০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন : বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা

ইউএনএ প্রতিবেদক
  • আপডেট: ০৭:৪৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫
  • / 6

ছবি : ফাইল ফটো

দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কমছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। ফলে দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হতাশা তত বাড়ছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে সূচকে মহামারি করোনাভাইরাসের সময়ের অবস্থায় ফিরে গেছে।

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৯ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে।

২০১৯ সালের শেষদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে।

এরপর দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে। করোনা মহামারির সময় দেশের শেয়ারবাজারে যেমন ভয়াবহ দর পতন দেখা গিয়েছিল এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে।

অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে সোমবারের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৫ আগস্টের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭১ পয়েন্টে নেমে গেছে।।

দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১২৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০২টির। আর ৭০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৩৫টির দাম কমেছে এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৪১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ২৭টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৪টির দাম কমেছে এবং ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড এবং শাহিনপুকুর সিরামিক।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০১টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ১ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন : বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা

আপডেট: ০৭:৪৭:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫

ছবি : ফাইল ফটো

দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন চলছে। প্রায় প্রতিদিনই কমছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম। ফলে দিন যত যাচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হতাশা তত বাড়ছে। অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে সূচকে মহামারি করোনাভাইরাসের সময়ের অবস্থায় ফিরে গেছে।

আগের কার্যদিবসের ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৯ মে) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক প্রায় ৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে।

২০১৯ সালের শেষদিকে মহামারি করোনাভাইরাসের আবির্ভাব ঘটে। বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারিতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। জনজীবনের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় ২০২০ সালের মার্চে।

এরপর দেশের শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন শুরু হয়। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে, টানা ৬৬ দিন শেয়ারবাজার বন্ধ রাখার ঘটনা ঘটে। করোনা মহামারির সময় দেশের শেয়ারবাজারে যেমন ভয়াবহ দর পতন দেখা গিয়েছিল এখন আবার সেই ধরনের ভয়াবহ দরপতন দেখা যাচ্ছে।

অব্যাহত পতনের মধ্যে পড়ে সোমবারের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৪ পয়েন্ট কমে ৪ হাজার ৭৭৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে ২০২০ সালের ২৫ আগস্টের পর সূচকটি এখন সর্বনিম্ন অবস্থায় রয়েছে।

অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৪১ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০ কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৭১ পয়েন্টে নেমে গেছে।।

দিনের লেনদেন শেষে সব খাত মিলে ডিএসইতে ১২৫টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২০২টির। আর ৭০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। ভালো কোম্পানি বা ১০ শতাংশ অথবা তার বেশি লভ্যাংশ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৫৬টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে ১৩৫টির দাম কমেছে এবং ২৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

মাঝারি মানের বা ১০ শতাংশের কম লভ্যাংশ দেওয়া ৪১টি কোম্পানির শেয়ার দাম বাড়ার বিপরীতে ২৭টির দাম কমেছে এবং ১৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ না দেওয়ার কারণে পচা ‘জেড’ গ্রুপে স্থান হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ২৭টির শেয়ার দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৪০টির এবং ২৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। আর তালিকাভুক্ত ৩৬টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৫টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে ২৪টির দাম কমেছে এবং ৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৮৮ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। সে হিসাবে আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা।

এ লেনদেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার। টাকার অঙ্কে কোম্পানিটির ১৪ কোটি ৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিচ হ্যাচারির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার। ৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে মিডল্যান্ড ব্যাংক।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- সিটি ব্যাংক, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার, এনআরবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ফাস্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড এবং শাহিনপুকুর সিরামিক।

অন্য শেয়ারবাজার সিএসইর সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ২৫ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ১৮৯ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০১টির এবং ৩১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ১৬ কোটি ১১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১০ কোটি ১ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন