পরীক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব

- আপডেট: ০১:২২:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
- / 3
প্রতিকী ছবি
থ্যালাসেমিয়া হলো জন্মগত অর্থাৎ জেনেটিক রক্তরোগ। বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দা মাসুমা রহমান জানান, দেশে সরকারি পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা এখনো সীমিত। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২০০২ সাল থেকে ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তারা চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, সচেতনতা ছাড়া এ রোগ প্রতিরোধ সম্ভব নয়।
এ ব্যাপারে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও বোন-ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ফিজিশিয়ান এবং বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া সমিতির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. এম এ খান বলেন, থ্যালাসেমিয়া এক ধরনের রক্তশূন্যতা, যেটা জন্মগতভাবে এক পরিবার থেকে আরেক পরিবারে বংশ পরম্পরায় চলতে থাকে।
মানুষের শরীরের যেকোনো বৈশিষ্ট্য প্রকাশের জন্য কমপক্ষে দুটি জিন দায়ী, যেটা ক্রোমোজোমের মধ্যে থাকে। শরীরের রং, চুলের রং, চোখের রং, শারীরিক গঠন এগুলো নির্ধারিত হয় জেনেটিকভাবে।
থ্যালাসেমিয়াতে হিমোগ্লোবিন তৈরির হার কমে যায়। আর কতখানি কমবে তা নির্ভর করে একটি বা দুটি জিনই ত্রুটিপূর্ণ কি না তার ওপর। রক্তের আরবিসি বা লৌহিত-রক্ত কণিকার মূল উপাদান হলো হিমোগ্লোবিন। এই হিমোগ্লোবিনই জীবনীশক্তি অক্সিজেন বহন করে দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে দেয়। হিমোগ্লোবিনের মধ্যে রয়েছে গ্লোবিন নামের প্রোটিন, যার রয়েছে দুটি আলফা ও দুটি বিটা গ্লোবিন চেইন। আলফা-জিন ও বিটা-জিন এই আলফা ও বিটা গ্লোবিন চেইনের পরিমাণ ও বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে।
মানবদেহে ১১তম এবং ১৬তম ক্রোমোজোমে এই জিনগুলো অবস্থান করে। এই দুটি জিনের একটা বাবার কাছ থেকে, আরেকটা মায়ের কাছ থেকে আসে। কোনো কারণে যদি একটা জিনের মধ্যে ত্রুটি থাকে অর্থাৎ বাবা কিংবা মায়ের জিনের মধ্যে ত্রুটি থাকে, তাহলে হিমোগ্লোবিন তৈরির পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় সামান্য একটু কম হয়। তখন তাদেরকে বলা হয় থ্যালাসেমিয়ার বাহক বা ক্যারিয়ার( বা মাইনোর)। কিন্তু যদি হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য যে দুটি জিন দরকার সেই দুটি জিনের মধ্যেই ত্রুটি থাকে, তবে হিমোগ্লোবিন তৈরির পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং রক্তকণিকাগুলো সময়ের আগেই ভেঙে যায়। এতে করে রক্তশূন্যতা দেখা দেবে, হিমোগ্লোবিন অনেক কমে যাবে, শিশুকাল থেকেই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাবে। তাদেরকে থ্যালাসেমিয়ার রোগী বা থ্যালাসেমিয়া মেজর বলা হয়।
তাদেরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিয়মিত রক্ত নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। আবার কিছু থ্যালাসেমিয়া রোগীর উপসর্গ ও রক্তের প্রয়োজন মাঝামাঝি অবস্থানে থাকে বিধায় তাদেরকে থ্যালাসেমিয়া ইন্টারমেডিয়া বলে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১ কোটি ৮২ লাখ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। নারী ও পুরুষ উভয়েই বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। ফলে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮ হাজার শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্ম নেয়।
বাহক হারের দিক থেকে রংপুর বিভাগ সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ (২৭.৭ শতাংশ)। এরপর রাজশাহীতে ১১.৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ১১.২ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৯.৮, খুলনা ও ঢাকায় ৮.৬ শতাংশ, বরিশালে ৭.৩ শতাংশ এবং সিলেটে সবচেয়ে কম ৪.৮ শতাংশ। বয়সভেদেও এই রোগের বাহকত্বের পার্থক্য রয়েছে। ১৪ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মাঝে এই হার সবচেয়ে বেশি।
রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ও মুগদা মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, যদি দুইজন বাহকের বিয়ে হয় তাহলে তাদের সন্তানের ২৫ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। ৫০ শতাংশ বাহক হয় এবং ২৫ শতাংশ একেবারেই সুস্থ থাকে। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সময়মতো পরীক্ষা ও সচেতনতার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।