০৮:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

প্রতিবছর একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ০২:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • / 3

কিডনির বড় শত্রু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস -ছবি : ফাইল ফটো

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি হলো কিডনি। যা শরীরের বিপাকীয় বর্জ্য নিঃসরণ নিশ্চিত করে রক্ত পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি নীরবে নিভৃতেও বিকল হয়ে যেতে পারে। কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই কিডনিতে দেখা দিতে পারে প্রাণঘাতী সব রোগ। এমনটি অনেকেরই অজানা।

ডাক্তারের কাছে রোগীরা এমন অবস্থায় উপস্থিত হন যখন আর ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই সময় থাকতেই কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া জরুরি।

যাদের কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কোনো লক্ষণ না থাকলেও তাদের উচিত কিডনির কার্যক্রম ঠিক আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেওয়া। কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি কার বেশি এবং কোন লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্র কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। তা নিয়ে বরিশাল সিএমএইচের ক্লাসিফায়েড মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, কিডনির বড় শত্রু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। কিডনির ওপর এ রোগটির প্রভাব এতটাই প্রকট যে প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে একজনই কিডনি বিকল হওয়ার শিকার।

যাদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে অথবা মাত্রই ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে তাদের অবশ্যই অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি কিডনির অবস্থাও পরীক্ষা করাতে হবে। যেসব রোগীর টাইপ-২ ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে তাদের অবশ্যই প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছর পর প্রতিবছর একবার কিডনির অবস্থা জেনে নিতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ রোগেও কিডনির বড়সড় ক্ষতি হয়। প্রতি পাঁচজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মাঝে একজন কিডনি বিকলের শিকার। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি অবশ্যই ফিবছর কিডনির কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে হবে।

হৃদপিণ্ডের সমস্যায় দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে। সেটি বিকল হলে কিডনি বিকল হওয়ারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেয়। হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধমনিতে চর্বি জমে গেলে ঘটে ভীষণ বিপত্তি। এটিকে বলে ইশকেমিক হৃদরোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনিও ঝুঁকিগ্রস্ত। যাদের হৃদরোগ আছে, হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি তাদের অবশ্যই প্রতিবছর কিডনিও পরীক্ষা করাতে হবে।

বিভিন্ন অঙ্গের রক্তনালিতে চর্বি জমা হতে থাকলে সেসব অঙ্গ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন : মস্তিষ্কের রক্তনালিতে চর্বি জমে গেলেও হতে পারে স্ট্রোক। পায়ের রক্তনালিতে এমনটি হলে হাঁটার সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। রক্তনালির সমস্যায় ভুগছেন যারা তারা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

বেশ কিছু কারণে প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া স্নায়বিক দুর্বলতার কারণেও প্রস্রাবের প্রবাহে সমস্যা হতে পারে। কিডনি থেকে প্রস্রাব বের হওয়ার পথে পাথর জমে গেলেও প্রস্রাবের বেগে হতে পারে বিপত্তি। এগুলো সবই কিডনিস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। এ সমস্যায় ভুগছেন যেসব রোগী তাদের কিডনি কার্যক্রমও নিরীক্ষা করা দরকার।

বেশ কিছু ওষুধ কিডনির শত্রু। এর অপরিমিত ব্যবহার কিডনির সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেদনানাশক ওষুধ বা পেইনকিলার। এ ছাড়া কিছু ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। যেমন : লিথিয়াম, সাইক্লোস্পোরিন, কিছু ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ। এসব ওষুধ গ্রহণের সময় কিডনি কার্যক্রম পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস (এসএলই) নামের বাত রোগেও বেশ ক্ষতি হয় কিডনির। এ ছাড়া মাল্টিপল মায়ালোমাসহ আরো কিছু রোগে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চিকিৎসকদের ভাষায় এ লক্ষণের নাম ইডিমা। এমনটি দেখা দেওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ইডিমা। শরীরের কোথাও পানি জমে গেলে দ্রুত কিডনি পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।

 

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

প্রতিবছর একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে

আপডেট: ০২:৩৪:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

কিডনির বড় শত্রু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস -ছবি : ফাইল ফটো

শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোর একটি হলো কিডনি। যা শরীরের বিপাকীয় বর্জ্য নিঃসরণ নিশ্চিত করে রক্ত পরিষ্কার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এমন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গটি নীরবে নিভৃতেও বিকল হয়ে যেতে পারে। কোনো বড় লক্ষণ ছাড়াই কিডনিতে দেখা দিতে পারে প্রাণঘাতী সব রোগ। এমনটি অনেকেরই অজানা।

ডাক্তারের কাছে রোগীরা এমন অবস্থায় উপস্থিত হন যখন আর ডায়ালিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না। তাই সময় থাকতেই কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া জরুরি।

