১৬ শতাংশ মানুষ ডিপ্রেশনে ভুগছে

- আপডেট: ১১:০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৯ মে ২০২৫
- / 11
ছবি : সংগৃহীত
ডিপ্রেশন একটি জটিল রোগ। কেন এ রোগ হয় নির্দিষ্ট করে কারও পক্ষেই বলা সম্ভব নয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রেই কিছু কমন কারণ থাকে যার জন্য এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে। যেসব কারণে মানুষ কর্মহীন-নিস্পৃহ হয়ে পড়ে ডিপ্রেশন তার অন্যতম। দেশের ১৬ শতাংশ মানুষ এখন ডিপ্রেশনে ভুগছে।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে হলে সর্বপ্রথম এর চিকিৎসার প্রয়োজন। সঙ্গে আরও বেশি করে প্রয়োজন কাছের কোনো মানুষের। যে তাকে খুব ভালো করে বোঝে, জানে, এবং মনের যত্ন নিতে পারবে এমন কোন প্রিয় মানুষ তাকে একটু সঙ্গ দিলে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পাওয়া খুব সহজ হয়ে উঠবে। এছাড়া মেডিসিন, দেহের ওজন বাড়তে দেবেন না, পুষ্টিকর খাদ্য, নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
মানসিক অবসাদ থেকে মুক্তি পাওয়াটা কোনো সমস্যা নয়, সমস্যা হলো মানসিক অবসাদের কবলে পড়া। যখন মানুষ নিজেকে নিয়ে নিজে খুশি না হয় নিজের খুশির ভার তুলে দেয় অন্যের হাতে, নিজের ভালো থাকাটা নির্ভর করে অন্যের উপরে তখনই মানুষ ডিপ্রেশন এ ভোগে।
ডিপ্রেশনের কয়েকটি উপসর্গ :
* কাজে উৎসাহ না পাওয়া। এমনকি এমন সব কাজেও যা তিনি একসময় খুব আগ্রহ নিয়ে করতেন* খিদে কমে যাওয়া।
* নিজেকে ব্যর্থ ভাবা বা অহেতুক অনুশোচনায় ভোগা।
*ঘুম বেড়ে যাওয়া অথবা কমে যাওয়া।
* অস্থিরতা।
* কাজে ধীরগতি।
* সবসময় আলস্য আর ক্লান্তি অনুভূতি, শরীরে শক্তি না পাওয়া। ডিপ্রেশনের কোনো কোনো রোগীকে দিনের পর দিন বিছানায় কাটিয়ে দিতে দেখা যায়।
* আত্মহত্যার চিন্তা।
এই উপসর্গগুলোর অন্তত পাঁচটি যদি কারো মধ্যে থাকে এবং টানা দু’সপ্তাহ বিরাজ করে তখন মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, তার একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডিপ্রেশনে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিষ্কেও কিছু পরিবর্তন দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তাদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব এবং হিপোক্যাম্পাসের আকৃতি ছোট হয়ে গেছে, কমেছে সেরেটনিন, নরএপিনেফ্রাইন এবং ডোপামিনের মতো নিউরোট্রান্সমিটারের উৎপাদন, এলোমেলো হয়ে গেছে তাদের সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহছন্দ।
সেই সাথে দেখা গেছে REM ঘুম বা অগভীর ঘুমচক্রেররও কিছু স্পষ্ট পরিবর্তন।
তবে এগুলো কোনোটাই রোগীকে বাইরে থেকে দেখে বা শুনে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা জানেনও না যে ডিপ্রেশন কেন হয়। আসলে জিন এবং পরিবেশ এ দুয়ের একটা জটিল মিথষ্ক্রিয়ার মধ্য দিয়ে উদ্ভুত হয় ডিপ্রেশন।
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য নিচের পয়েন্টগুলো সহায়ক হতে পারে :
▶ রুটিনমাফিক চলা
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন জীবনকে একটি রুটিনের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। প্রতিদিনের কাজকর্মকে যদি একটা নিয়মের মধ্যে বেঁধে ফেলা যায়, তবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।
▶ লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা
লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। ডিপ্রেশনে যেহেতু কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করে না; তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে।
