখন সেবা নিতে আসছেন প্যাথলজি ডাক্তার না থাকায় শুধুমাত্র প্রাথমিক চিকিৎসাতেই সীমাবদ্ধ রাখছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকরা।

প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর সেবাদানের জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের সংখ্যা মোট ৪ টি। এর মধ্যে একটি ব্যবহার করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের জন্য। তবে বিপুল সংখ্যক এই শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ৪ টি অ্যাম্বুল্যান্স পর্যাপ্ত নয় বলে জানায় মেডিক্যাল সেন্টার সংশ্লিষ্টরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি সাধারণ কিছু ওষুধ সবাইকেই দেওয়া হয়। অধিকাংশ সময়ই যথাযথ ওষুধ পান না তারা। এদিকে প্রতিবছর একেকজন শিক্ষার্থীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ফি বাবদ গুনতে হয় ১০০ টাকা। শিক্ষার্থীদের দেয়া মোট এই অর্থের সংখ্যাটা নেহাৎ কম নয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ভূমি প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আছিয়া আকতার স্মরণী বলেন, চিকিৎসা ফি নামে আমাদের যেই টাকা নেওয়া হয় আমার মনে হয়না সেটির যথাযথ প্রয়োগ এই সেন্টারটিতে হয়।

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিবুল হাসান বলেন, আমি জানি না কেন এটিকে মেডিক্যাল সেন্টার বলা হচ্ছে। গুরুতর অসুস্থতা তো দূরে থাক, এখানে সাধারণ রোগের চিকিৎসাও পাওয়া যায় না, রোগীকে ছুটতে হয় রামেকে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, শূন্য ১৮ টি পদের বিপরীতে ২০২০ সালের ২৪ অক্টোবর চিকিৎসক পদে ১৩ জনের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। তবে তাদের মৌখিক পরীক্ষা না হওয়ায় নিয়োগ কার্যক্রম আটকে আছে। এদিকে বিগত সরকারের পতন হলে কর্তব্যরত আরও ৪ জন ডাক্তার পদত্যাগ করেন। এতে বর্তমানে শূন্য পদের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ জনে।

সর্বশেষ একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়ায় বর্তমানে শূন্য পদসংখ্যা ২১ টি। কথা হয় রাবি মেডিক্যাল সেন্টারের চিফ মেডিক্যাল অফিসার মাফরুহা সিদ্দিকা লিপির সাথে। তিনি জানান, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের মেডিক্যাল সেন্টারে জনবল সংকট অনেক বড় একটি বাঁধা ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে গেলে বারবার তারা শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন। এই প্রশাসন আসার পর আমি বারবার তাদের কাছে গিয়েছি। আমাদের সমস্যার কথা বলেছি। তারা যে খুব বেশি কিছু করছেন সেটা বলার সুযোগ নেই। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন। অবসরে যাওয়া আমার দুই সহকর্মী চুক্তিতে আবারও জয়েন করেছেন। তবে এটি যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। এখনও আমাদের একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন শতাধিক রোগী দেখতে হয়। আমি প্রশাসনকে বলবো তারা যেন দ্রুত এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেন।

এদিকে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীব জানান, আমরা মেডিক্যাল সেন্টার নিয়ে কাজ করছি। সর্বশেষ একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং আরও কয়েকজন প্রক্রিয়াধীন রয়েছেন। চুক্তিভিত্তিক চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হবে কিনা এ বিষয়ে জানান, আমরা দায়িত্বরতদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। এছাড়াও প্যাথলজি চিকিৎসক নিয়োগের ব্যাপারেও একই কথা বলেন তিনি।

শেয়ার করুন