০১:৩০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

কলসিন্দুরের মাঠ থেকে আসা সাহসী সানজিদার সাক্ষাতকার

ইউএনএ ডেস্ক
  • আপডেট: ০১:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫
  • / 5

আলোচিত ফুটবলার সানজিদা আক্তার -ফাইল ছবি

দেশের নারী ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি নাম সানজিদা আক্তার। কলসিন্দুরের ছোট্ট মাঠ থেকে ছুটে আসা সাহসী এই কিশোরী আজ প্রতিষ্ঠিত ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে।

এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আজও স্বপ্নের মতোই লাগে সব কিছু। কলসিন্দুরের মাঠ থেকে ইস্টবেঙ্গল হয়ে এখন ভুটানের ক্লাবে! কিন্তু এর পেছনে কত কষ্ট, সংগ্রাম, কান্না! কত কথা শুনতে হয়েছে, ‘মেয়ে হয়ে হাফ প্যান্ট পরে মাঠে নামছে…’, তবে আমি হাল ছাড়িনি। সব সময় বাবার সাপোর্ট ছিল। তিনিই আমাকে এগিয়ে যেতে শিখিয়েছেন।

* এ পেশায় আসতে মায়ের সাপোর্ট কেমন পেয়েছিলেন?
– সানজিদা: সমাজের কথা শুনে ভয় পেতেন। তাই শুরুতে মা চাইতেন না আমি খেলি। পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। তবে বাবা ছিলেন একদম বিপরীত। সব সময় সাহস জোগাতেন।

* পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বলুন?
– সানজিদা: আমরা চার বোন, দুই ভাই। আমি তৃতীয়। বড় দুই বোন হাসিনা আর খালেদা বিয়ে করে সংসার করছে। ছোট বোন সাজেদা এখন আর্মিতে। সেও ফুটবল খেলেছে। তবে আমি চাইতাম না ও ফুটবল খেলুক সংগ্রামের পথটা কষ্টের, জানি। কিন্তু সে নিজের মতো করেই এগিয়েছে।

* ফুটবল না খেললে অন্য কোন পেশা বেছে নিতেন?
– সানজিদা: ফুটবলার না হলে সম্ভবত একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতাম। ছোটদের শেখাতে ভালো লাগত। আমার কাছে শিক্ষকতাই সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। একজন শিক্ষককে সবাই সালাম দেয় এই সম্মানটাই বড়।

* অভিনয়ে আসার ইচ্ছে আছে কি?
– সানজিদা: আপাতত নেই। আমার বিশ্বাস ফুটবলেই ভালো করব। ‘ইচ্ছে ডানা’ নামে একটা নাটকের অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি রাজি হইনি।

* এমনিতে অভিনয় কেমন পারেন?
– সানজিদা: অভিনয় মোটামুটি পারি। ক্যামেরার সামনে কনফিডেন্ট থাকি। বিজ্ঞাপন করেছি কয়েকটি। ফটোশুট করেছি। পরিচালক যা চান ঠিক ঠিক করতে পারি। ঠিক এক্সপ্রেশনটা ভেতর থেকেই চলে আসে। ক্যামেরাম্যানরা বলে, আমাকে দিয়ে নাকি অনেক কিছু হবে (হাসি)। ক্যামেরার সামনে আমি কনফিডেন্স নিয়ে কাজ করতে পারি।

* এখন পর্যন্ত কতগুলো বিজ্ঞাপন বা প্রমো করা হয়েছে?
– সানজিদা: প্রমো করা হয়েছে কয়েকটি। বিজ্ঞাপন তিনটি। বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে একটা ছিল ফোনের, একটা বাবা দিবসে বাবার সঙ্গে। এছাড়া বিভিন্ন ফটোশুট করেছি।

* একজন খেলোয়ারের জন্য বাহ্যিক সৌন্দর্য নাকি পারফরম্যান্স মুখ্য?
– সানজিদা: আসলে সৌন্দর্য একা কিছু নয় পারফরম্যান্সই মুখ্য। কেউ যদি শুধু সৌন্দর্য দিয়ে পরিচিত হয়। খেলায় কিছু না করে তখন মানুষ ট্রল করে। তাই খেলাধুলা, ব্যবহার, বডি ফিটনেস সবকিছুই দরকার।

* আপনার জীবনের গল্প নিয়ে সিনেমা হলে আপনার চরিত্রে কাকে দেখতে চাইবেন?