যাদের কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কোনো লক্ষণ না থাকলেও তাদের উচিত কিডনির কার্যক্রম ঠিক আছে কি না তা নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে জেনে নেওয়া। কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকি কার বেশি এবং কোন লক্ষণগুলো দেখা দেওয়া মাত্র কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। তা নিয়ে বরিশাল সিএমএইচের ক্লাসিফায়েড মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ বলেন, কিডনির বড় শত্রু অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। কিডনির ওপর এ রোগটির প্রভাব এতটাই প্রকট যে প্রতি তিনজন ডায়াবেটিক রোগীর মধ্যে একজনই কিডনি বিকল হওয়ার শিকার।

যাদের ডায়াবেটিস নেই কিন্তু এর লক্ষণ দেখা যাচ্ছে অথবা মাত্রই ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে তাদের অবশ্যই অন্যান্য পরীক্ষার পাশাপাশি কিডনির অবস্থাও পরীক্ষা করাতে হবে। যেসব রোগীর টাইপ-২ ডায়াবেটিস নির্ণয় হয়েছে তাদের অবশ্যই প্রতিবছর অন্তত একবার হলেও কিডনি পরীক্ষা করাতে হবে। টাইপ-১ ডায়াবেটিক রোগীদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের পাঁচ বছর পর প্রতিবছর একবার কিডনির অবস্থা জেনে নিতে হবে।

উচ্চ রক্তচাপ রোগেও কিডনির বড়সড় ক্ষতি হয়। প্রতি পাঁচজন উচ্চ রক্তচাপের রোগীর মাঝে একজন কিডনি বিকলের শিকার। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত জরুরি। এর পাশাপাশি অবশ্যই ফিবছর কিডনির কার্যক্রম নিরীক্ষা করতে হবে।

হৃদপিণ্ডের সমস্যায় দেহের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে চাপ পড়ে। সেটি বিকল হলে কিডনি বিকল হওয়ারও মারাত্মক ঝুঁকি দেখা দেয়। হৃদপিণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধমনিতে চর্বি জমে গেলে ঘটে ভীষণ বিপত্তি। এটিকে বলে ইশকেমিক হৃদরোগ। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির কিডনিও ঝুঁকিগ্রস্ত। যাদের হৃদরোগ আছে, হৃদপিণ্ডের পাশাপাশি তাদের অবশ্যই প্রতিবছর কিডনিও পরীক্ষা করাতে হবে।

বিভিন্ন অঙ্গের রক্তনালিতে চর্বি জমা হতে থাকলে সেসব অঙ্গ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। যেমন : মস্তিষ্কের রক্তনালিতে চর্বি জমে গেলেও হতে পারে স্ট্রোক। পায়ের রক্তনালিতে এমনটি হলে হাঁটার সময় তীব্র ব্যথা হতে পারে। রক্তনালির সমস্যায় ভুগছেন যারা তারা কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।

বেশ কিছু কারণে প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হতে পারে। প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে গেলে অনেক সময় প্রস্রাব বাধাগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া স্নায়বিক দুর্বলতার কারণেও প্রস্রাবের প্রবাহে সমস্যা হতে পারে। কিডনি থেকে প্রস্রাব বের হওয়ার পথে পাথর জমে গেলেও প্রস্রাবের বেগে হতে পারে বিপত্তি। এগুলো সবই কিডনিস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। এ সমস্যায় ভুগছেন যেসব রোগী তাদের কিডনি কার্যক্রমও নিরীক্ষা করা দরকার।

বেশ কিছু ওষুধ কিডনির শত্রু। এর অপরিমিত ব্যবহার কিডনির সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বেদনানাশক ওষুধ বা পেইনকিলার। এ ছাড়া কিছু ওষুধ কিডনির ক্ষতি করে। যেমন : লিথিয়াম, সাইক্লোস্পোরিন, কিছু ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক এবং উচ্চ রক্তচাপের কিছু ওষুধ। এসব ওষুধ গ্রহণের সময় কিডনি কার্যক্রম পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

সিস্টেমিক লিউপাস ইরিথেমাটোসাস (এসএলই) নামের বাত রোগেও বেশ ক্ষতি হয় কিডনির। এ ছাড়া মাল্টিপল মায়ালোমাসহ আরো কিছু রোগে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

চিকিৎসকদের ভাষায় এ লক্ষণের নাম ইডিমা। এমনটি দেখা দেওয়ার পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনি রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দেয় ইডিমা। শরীরের কোথাও পানি জমে গেলে দ্রুত কিডনি পরীক্ষা করা খুবই জরুরি।

 

শেয়ার করুন