১২:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫

অবহেলায় তেওতা জমিদার বাড়ি

ইউএনএ প্রতিনিধি, মানিকগঞ্জ
  • আপডেট: ১২:৪৩:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
  • / 6

ছবি : ফাইল ফটো

প্রতি বছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করলেও কবিপত্মী প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা সংরক্ষণ ও কবির স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জমিদার বাড়ির পূর্বে পাশেই ছিল কবিপত্মী আশা লতা সেন গুপ্ত বা প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা। প্রমিলা দেবী এ তেওতাতেই বেড়ে উঠেছেন। পরবর্তীতে তার বাবা মারা গেলে কুমিল্লায় চাচার বাড়িরে চলে যান।

তেওতাকে নিয়ে কবি বেশ কয়েকটি কবিতাও লিখেছেন। নজরুল-প্রমীলার স্মৃতি ধন্য তেওতায় প্রতি বছর সরকারিভাবে নজরুল জন্ম জয়ন্তী পালন করা হলেও নেই কোনো স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ। এলাকাবাসীর দাবি, কবি কিংবা তার প্রত্মীর নামে একটি লাইব্রেরি অথবা একটি যাদুঘর নির্মাণ করা হোক।

বিভিন্ন তথ্য সূত্র ও স্থানীয় প্রবীণ লোকদের সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে তুলেছিলেন তেওতা জমিদার বাড়ি।

তৎকালীন জমিদাররা ছিলেন সাংস্কৃতিক মনের। তাদের আমন্ত্রণেই কবি নজরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার এসেছিলেন এই জমিদার বাড়িতে। জমিদার বাড়ির পুকুরে কবি সাঁতার কেটেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরো এলাকা। দোলপূঁজাও উপভোগ করেছেন তিনি।

বেশ কয়েকটি কবিতা ও গান এখান থেকে রচনা করেছেন। জমিদার বাড়ির পূর্ব পাশেই ছিল কবি পত্মী আসালতা সেন গুপ্ত ওরফে প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা। এখানেই প্রমিলার কিশোরী কাল কেটেছে। লেখাপড়াও করেছে জমিদার বাড়ির বিদ্যালয়ে।

কবির সঙ্গে বিবাহের পরে বেশ কয়েকবার কবিকে নিয়ে তেওতা আসতে গিয়েও প্রমিলা দেবী পরে ঘুরে গেছেন তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুদের ভয়ে। তাদের স্মৃতি ধন্য তেওতা এলাকায় একটি নজরুল-প্রমিলার মঞ্চ ছাড়া নেই কোনো স্মৃতি চিহ্ন। প্রমিলা দেবীর জন্মভিটাও বেহাত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র অরক্ষিত ভঙ্গুরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিদার বাড়িটি।

স্থানীয় প্রবীণ বিদ্যালয় শিক্ষক অজয় অজয় চক্রবর্তী বলেন, আমাদের মুরব্বীদের কাছে শুনেছি, কবি নজরুল অনেকবার তেওতা জমিদার বাড়ি এসেছিলেন। তার হিটলার কবিতায় তেওতার কথা উল্লেখ্য আছে।

এছাড়া তেওতার যমুনা নদীকে নিয়ে লেখা কয়েকটি গানও কবি রচনা করেছিলেন। এই গ্রামেই তার পত্মীর জন্মভিটা রয়েছে। বাড়িটি বেহাত হয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তেওতা জমিদার বাড়িকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার। এ ছাড়া কবি ও তার স্ত্রীর নামে একটি লাইব্রেরি ও একটি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, নজরুল-প্রমিলার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জেনেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন কবির শ্বশুর বাড়ির কথা শুনে এলেও তেমন কিছুই দেখতে পায় না। এ জন্য জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও কবি নিয়ে একটি স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা খুবই জরুরী।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবির ১২৬তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান ও নাটক মঞ্চায়িত হবে। ইতোমধ্যে কবি ও তার পত্মীর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য নজরুল ইনিস্টিটিউট করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করুন

