নতুন কর্মসূচির ঘোষণা
সরকারকে কড়া হুঁশিয়ারি হেফাজতের

- আপডেট: ০৭:৪১:২০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
- / 4
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে হেফাজত নেতারা। ।ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কুরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করবে না। তাই শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চার দফা দাবিতে আয়োজিত মহাসমাবেশে হেফাজত নেতারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, শেখ হাসিনা টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে ইসলামপন্থীদের সঙ্গে যে আচরণ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকার অন্তত তা করবেন না। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনকে কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী আখ্যায়িত করে এ ধরনের কোনো আইন বা নীতি বাস্তবায়ন না করতে সরকারকে সতর্ক করেন তারা। অন্যথায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হেফাজত নেতারা।
সংগঠনের সভাপতি আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে দেশের প্রায় সব শীর্ষ আলেমই উপস্থিত ছিলেন এই মহাসমাবেশে। এছাড়া দৈনিক আমার দেশের সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন।
সকাল ৯টা থেকে মহাসমাবেশ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলেও ভোর থেকেই জনতার ঢল নামে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। লাখো মানুষ জড়ো হন সেখানে। এতে কানায় কানায় ভরে যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
মহাসমাবেশের শেষের দিকে সংগঠনটির নায়েবে আমির মাওলানা মাহফুজুল হক ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণাসহ ১২ দফা দাবি জানায় হেফাজতে ইসলাম।
হেফাজতের দাবিগুলো হলো বর্তমান নারী কমিশন বাদ দিয়ে নতুন করে কমিশন গঠন করে যেখানে আলেম ও উলামাদের যুক্ত করা, সংবিধানে আল্লাহর ওপর পুনঃবিশ্বাস স্থাপন ও বহুত্ববাদ বাতিল করা, শাপলা চত্বরের হত্যার বিচার করা, আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা করে তাদের বিচার করা, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করা, চিন্ময় দাসের জামিন বাতিল করা, আওয়ামী লীগের আমলে আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে দেওয়া মামলা প্রত্যাহার করা, প্রাইমারি থেকে ইসলামি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, রাখাইনে করিডোর দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে ও কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করা।
এদিকে এসব দাবিতে আগামী ২৩ মে সারাদেশে বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম।
মহাসমাবেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে হেফাজত নেতারা বলেন, শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি বাস্তবায়ন করার সাহস করবেন না। অবিলম্বে প্রতিবেদনসহ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ঘোষণা করুন। শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করুন।
বক্তারা আরও বলেন, আপনারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন করেছেন, জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য কমিশন করেছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, কিন্তু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য কেন তদন্ত কমিশন গঠন করলেন না?
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হলেও হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এসব মামলা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলামের নেতারা বলেন, সরকার নারীবিষয়ক যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এর সদস্যরা নারী না পুরুষ তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী। তাদের সংস্কার প্রতিবেদন যদি পাস করা হয় তাহলে জীবন দিয়ে রুখে দেওয়া হবে। মার্চ টু ঢাকার কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলাম।
নারীর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে তিন মাসব্যাপী বিভাগীয় সম্মেলন এবং আগামী ২৩ মে দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
শনিবার (৩ মে) ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এক মহাসমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনটির মহাসচিব সাজিদুর রহমান।
সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে হেফাজতের মহাসচিব বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিন মাসের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ২৩ মে বাদ জুমা চার দফা দাবির ভিত্তিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল করা হবে।
সমাবেশে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী আমিরের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে গেলে আমরা কিছুটা হলেও স্বাধীনতার স্বাদ পাই। কিন্তু ষড়যন্ত্র এখনো থেমে নেই। তাই আগামীর আন্দোলনে আরও দৃঢ় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এনজিওদের প্ররোচনায় ইসলামবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে হেফাজত তা কোনোভাবেই মেনে নেবে না। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন এবং ধর্ম অবমাননা আইন বাতিলের সুপারিশ প্রত্যাহার করতে হবে। বরং ধর্ম অবমাননাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন হেফাজতের নায়েবে আমির এবং বেফাকুল মাদারেসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক। তিনি বলেন, নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও কোরআনবিরোধী প্রতিবেদক বাতিল করে আলেমদের সমন্বয়ে নতুন কমিশন গঠন করতে হবে। সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে এবং ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি বাদ দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শাপলা চত্বরে ও জুলাইয়ের আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের রক্ত বৃথা যাবে না। সেই গণহত্যার বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগকে “খুনি দল” আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, তাদের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করতে হবে।
গণমাধ্যম সংস্কারের কথাও তুলে ধরেন হেফাজতের নেতারা। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয় এমন সংবাদ ও প্রচার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানান তারা।