নীল রংয়ে বিবর্ন প্রোটিয়াদের স্বপ্ন;দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা ঘরে তুললো ভারত

- আপডেট: ০৮:৫৩:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
- / 22
টি-২০ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মধ্য দিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা ঘরে তুললো ভারত। ছবি: সংগৃহীত
টি-২০ বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ রানে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মত শিরোপা ঘরে তুললো ভারত। চোকার্স অপবাদ ঘুচিয়ে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বমঞ্চে ইতিহাস গড়ার সুযোগ কাজে লাগাতে পারলোনা। অবশ্য পুরো আসরে দু’দলই দুর্দান্ত খেলে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে উঠেছে।
২০০৭ সালে মাহেন্দ্র সিং ধোনি নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকায় টি-২০ বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা জিতেছিল ভারত। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে আরও একটি শিরোপা ঘরে তুললো তারা। ১৭ বছর পর পুনরায় শিরোপা ঘরে তুললো ভারত।এর মাধ্যমে সমান সংক্ষক ২ টি শিরোপা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডের পাশে নাম লেখালো ভারত।
ফাইনাল ম্যাচের শুরুতে বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রোহিত। বিরাট কোহলিকে সঙ্গে নিয়ে পাওয়ারপ্লের শুরুর দিকে দ্রুত গতিতে রান তোলার সূচনাটা দারুণ করেছিল ভারত। কিন্তু দ্বিতীয় ওভারে দলীয় রান যখন ২৩ তখন কেশব মহারাজ জোড়া উইকেট তুলে নেন রোহিত (৪) ও ঋষভ পন্তকে (০) ফিরিয়ে। ৩৪ রানের সময় সূর্যকুমার যাদব (৩) রাবাদার শিকার হয়ে ফিরলে মনে হচ্ছিল টসে ব্যাটিং নেওয়াটা ভারতের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।
কিন্তু সেটি ভুল প্রমাণ করেন কোহলি ও লোয়ার অর্ডার থেকে উপরে ব্যাটিংয়ে নামা অক্ষর প্যাটেল। পুরো বিশ্বকাপে ফ্লপ যাওয়া কোহলি যেন তার সেরা ইনিংসটা তুলে রেখেছিলেন ফাইনালের জন্য। ফাইনালের মঞ্চে হাসলো তার ব্যাট। সঙ্গে অক্ষর দেখালেন তার ব্যাটিং ঝলক। চতুর্থ উইকেট জুটিতে তারা দুজন ৭২ রান সংগ্রহ করে ভারতের লড়াকু পুঁজির ভিত গড়ে দেন।
১০৬ রানের মাথায় অক্ষর রান আউট হয়ে ফিরার আগে ৩১ বল ১টি চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে যান। এরপর কোহলি শিবম দুবেকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন আরও ৫৭ রান। এ যাত্রায় তিনি ৪৮ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৩৯তম ফিফটি তুলে নেন। ১৯তম ওভারে জনসেনের বলে আউট হওয়া কোহলি ৫৯ বলে ৬টি চার ও ২ ছক্কায় ৭৬ রানে দলের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেন।এরপর দুবের ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ভারত ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৬ রান সংগ্রহ করে।
বল হাতে দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যানরিখ নরকিয়া ছিলেন সেরা। তিনি ৪ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ২টি উইকেট নেন। ৩ ওভারে ২৩ রান দিয়ে মহারাজও নেন ২টি উইকেট।
জবাবে ১৭৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ রানে প্রথম ও ১২ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। প্রথমে বুমরাহর বলে বোল্ড হন রেজা হেনড্রিকস (৪)। এরপর আরশদীপের শিকার হয়ে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক এইডেন মার্করাম (৪)।
সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন কুইন্টন ডি কক ও ট্রিস্টান স্টাবস। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলের প্রয়োজনীয় রান রেট ঠিক রাখেন। দলকে রাখেন লড়াইয়ে। ৭০ রানের মাথায় স্টাবস ফিরেন অক্ষরের বলে বোল্ড হয়ে। ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রান করেন এই ব্যাটসম্যান।
এরপর ডি কক ও হেনরিখ ক্লাসেন চতুর্থ উইকেটে দলীয় সংগ্রহে যোগ করেন আরও ৩৬ রান। ১০৬ রানের মাথায় ডি কক ফিরেন ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস খেলে। তার উইকেটটিও নেন আরশদীপ।
পঞ্চম উইকেটে মিলার ও ক্লাসেন মাত্র ২২ বলে ৪৫ রানের জুটি গড়ে ভারতের হাত থেকে ম্যাচটি ছিনিয়ে নিয়েছিলেন প্রায়। ক্লাসেনের টর্নেডো ব্যাটিংয়ে ১৬ ওভারেই দক্ষিণ আফ্রিকার রান গিয়ে দাঁড়ায় ১৫১ তে। জিততে ২৪ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২৬ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট। একেবারে সহজ সমীকরণ। তখন মনে হচ্ছিল ভারতের চোখের জলে বুঝি ফুটতে যাচ্ছে প্রথম প্রোটিয়া ফুল।
কিন্তু ২৩ বলে ২টি চার ও ৫ ছক্কায় ফিফটি করা ক্লাসেন ব্যক্তিগত ৫১ রানে হার্দিক পান্ডিয়ার শিকার হলে ফিরলে নাটকীয়ভাবে ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। এরপর ১৫৬ রানে মার্কো জানসেন (২) ও ২০তম ওভারের প্রথম বলে ১৬১ রানের সময় ডেভিড মিলার (২১) আউট হলে জয়ের বন্দর থেকে ছিটকে যায় প্রোটিয়ারা।শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রানে থামে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ভারত ৭ রানের জয়ে ঘরে তোলে শিরোপা।
বল হাতে ভারতের হার্দিক ৩ ওভারে ২০ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নেন। আরশদীপ ৪ ওভারে ২০ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট। আর জাসপ্রিত বুমরাহ ৪ ওভারে ১৮ রান দিয়ে নেন ২টি উইকেট।
দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৭৬ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলায় ফাইনালে ম্যাচসেরা হন কোহলি। আর পুরো আসরে ১৫ উইকেট নিয়ে নিয়ে ভারতের শিরোপা জয়ের অবদান রাখায় সিরিজ সেরা হন বুমরাহ।