– সানজিদা: আমি নিজেই অভিনয় করতে চাই। তবে সানজিদার ছোটবেলার চরিত্রে অবশ্যই শিশুশিল্পী লাগবে। বড় সানজিদার ভূমিকায় আমিই থাকব।

* অবসরের সময় কীভাবে কাটে?
– সানজিদা: আগে অনেক গান শুনতাম, গাইতামও। এখন আজহারির বক্তৃতা বা মোটিভেশনাল লেকচার শুনি। নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে কোরিয়ান বা তুর্কি ড্রামাও দেখি।

কোনো ক্রীড়াবিদকে বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?
– সানজিদা: নাহ্, ক্রীড়াবিদকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। একই জগতের জুটি আমার ভালো লাগে না। অন্য জগতের কেউ হতে পারে।

* ফুটবল না খেললে নিশ্চয়ই এত দিনে বিয়ে হয়ে যেত?
– সানজিদা: অবশ্যই হয়ে যেত। আমার বোনের বিয়ে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে। আমরা গ্রামের মেয়ে। ফলে আমাকেও এত দিন অবিবাহিত রাখত না। গ্রামে বাবা-মায়ের কথাই বেশির ভাগ মেয়ে মেনে নেয়। আমার দুই বোন যেমন কোনো কথা বলেনি, বাবা-মা যেখানে বিয়ে দিয়েছে সেখানেই হয়েছে।

* প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম বলুন?
– সানজিদা: পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আমার প্রিয় খেলোয়াড়। রোনালদোর মতো পরি ৭ নম্বর জার্সি। এজন্য আমাকে অনেকে ডাকেন রোনালদো বলে।

* শৈশবের স্মৃতিচারণ করুন?
– সানজিদা: প্রাইমারিতে পড়ার সময়ের কথা। স্যার বলেছিলেন, স্কুল শেষে ফুটবল খেলব। তারপর বাড়ি যাব। কিন্তু আমি ক্লাস শেষ হতেই চুপি চুপি চলে গিয়েছিলাম। পরদিন স্যার ক্লাসের মধ্যে সবাইকে সামনে বসিয়ে আমাকে কান ধরিয়েছিলেন, কেন চলে গেছিস? আসলে ওদিন ফুটবল খেলতে আসতে একটু লজ্জা লাগছিল। তখন আমি ফোরে পড়ি। তবে স্কুলে কোনো খেলা হলেই আমি অংশ নিতাম আর পুরস্কার পেতাম। এ জন্য স্যার ধরে নিয়েছিলেন আমি ফুটবলও ভালোই খেলব। এছাড়া মায়ের হাতের হাঁসের মাংসের রান্না ভীষণ মিস করি। অনেক সুস্বাদু হয়। তাই আমি বাড়ি গেলেই মা এটা রান্না করেন।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

কলসিন্দুরের মাঠ থেকে আসা সাহসী সানজিদার সাক্ষাতকার

আপডেট: ০১:৪৩:৫৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

আলোচিত ফুটবলার সানজিদা আক্তার -ফাইল ছবি

দেশের নারী ফুটবলারদের মধ্যে অন্যতম আলোচিত একটি নাম সানজিদা আক্তার। কলসিন্দুরের ছোট্ট মাঠ থেকে ছুটে আসা সাহসী এই কিশোরী আজ প্রতিষ্ঠিত ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে।

এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, আজও স্বপ্নের মতোই লাগে সব কিছু। কলসিন্দুরের মাঠ থেকে ইস্টবেঙ্গল হয়ে এখন ভুটানের ক্লাবে! কিন্তু এর পেছনে কত কষ্ট, সংগ্রাম, কান্না! কত কথা শুনতে হয়েছে, ‘মেয়ে হয়ে হাফ প্যান্ট পরে মাঠে নামছে…’, তবে আমি হাল ছাড়িনি। সব সময় বাবার সাপোর্ট ছিল। তিনিই আমাকে এগিয়ে যেতে শিখিয়েছেন।

* এ পেশায় আসতে মায়ের সাপোর্ট কেমন পেয়েছিলেন?
– সানজিদা: সমাজের কথা শুনে ভয় পেতেন। তাই শুরুতে মা চাইতেন না আমি খেলি। পরে অবশ্য মেনে নিয়েছেন। তবে বাবা ছিলেন একদম বিপরীত। সব সময় সাহস জোগাতেন।

* পরিবারের সদস্যদের সম্পর্কে বলুন?
– সানজিদা: আমরা চার বোন, দুই ভাই। আমি তৃতীয়। বড় দুই বোন হাসিনা আর খালেদা বিয়ে করে সংসার করছে। ছোট বোন সাজেদা এখন আর্মিতে। সেও ফুটবল খেলেছে। তবে আমি চাইতাম না ও ফুটবল খেলুক সংগ্রামের পথটা কষ্টের, জানি। কিন্তু সে নিজের মতো করেই এগিয়েছে।

* ফুটবল না খেললে অন্য কোন পেশা বেছে নিতেন?
– সানজিদা: ফুটবলার না হলে সম্ভবত একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতাম। ছোটদের শেখাতে ভালো লাগত। আমার কাছে শিক্ষকতাই সবচেয়ে সম্মানজনক পেশা। একজন শিক্ষককে সবাই সালাম দেয় এই সম্মানটাই বড়।