অবহেলায় তেওতা জমিদার বাড়ি

আপডেট: ১২:৪৩:৪০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫

ছবি : ফাইল ফটো

প্রতি বছর জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালন করলেও কবিপত্মী প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা সংরক্ষণ ও কবির স্মৃতি বিজড়িত মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার তেওতা জমিদার বাড়িটি সংরক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জমিদার বাড়ির পূর্বে পাশেই ছিল কবিপত্মী আশা লতা সেন গুপ্ত বা প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা। প্রমিলা দেবী এ তেওতাতেই বেড়ে উঠেছেন। পরবর্তীতে তার বাবা মারা গেলে কুমিল্লায় চাচার বাড়িরে চলে যান।

তেওতাকে নিয়ে কবি বেশ কয়েকটি কবিতাও লিখেছেন। নজরুল-প্রমীলার স্মৃতি ধন্য তেওতায় প্রতি বছর সরকারিভাবে নজরুল জন্ম জয়ন্তী পালন করা হলেও নেই কোনো স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ। এলাকাবাসীর দাবি, কবি কিংবা তার প্রত্মীর নামে একটি লাইব্রেরি অথবা একটি যাদুঘর নির্মাণ করা হোক।

বিভিন্ন তথ্য সূত্র ও স্থানীয় প্রবীণ লোকদের সূত্রে জানা গেছে, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে গড়ে তুলেছিলেন তেওতা জমিদার বাড়ি।

তৎকালীন জমিদাররা ছিলেন সাংস্কৃতিক মনের। তাদের আমন্ত্রণেই কবি নজরুল ইসলাম বেশ কয়েকবার এসেছিলেন এই জমিদার বাড়িতে। জমিদার বাড়ির পুকুরে কবি সাঁতার কেটেছেন, ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরো এলাকা। দোলপূঁজাও উপভোগ করেছেন তিনি।

বেশ কয়েকটি কবিতা ও গান এখান থেকে রচনা করেছেন। জমিদার বাড়ির পূর্ব পাশেই ছিল কবি পত্মী আসালতা সেন গুপ্ত ওরফে প্রমিলা দেবীর জন্মভিটা। এখানেই প্রমিলার কিশোরী কাল কেটেছে। লেখাপড়াও করেছে জমিদার বাড়ির বিদ্যালয়ে।

কবির সঙ্গে বিবাহের পরে বেশ কয়েকবার কবিকে নিয়ে তেওতা আসতে গিয়েও প্রমিলা দেবী পরে ঘুরে গেছেন তৎকালীন রক্ষণশীল হিন্দুদের ভয়ে। তাদের স্মৃতি ধন্য তেওতা এলাকায় একটি নজরুল-প্রমিলার মঞ্চ ছাড়া নেই কোনো স্মৃতি চিহ্ন। প্রমিলা দেবীর জন্মভিটাও বেহাত হয়ে গেছে। শুধুমাত্র অরক্ষিত ভঙ্গুরভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিদার বাড়িটি।

স্থানীয় প্রবীণ বিদ্যালয় শিক্ষক অজয় অজয় চক্রবর্তী বলেন, আমাদের মুরব্বীদের কাছে শুনেছি, কবি নজরুল অনেকবার তেওতা জমিদার বাড়ি এসেছিলেন। তার হিটলার কবিতায় তেওতার কথা উল্লেখ্য আছে।

এছাড়া তেওতার যমুনা নদীকে নিয়ে লেখা কয়েকটি গানও কবি রচনা করেছিলেন। এই গ্রামেই তার পত্মীর জন্মভিটা রয়েছে। বাড়িটি বেহাত হয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি তেওতা জমিদার বাড়িকে একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার। এ ছাড়া কবি ও তার স্ত্রীর নামে একটি লাইব্রেরি ও একটি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।

তেওতা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, নজরুল-প্রমিলার স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জেনেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন কবির শ্বশুর বাড়ির কথা শুনে এলেও তেমন কিছুই দেখতে পায় না। এ জন্য জমিদার বাড়িটি সংস্কার ও কবি নিয়ে একটি স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ করা খুবই জরুরী।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, এবারও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কবির ১২৬তম জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাচ, গান ও নাটক মঞ্চায়িত হবে। ইতোমধ্যে কবি ও তার পত্মীর স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য নজরুল ইনিস্টিটিউট করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।

শেয়ার করুন