বিয়ারিংয়ের ত্রুটিতে খুলে পড়ে উড়োজাহাজের চাকা: বিমান কর্তৃপক্ষ

- আপডেট: ০৬:৩০:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
- / 4
সম্প্রতি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের চাকা খুলে পড়ে -ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি উড়োজাহাজের চাকা খুলে পড়ে। যদিও পরে যাত্রীদের নিয়ে নিরাপদে ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি। এ ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে দুইটি আলাদা কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সোমবার এক সংবাদ বিবৃতিতে ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বিয়ারিং কাজ না করার কারণে ওই ঘটনা ঘটে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। তবে ঠিক কী কারণে বিয়ারিং কাজ করলো না সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে কিছু জানানো হয়নি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বিয়ারিং ফেইলিওরের সঠিক কারণ তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রদানের পর জানা যাবে।
উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারী কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে কারিগরি টিম পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ১৬ মে দুপুরে ঢাকার উদ্দেশ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দর ছাড়ার কিছুক্ষণ পরেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ‘বিজি-৪৩৬’ ফ্লাইটের ল্যান্ডিং গিয়ারের পাশের একটি চাকা খুলে মাটিতে আছড়ে পড়ে। ফ্লাইটটিতে তখন ৭১ জন যাত্রী এবং দুইজন ক্রু ছিলেন। পরে বড় কোনো দুর্ঘটনা ছাড়াই বিমানটি ঢাকায় অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
ঘটনার গুরুত্ব বুঝে দ্রুত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারে বার্তা পাঠান পাইলট ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। সঙ্গে ছিলেন ফার্স্ট অফিসার জায়েদ। তাদের দক্ষ সিদ্ধান্তে বিমানটি ইমার্জেন্সি ঘোষণা করে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করে।
পরে কারিগরি পরিদর্শনে দেখা যায়, বিমানটির বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা (দ্বিতীয় নম্বর) অনুপস্থিত। সেটিই পরে কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিমানের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ঘটনার পরপরই উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ডি-হেভিল্যান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসে বিষয়টি খতিয়ে দেখবে বলে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে। বিমানের প্রকৌশল বিভাগ থেকে তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত সব ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের চাকা পরীক্ষা করা হয়েছে।
এদিকে বিমানের ভাষ্য, উড়োজাহাজটি আবার যাত্রীসেবায় ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতকারকের পরামর্শ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিমানের বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ফ্লাইট পরিচালনাবিষয়ক ম্যানুয়ালের ৮ দশমিক ২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এ ধরনের পরিস্থিতিতে যাত্রা শুরুর বিমানবন্দরে না ফিরে গন্তব্য বিমানবন্দরে অবতরণ করতে পারেন বৈমানিক। সেই নির্দেশনাই পালন করেছেন ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ। বিমান কর্তৃপক্ষ তার সিদ্ধান্ত এবং দক্ষ পরিচালনার প্রশংসা করেছে।
বিমান জানায়, ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সের বহরে থাকা ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের ৩১টি উড়োজাহাজে গত তিন বছরে এ ধরনের চারটি চাকা সংক্রান্ত ঘটনা ঘটেছে।
২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ মডেলের উড়োজাহাজে চাকা সংক্রান্ত মোট ৫৯টি দুর্ঘটনার রেকর্ড রয়েছে। তবে এসব ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ‘রিডান্ডেন্সি’ প্রযুক্তির কারণে বড় ধরনের দুর্ঘটনায় রূপ নেয়নি।
বিমান বলছে, ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের প্রতিটি ল্যান্ডিং গিয়ারে দুটি করে চাকা থাকে। ফলে একটি চাকা বিকল হলেও, অন্যটি উড়োজাহাজকে নিরাপদে নামতে সহায়তা করে। এ ধরনের প্রযুক্তিগত ব্যাক-আপ যেকোনো বাণিজ্যিক উড়োজাহাজেই রাখা হয় যাতে ফ্লাইট সেফটির সর্বোচ্চ নিশ্চয়তা থাকে।
উড়োজাহাজটি খুব শিগগিরই আবার উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।