ধরা যাক প্রথম দিন আপনি ঠিক করলেন আপনি আজ একটা মজার কিছু রান্না করবেন। যদি আপনি সে কাজটা সঠিকভাবে করতে পারেন তবে পরদিন আরও একটু বেশি কিছু করার কথা চিন্তা করতে হবে। এভাবে ধীরে ধীরে কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বাড়াতে পারলে একসময় ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
▶ নিয়মিত ব্যায়াম করা
প্রতিদিন অল্পকিছু সময় ব্যায়াম করলে তা আপনার শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখবে। ব্যায়াম করা মানে, ম্যারাথন দৌড় টাইপ কিছু না, আপনি যদি প্রতিদিন কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করেন তবুও তা আপনার মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা আপনাকে ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করবে।
▶ সুষম খাদ্য গ্রহণ
সুষম খাদ্য গ্রহণে ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি মেলে। লক্ষ রাখতে হবে যেন খাবারে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ থাকে। সাইক্রিয়াটিস্টদের মতে, যেসব খাবারে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ফলিক অ্যাসিড থাকে সেসব খাবার ডিপ্রেশন কমাতে সহায়তা করে।
▶ অনিদ্রা দূর করা
পর্যাপ্ত ঘুম ডিপ্রেশন কমায়। ডিপ্রেশনের রোগীদের নিদ্রাহীনতা দেখা দেয়। তাই, প্রথমেই ঘুম সমস্যার সমাধান করতে হবে। প্রতিদিনের জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন ঠিক সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। দিনের বেলার হালকা ঘুমের অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে। শোবার ঘর থেকে টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল এগুলো সরিয়ে রাখতে হবে। এভাবেই অনিদ্রা রোগ ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।
▶ ইতিবাচক চিন্তা করা
ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকলে মানুষের মনে বিভিন্ন রকম নেগেটিভ চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকে। যেমন-আমিই বুঝি সবচেয়ে খারাপ, আমার মতো দুঃখ কারও নেই, আমি সবার চেয়ে অসুস্থ, আমি ব্যর্থ একজন মানুষ-এ ধরনের চিন্তাগুলো সুস্থ হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তাই, এ নেগেটিভ চিন্তাগুলোকে মন থেকে দূর করে পজিটিভলি চিন্তা করার চেষ্টা করতে হবে। যুক্তি দিয়ে সবকিছুর বিচার করতে হবে। আশাহত হওয়া যাবে না কোনোভাবেই।
▶ আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো
নতুন কিছু করার চেষ্টা করতে হবে। মজার কোনো কাজ। যেমন, নতুন কোথাও ঘুরতে যাওয়া, মজার মজার বই পড়া, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া। মন ভালো রাখার সবরকম চেষ্টা করতে হবে। মন ভালো থাকলে ডিপ্রেশন কেটে যাবে একসময়।
▶ সাইকোলজিস্টের পরামর্শ গ্রহণ
ডিপ্রেশন পুরোপুরি না ভালো হওয়া পর্যন্ত পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে।
মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আপনাকে কেউ কম ভালোবাসলে আপনি কষ্ট পান, আপনাকে কেউ দেখতে খারাপ বললে আপনি দুঃখ পান, কেউ আপনার থেকে কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে গেলে আপনার নিজেকে অপরাধী মনে হয়, তার মানে আপনার হাতে কিছু নেই আপনি জীবন নির্ভর করেন অন্যের ইচ্ছা অনুসারে তাহলে আপনাকে একবার নয় বারবার ডিপ্রেশন এ ভুগতে হবে। তাই ডিপ্রেশন এর হাত থেকে রেহাই পেতে চাইলে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করুন।