কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ’র নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

- আপডেট: ০২:১৪:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / 189
ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের মেধা চত্বরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করে ছাত্ররা – ছবি : ইউএনএ
কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ সব কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে রোববার (১৮ মে) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে বলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।
ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি মামলার রায় স্থগিতের শুনানি নিয়ে তারা শনিবার (১৭ মে) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয়।
কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কারিগরি ছাত্র আন্দোলন, বাংলাদেশ দেশের কারিগরি শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় একটি অরাজনৈতিক ও অগ্রণী ছাত্র সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে তারা জানা, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের পদোন্নতি মামলার রায় বাতিলের দাবিতে ১৮ মে সারাদেশে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটগুলোতে বিক্ষোভ করা হবে। কারণ সম্প্রতি হাইকোর্ট কর্তৃক ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদে পদোন্নতি সংক্রান্ত মামলার রায় স্থগিত করেছে এবং পরবর্তী শুনানির সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করেছে ১৮ মে।
কারিগরি ছাত্র সমাজ আগের রায়কে সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছে । তারা এই মামলার রায় সম্পূর্ণ বাতিল চায়।
সংবাদ সম্মেলনে তারা বলেন, ক্রাফট ইন্সট্রাক্টরদের মূল কাজ হলো ল্যাব পরিচালনায় সহায়তা এবং প্রাকটিক্যাল ক্লাসে যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা। শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে তারা এসএসসি অথবা এইচএসসি ভোকেশনাল পাস। এই যোগ্যতায় তারা ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের পাঠদানে অক্ষম এবং অযোগ্য। তাই শিক্ষক পদে তাদের পদোন্নতি অযৌক্তিক। তাদের জন্য মন্ত্রণালয় ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা চালাচ্ছে যে কিভাবে তাদের সিস্টেমে প্রমোশন দেওয়া যায়। তারাও তাদের সিস্টেমে প্রমোশন পাবে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। প্রমোশন পাওয়ার অধিকার সবার আছে তবে সেটা হতে হবে যৌক্তিক।
তারা আরও বলেন, জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর (শিক্ষক) পদে পদোন্নতির জন্য ভিন্ন কোনো মানদণ্ডে বা বাছাই ছাড়া সুযোগ সৃষ্টি করা যাবে না। শিক্ষকদের জুনিয়র ইন্সট্রাক্টর পদটি কেবলমাত্র ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিযারিং ডিগ্রিধারীরা (বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন) এর মাধ্যমে বাছাইকৃত হয়ে নিয়োগ পায়। যার এই পদে আসতে চায় তারা নির্দিষ্ট যোগ্যতা নিয়ে বিপিএসি এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে যোগ্যতার ভিত্তিতে আসতে হবে।
কোনো স্পেশালভাবে এই পদে কারো পদোন্নতি দেয়ার সুযোগ নাই। আমরা চাই, ১৮ তারিখ হাইকোর্ট এই মামলাটি বাতিল করে দিয়ে কারিগরি শিক্ষার স্বচ্ছতা ও মান রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এদিকে কারিগরি ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ছয় দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ২১ দিন সময় নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরি করেছে। যা ১৩ মে প্রাথমিক খসড়া ছাত্র প্রতিনিধিদের কাছে দেওয়া হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সেটি যাচাই-বাছাই করে এবং ছাত্র প্রতিনিধিদেরকেও যাচাই-বাছাই করার জন্য দেওয়া হয়।
সেই দিন ঢাকাস্থ সকল ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে তারা আইডিইবিতে জরুরি মিটিং করেন। পরদিন ১৪ মে বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা করেন। প্রাথমিক রূপরেখায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দাবির অনুপস্থিতির কারণে তাদের ছাত্র প্রতিনিধি ও কারিগরি ছাত্র আন্দোলনের প্রধান কার্যনির্বাহী উপদেষ্টা রহমত উল আলম শিহাব তাতে স্বাক্ষর করেননি।
পরবর্তীতে সকল প্রতিনিধির মতামতের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বিষয়াদি সংযোজন করে ১৫ মে কমিটির সকল সদস্য হতে স্বাক্ষরিত হয়ে পত্রটি শিক্ষা উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো হয়েছে।
রূপরেখায় যে বিষয়গুলো পরবর্তী সংশোধনে গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলো হলো :
* ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা। * ডিপ্লোমা শিক্ষা ইংরেজি ভার্সনে রূপান্তর।
* বেসরকারি খাতে ন্যূনতম ১০ম গ্রেড ভিত্তিক বেসিক বেতন প্রদান ইস্যু্।
* বেসরকারি পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাটাচমেন্ট ভাতা প্রদান।
* কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিদের ইস্যু।
সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, বেসরকারি পলিটেকনিকগুলোকে এমপিওভুক্ত করা এবং কারিগরি ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় নামে স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা আমাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দাবি। যদিও এটি রূপরেখা পত্রে সরাসরি আসেনি। কিন্তু মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে ধাপে ধাপে বাস্তবায়নের কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আশা করব এই বিষয় মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার্থীদের পুনরায় রাজপথে নামা থেকে বিরত রাখবে।
আমরা উন্নত বিশ্বের আদলে একটি পূর্ণাঙ্গ কারিগরি বিশ্ববিদ্যালয় দ্রুত প্রতিষ্ঠা করার দাবি করছি। ইতোমধ্যে ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৬-২৭ সেশন থেকে দুটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চালু হবে যেখানে ১০০% ডিপ্লোমা শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ পাবে এবং এর পরবর্তী ২০২৭-২৮ সেশন থেকে দুটি ইঞ্জিনিযারিং কলেজ চালু হবে এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক অগ্রগতি।