* অভিনয়ে আসার ইচ্ছে আছে কি?
– সানজিদা: আপাতত নেই। আমার বিশ্বাস ফুটবলেই ভালো করব। ‘ইচ্ছে ডানা’ নামে একটা নাটকের অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু আমি রাজি হইনি।

* এমনিতে অভিনয় কেমন পারেন?
– সানজিদা: অভিনয় মোটামুটি পারি। ক্যামেরার সামনে কনফিডেন্ট থাকি। বিজ্ঞাপন করেছি কয়েকটি। ফটোশুট করেছি। পরিচালক যা চান ঠিক ঠিক করতে পারি। ঠিক এক্সপ্রেশনটা ভেতর থেকেই চলে আসে। ক্যামেরাম্যানরা বলে, আমাকে দিয়ে নাকি অনেক কিছু হবে (হাসি)। ক্যামেরার সামনে আমি কনফিডেন্স নিয়ে কাজ করতে পারি।

* এখন পর্যন্ত কতগুলো বিজ্ঞাপন বা প্রমো করা হয়েছে?
– সানজিদা: প্রমো করা হয়েছে কয়েকটি। বিজ্ঞাপন তিনটি। বিজ্ঞাপনগুলোর মধ্যে একটা ছিল ফোনের, একটা বাবা দিবসে বাবার সঙ্গে। এছাড়া বিভিন্ন ফটোশুট করেছি।

* একজন খেলোয়ারের জন্য বাহ্যিক সৌন্দর্য নাকি পারফরম্যান্স মুখ্য?
– সানজিদা: আসলে সৌন্দর্য একা কিছু নয় পারফরম্যান্সই মুখ্য। কেউ যদি শুধু সৌন্দর্য দিয়ে পরিচিত হয়। খেলায় কিছু না করে তখন মানুষ ট্রল করে। তাই খেলাধুলা, ব্যবহার, বডি ফিটনেস সবকিছুই দরকার।

* আপনার জীবনের গল্প নিয়ে সিনেমা হলে আপনার চরিত্রে কাকে দেখতে চাইবেন?

– সানজিদা: আমি নিজেই অভিনয় করতে চাই। তবে সানজিদার ছোটবেলার চরিত্রে অবশ্যই শিশুশিল্পী লাগবে। বড় সানজিদার ভূমিকায় আমিই থাকব।

* অবসরের সময় কীভাবে কাটে?
– সানজিদা: আগে অনেক গান শুনতাম, গাইতামও। এখন আজহারির বক্তৃতা বা মোটিভেশনাল লেকচার শুনি। নামাজ পড়ার চেষ্টা করি। মাঝেমধ্যে কোরিয়ান বা তুর্কি ড্রামাও দেখি।

কোনো ক্রীড়াবিদকে বিয়ে করার ইচ্ছে আছে?
– সানজিদা: নাহ্, ক্রীড়াবিদকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। একই জগতের জুটি আমার ভালো লাগে না। অন্য জগতের কেউ হতে পারে।

* ফুটবল না খেললে নিশ্চয়ই এত দিনে বিয়ে হয়ে যেত?
– সানজিদা: অবশ্যই হয়ে যেত। আমার বোনের বিয়ে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগে। আমরা গ্রামের মেয়ে। ফলে আমাকেও এত দিন অবিবাহিত রাখত না। গ্রামে বাবা-মায়ের কথাই বেশির ভাগ মেয়ে মেনে নেয়। আমার দুই বোন যেমন কোনো কথা বলেনি, বাবা-মা যেখানে বিয়ে দিয়েছে সেখানেই হয়েছে।

* প্রিয় খেলোয়াড়ের নাম বলুন?
– সানজিদা: পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো আমার প্রিয় খেলোয়াড়। রোনালদোর মতো পরি ৭ নম্বর জার্সি। এজন্য আমাকে অনেকে ডাকেন রোনালদো বলে।

* শৈশবের স্মৃতিচারণ করুন?
– সানজিদা: প্রাইমারিতে পড়ার সময়ের কথা। স্যার বলেছিলেন, স্কুল শেষে ফুটবল খেলব। তারপর বাড়ি যাব। কিন্তু আমি ক্লাস শেষ হতেই চুপি চুপি চলে গিয়েছিলাম। পরদিন স্যার ক্লাসের মধ্যে সবাইকে সামনে বসিয়ে আমাকে কান ধরিয়েছিলেন, কেন চলে গেছিস? আসলে ওদিন ফুটবল খেলতে আসতে একটু লজ্জা লাগছিল। তখন আমি ফোরে পড়ি। তবে স্কুলে কোনো খেলা হলেই আমি অংশ নিতাম আর পুরস্কার পেতাম। এ জন্য স্যার ধরে নিয়েছিলেন আমি ফুটবলও ভালোই খেলব। এছাড়া মায়ের হাতের হাঁসের মাংসের রান্না ভীষণ মিস করি। অনেক সুস্বাদু হয়। তাই আমি বাড়ি গেলেই মা এটা রান্না করেন।

শেয়ার করুন